Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিলীনের পথে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল

কেরানীগঞ্জ থেকে মো. আব্দুল গনি: | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ঢাকার কেরানীগঞ্জের শতবর্ষের পুরনো ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা খালটি দখল, দূষণ আর ময়লা-আবর্জ্যনায় বিলীনের পথে। সংস্কার বা উদ্ধারে নেই কোনো কার্যক্রমে। বুড়িগঙ্গা নদীর পূর্ব আগানগর এলাকা থেকে শুরু করে আগানগর ও শুভাঢ্যা হয়ে তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর দিয়ে পাইনার খালের সাথে সংযুক্ত হয়ে ধলেশ্বরী নদী গিয়ে মিশেছে। খালটির দৈর্ঘ প্রায় ৮ কিলোমিটর। এক সময় খালে থৈ-থৈ স্বচ্ছ পানির প্রবাহ ছিল। পাড়ের লোকজন রান্না-বান্নার কাজসহ বাড়িঘরের সকল কাজেই এই পানি ব্যবহার করতেন। জনশ্রæতি রয়েছে এই খালে গয়নার নৌকা চলাচল করতো। এছাড়া এই খালটি ছিল, গোলামবাজার, ঝাউবাড়ি, কদমতলী, শুভাঢ্যা, বেগুনবাড়ি, চড়াইল, রাজেন্দ্রপুর, বাঘৈরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। এলাকার লোকজন এই খাল দিয়ে নৌকাযোগে ঢাকায় চলাচল করতেন। বিভিন্ন মালবাহী নৌযান যাতায়াত করতো। কৃষি কাজেও ব্যবহার হতো এর পানি। যা এখন রুপ কথার গল্পে পরিণত হয়েছে।
২০০৭ সালে যৌথ বাহিনী পূর্ব আগানগরের গুদারাঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ থেকে শুভাঢ্যার কালিবাড়ী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায়। সেময় পাড়ে গড়ে উঠা অবৈধ ১৮৬টি স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়। তখন ফিরতে শুরু করেছিল পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। ২০১২ সালে জুলাই মাসে উপজেলা প্রশাসন খালটি পুন:খনন ও সংস্কারে ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয় করেন। তাছাড়াও দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি ও কাবিখা প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য অপসারণ ও নাব্যতা সৃষ্টির লক্ষে ২০ লাখ টাকা ব্যয় করেন। শুভাঢ্যার কালিবাড়ী থেকে চরকালিগঞ্জ ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণ, খালটি পুন:খনন ও তীর সংরক্ষণের জন্য ২০১৪ সালে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় কালিবাড়ী আধা কিলোমিটার, গোলামবাজার থেকে চরকুতুব পর্যন্ত খালের তলদেশ থেকে বর্জ্য অপসারণ ও খনন করা হয়। বøক বসানো হয় কালিবাড়ী থেকে চরকালিগঞ্জ পর্যন্ত। তবে, বøক বসানোয় খালটি পূর্বের চেয়ে প্রশস্ততা অনেক কমে গেছে।
সরেজমিন প্রতিবেদনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব আগানগরের জেলা পরিষদ মার্কেটের পিছনে খালে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ও আগাছা জমে প্রায় ১০ ই্্্ঞ্চি পরিমাণ স্তর পড়ে গেছে । যে কেউ এর উপর দিয়ে হেটে চলাচল করতে পারবে। কালিগঞ্জ জোড়া ব্রীজ এলাকার অবস্থা আরো ভয়াবহ। কালিগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ময়লা-আবর্জ্যনা, পলিথিন, বাঁশের ঝুড়ি, হাস-মুরগীর পালক, হাডিড থেকে শুরু করে জবাইকৃত গরু-মহিষ ও ছাগলের নাড়ি-ভূড়ি ফেলছে। নয়াশুভাঢ্যা ও কৈবর্তপাড়া এলাকায় খালের ভিতর হাজার হাজার পলিথিনের ব্যাগসহ বিভিন্ন বর্জ্য ফেলে খালটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এসব জায়গায় পানির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কালিগঞ্জ জোড়া ব্রীজ থেকে কৈবর্ত পাড়া পর্যন্ত খালের পাড় দখল করে অনেকেই বাড়িঘর নির্মাণ করেছে। এসব এলাকায় ছোট-বড় শতশত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও দোকান-পাট গড়ে উঠায় সেখান থেকেও বিভিন্ন বর্জ্য্য নিয়মিত ফেলা হচ্ছে। আমবাগিচা, কদমতলী ও ঝাউবাড়ি এলাকায়ও ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। এখানে খালে কিছুটা পানির অস্তিত্ব দেখা গেলেও তা দূষিত হয়ে বিষে পরিণত হয়েছে। বেগুনবাড়ি এলাকায়ও কলকারখানা এবং বাড়িঘরের ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষিত করে ফেলছে। গোলাম বাজার এলাকায় পাড়ে অবৈধ কয়েক শতাধিক দোকান-পাট নির্মাণ করে হাজার হাজার টাকা লুট-পাট করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহে এলিদ মাইনুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী খালটি সংস্কার ও উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা বর্জ্য অপসারনের কাজ শুরু করেছি। খালটিকে পুন:খনন করা হবে এবং এর দুই পাড়ের তীর সংরক্ষণ করা হবে। অপসারণ করা হবে সকল ভাসমান বর্জ্য এবং পানি প্রবাহের ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা হবে। ময়লা-আবর্জ্যনা ফেলতে না পারে সেটা তদারকি করার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেক কমিটি গঠন করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিলীনে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ