Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০ ঘণ্টা রোগী ভুগিয়ে চিকিৎসক ধর্মঘট স্থগিত

বন্ধ হচ্ছে ম্যাক্স, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ৪ হাজার ৫শ’

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে রোগী ও তাদের স্বজনদের ২০ ঘণ্টা জিম্মি করে রেখে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের পর ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। যুক্তিসংগত কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ায় যে গণঅসন্তোষ দেখা দেয় তাতে ধর্মঘট থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকেরা।
গতকাল (সোমবার) দুপুরে ধর্মঘট স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রের মালিকেরা। দুপুরের পর থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টারের কার্যক্রম চালু হয়।
প্রাইভেট হসপিটাল অ্যান্ড ল্যাব ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ম্যাক্স হাসপাতালের পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় ধর্মঘট তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। তার দাবি, প্রশাসন ও বিএমএ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাচনা হয়েছে, তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ধর্মঘটের কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা হাসপাতাল খুলে দিয়েছি, স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়েছে। চিকিৎসার অবহেলায় এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে অভিযুক্ত নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের প্রতিবাদে লিয়াকতই রোববার দুপুরে লাগাতার ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তার ওই ঘোষণার পর থেকে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সব ধরনের সেবা বন্ধ রাখলে রোগী ও স্বজনরা বিপাকে পড়েন। সঙ্কটাপন্ন রোগীদের নিয়ে স্বজনরা ছুটেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ২০ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৫শ’ জন রোগী ভর্তি হন। রোগীর ভাড়ে বেসামাল হয়ে পড়ে চমেক হাসপাতাল। রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের। প্রতিদিন সাধারণত জরুরি বিভাগে প্রায় ৬শ’ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। কিন্তু রোববার বিকেল ৫টা থেকে গতকাল বেলা ১টা পর্যন্ত ১১শ’ রোগী এসেছেন। এরমধ্যে সকালে এসেছেন ৫শ’ রোগী। প্যাথলজি সেবা বন্ধ থাকায় সঙ্কটাপন্ন রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট আটকে যায়। এতে করে বিঘিœত হয় জরুরী অপারেশনসহ চিকিৎসা সেবা।
রোগীদের জিম্মি করে হাসপাতাল মালিকদের এই ধর্মঘট নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। বিএমএ ভবনের বৈঠক শেষে লিয়াকত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন ম্যাক্স হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের প্রতিবাদে এই ধর্মঘট। সন্ধ্যায় লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয় ম্যাক্স হাসপাতালে সাংবাদিকদের নগ্ন হামলার প্রতিবাদে এই ধর্মঘট। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তাদের ধর্মঘটের কারণ বদল হয়ে যায়। যৌক্তিক কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ চিকিৎসা সেবার মতো জরুরি সেবা বন্ধ করে দিয়ে বিপাকে পড়েন হাসপাতাল মালিকেরা। প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগী ও তাদের স্বজনেরা চিকিৎসার দাবিতে রীতিমত বিক্ষোভ করেন। রিপোর্টের জন্য মানুষের ভিড় জমে যায় প্যাথলজি সেন্টারগুলোর সামনে ক্ষুব্ধ রোগী ও তাদের অভিভাবকেরা সেখানে বেসরকারি হাসপাতালের লোকজনদের সাথে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। শুরু হয় হৈচৈ, হট্টগোল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঝড় উঠে। বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের এমন কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে তীব্র সমালোচিত হন চট্টগ্রাম বিএমএ’র নেতারাও। কেন্দ্র থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় এমন অমানবিক ধর্মঘটের সাথে বিএমএ’র কোন সম্পর্ক নেই। এসব কারণে ধর্মঘট থেকে সরে আসতে বাধ্য হন বেসরকারি হাসপাতাল মালিকেরা।
এদিকে আড়াই বছরের শিশু রাইফা খানের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, দুইটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং সর্বশেষ র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে হাসপাতালটিতে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও অপচিকিৎসার যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ইতোমধ্যে হাসপাতালটির ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রী হাসপাতালের পাশাপাশি শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযুক্ত তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
রোববার মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠিত সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটি ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির দুইটি প্রতিবেদন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ প্রতিবেদন দু’টিতে হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। সর্বশেষ ম্যাক্স হাসপাতালে রোববার র‌্যাবের অভিযানের প্রতিবাদে আকস্মিক ধর্মঘট আহ্বানে সরকারের শীর্ষ মহল চরম বিরক্ত হয়। এর ফলে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে দ্রুতই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর এটা বুঝতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানামুখী দেন-দরবার শুরু করে দিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসা

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ