Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভ্যাট ফাঁকি রোধে ১৭ ব্যাংকে সফটওয়্যার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

সরকারি-বেসরকারি ১৭ ব্যাংক থেকে উৎসে মূসক কর্তন ও সরকারি কোষাগারে জমা করে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর (মূসক)। এসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে মূসক সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি ব্যবহার ও মনিটরিং না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকগুলো এ ফাঁকি দিয়ে আসছে। তাই ব্যাংকের উৎসে মূসক ফাঁকি রোধে সফটওয়্যার বসানোর কাজ শুরু করেছে এলটিইউ। এর মাধ্যমে মূসক ফাঁকি রোধ ও মূসক আহরণে স্বচ্ছতা আসবে বলে এলটিইউ ও ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এলটিইউ’র আওতাধীন ১৭ ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও পূবালী ব্যাংক লিমিটেড রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এইচএসবিসি ও সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড। এসব ব্যাংক সঠিকভাবে উৎসে মূসক পরিশোধ করছে কি না, তা তদন্তের উদ্যোগ নেয় এলটিইউ। সে অনুযায়ী একটি প্রতিবেদন তৈরি করে, যাতে একটি ব্যাংকের ফাঁকি তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের ৩৯টি সেবার বিপরীতে প্রায় সাড়ে চার শতাংশ উৎসে মূসক কর্তনের বিধান রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিস ব্যবহার করে উৎসে মূসক কর্তন করছে না। এর মাধ্যমে বিপুল রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। পরে এলটিইউ উৎসে মূসক কর্তন ও কোষাগারে জমাসংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়। ১৭ ব্যাংকের মধ্যে ১৫ ব্যাংকের ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিস প্রোভাইডারের আওতায় থমসন রয়টার্সের সেবা গ্রহণের তথ্য পায় এলটিইউ। চিঠি দেয়া ও তদারকির পর ১১ ব্যাংক উৎসে মূসকসংক্রান্ত তথ্য দাখিল করে। এতে দেখা যায়, একটি ব্যাংক মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়েছে। এলটিইউর সন্দেহ হলে প্রতিটি ব্যাংকের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। পূবালী ব্যাংক চিঠির জবাবে থমসন রয়টার্সের কোনো ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা গ্রহণ করেনি বলে জানায়। কিন্তু এলটিইউ জানতে পারে সেবা গ্রহণ করেছে, তবে ভ্যাট ফাঁকি দিতে স্বীকার করতে চায়নি। পরে পূবালী ব্যাংক পরিদর্শন করেও ফাঁকি নিশ্চিত হয়। পূবালী ব্যাংকের উৎসে মূসক ফাঁকি উদ্ঘাটনে কাজ করছে এলটিইউ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড আয়-ব্যয় থেকে প্রদেয় মূসক সঠিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আয় ও ক্ষতি (প্রফিট অ্যান্ড লস) হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির আয় ও ব্যয় খাতের যে মূসক কর্তনের বাধ্যবাধকতা ছিল তা সঠিকভাবে কর্তন করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির মূসক রিটার্নের সঙ্গে তুলনা করে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১৬ কোটি টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। পরে প্রতিষ্ঠানের কাছে ফাঁকির ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ফাঁকি অস্বীকার করে, যদিও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটি সেবার বিপরীতে পরিশোধিত বিলের ওপর উৎসে মূসক কর্তন করলেও তা পরিশোধ না করে ফাঁকি দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আয় ও ব্যয়ের দলিলপত্র যাচাই করা হয়। এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি মূসক, বাড়িভাড়া ও উৎসে মূসকসহ প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে। সেবা ও ভ্যাট কর্তন প্রযুক্তিনির্ভর না হওয়ায় অগ্রণী ব্যাংক এ বিপুল পরিমাণ ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। একইভাবে ব্যাংকটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৩৬ কোটি টাকার আবগারি শুল্ক এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার উৎসে মূসক ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কেবল অগ্রণী ব্যাংক নয়, সব ব্যাংক একইভাবে বছরের পর বছর উৎসে মূসক ফাঁকি দিয়ে আসছে। মনিটরিং না থাকায় এ ফাঁকি বাড়ছে। উৎসে মূসক ফাঁকি রোধ, সহজীকরণ ও স্বচ্ছতা আনয়নে সব ব্যাংকে পরীক্ষামূলকভাবে একটি অনলাইনভিত্তিক সফটওয়্যার (ট্যাক্সভ্যাট২৪ডটকম) স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। প্রথমে কিছু ব্যাংক অনীহা প্রকাশ করলেও পরে সবাই সাড়া দেয়। এ নিয়ে সব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক সভা ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সফটওয়্যারটি জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ চারটি শাখায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। সেজন্য ব্যাংকের ১৫ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও এবি ব্যাংক সহসাই সফটওয়্যারটি চালু করবে। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংক সফটওয়্যারটি চালু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এলটিইউ’র কর্মকর্তারা সহজে সফটওয়্যারটির মাধ্যমে উৎসে মূসক মনিটরিং করতে পারবে। ব্যাংক থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর এলটিইউ’র রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছর ১৬ শতাংশ, ২০১৬-১৬ অর্থবছর আট দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং বিদায়ী অর্থবছর ৯ শতাংশ হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ