Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারীদের জন্য সংসদের ৫০ আসন আরো ২৫ বছর থাকছে সংরক্ষিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

আরো ২৫ বছরের জন্য জাতীয় সংসদের ৫০টি আসন শুধুমাত্র মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত রেখে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী পাস করেছে সংসদ। এরআগে পর্যায়ক্রমে সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ আরো চারবার সংশোধনীর মাধ্যমে নারী আসনের মেয়াদ ও সংখ্যা বাড়ানো হয়। চলতি সংসদের মেয়াদান্তে এই বিধান অব্যাহত রাখতে এই সংশোধনী বিল পাস করা হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২১তম অধিবেশনে দুই দফা বিভক্তি ভোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইন- ২০১৮’ নামে বিলটি পাস হয়। বিলের সংশোধনীর পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়ে ২৯৮টি এবং বিলের বিপক্ষে কোন ‘না’ ভোট পরেনি। ফলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশকৃত আকারে বিলটি পাস হয়।
এরআগে সংশোধনীসমুহের ওপর হ্যাঁ ভোট পরে ২৯৫টি। সংসদের ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে স্পিকার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার করাণে এবং মৃত্যুজনিত করাণে একটি আসন শূণ্য থাকায় মোট ভোট পরার কথা ছিল ৩৪৮টি। কিন্তু নারী সদস্যসহ গতকাল সংসদে ৫০-৫৩জন সংসদ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। বিলের ওপর নয় জন স্বতন্ত্র ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব আনলেও কেউ না ভোটে অংশ নেননি। এরআগে কার্যপ্রণালী বিধির ৯৯ ঘ অনুযায়ী সংসদের পাঁচটি লবিতে দুই দফা বিভক্তি ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ সদস্যরা প্রথমে একত্রে দফাওয়ারী সংশোধনীসমুহের ওপর ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোটে অংশ গ্রহণ করেন। পরে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশকৃত আকারে বিলটি পাস করার প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। যারা কন্ঠভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন তারা ‘হ্যাঁ- লবিতে’ এবং যারা ‘না’ বলেছেন তারা ‘না-লবিতে’ গিয়ে ভোট দান করেন। এরআগে বিধি মোতাবেক ২ মিনিট বেল বাজিয়ে লবিসমুহের দরোজা বন্ধ করা হয়। ভোট অনুষ্ঠানের পর তা খুলে দেওয়া হয়।
এরআগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশকৃত আকারে বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন। বিলের ওপর প্রায় দুইঘন্টা আলোচনা শেষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বিরোধী দলীয় সদস্যরা বিলটিকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করলেও আইনমন্ত্রী তা নাকচ করে দেন। এছাড়া ২৫ বছরের জন্য বিলটি পাস করার বিরোধীতা করেন। সংসদের ২০তম অধিবেশনে বিলটি উত্থাপিত হয়।
বিলে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের (৩) দফার পরিবর্তে নিম্নরূপ (৩) দফা প্রতিস্থাপিত হবে। ‘(৩) সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধনী) আইন, ২০১৮ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যাবহতি পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া ২৫ বৎসরকাল অতিবাহিত হইবার অব্যাবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাঙ্গিয়া না যাওয়া পর্যন্ত পঞ্চাশটি আসন কেবল মহিলা-সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে এবং তাহারা আইনানুয়ায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবেন। তবে শর্ত থাকে যে এই দফার কোন কিছুই এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন কোন আসনে কোন মহিলার নির্বাচন নিবৃত্ত করিবে না।’
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় আইন প্রণয়নে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তদানীন্তন গণপরিষদ কৃর্তক প্রণীত ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ এর বিধানে জাতীয় সংসদে মহিলা সদস্যদের জন্য সংবিধান প্রবর্তনের সময় হতে পরবর্তী দশ বছরের মেয়াদে ১৫টি নারী আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান যুক্ত হয়।
পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে ১৫ বছরের জন্য সংসদে মহিলা সদস্যদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ করা হয়। ১৯৯০ সালে সংবিধানের দশম সংশোধনীর মাধ্যমে আরো দশ বছরের জন্য ৩০ জন মহিলা সদস্যদের আসন সংরক্ষণ করা হয়। ২০০৪ সালে চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে আরো দশ বছরের জন্য আইনটি অব্যাহত রাখা হয় এবং মহিলা সদস্যদের আসন বাড়িয়ে ৪৫জন করা হয়। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পরবর্তী দশ বছরের জন্য আইনটি অব্যাহত রাখা হয় এবং মহিলা সদস্যদের আসন বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। সে অনুযায়ী ৩৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংখ্যানুপাতে (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হার পদ্ধতিতে) সংসদের সংরক্ষিত আসন বন্টিত হয়। সর্বশেষ এই বিধানের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি। সে কারণেই সংসদে নারী আসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে এই সংশোধনী আনা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারী

১৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ