Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লোহাগড়ায় মধুমতীর ভাঙন বিলীনের পথে বিদ্যালয় ও বসতভিটা

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আতিয়ার রহমান, নড়াইল জেলা

বর্ষার পানিতে টান পড়েছে। পানি কমার সাথে সাথে ভাঙন দেখা দিয়েছে মধুমতী নদীতে। মধুমতী নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে লোহাগড়া উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা। ইতোমধ্যে ভাঙনের শিকার হয়ে এলাকা ত্যাগ করেছে অনেক মানুষ। ঘরবাড়ি ভেঙে সহায়-সম্বলহীন মানুষ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। এছাড়া ভাঙনের কবলে পড়েছে উপজেলার সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে কোনো সময় বিদ্যালয়ের ভবনগুলো নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ঘাঘা, চরমঙ্গলপুর, পি-চরসুসাইল, টিকরগাতী, মাকড়াইল, তেঁতুলিয়া ও শিয়েরবর এলাকা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী তীরবর্তী ওইসব এলাকার মানুষজন ঘরবাড়ি হারিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন। অনেকে শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। তাছাড়া ওই এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মধুমতীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। ঘাঘা সরকারি প্রাথমিক গিয়ে দেখা গেছে, ১৯৯৮ সালে চার কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন তৈরি হয়। এ ভবনেই চলে পাঠদান ও অফিসের কার্যক্রম। মধুমতীর ভাঙনে খেলার মাঠ প্রায় বিলীন হয়েছে। নদী থেকে মাত্র ১২ ফুট দূরে রয়েছে ভবনটি। এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুক্তা খানম জানায়, স্কুলে এসে আতঙ্কে থাকি। কখন যে নদীতে স্কুলসহ চলে যাই। তাই সবসময় নদীর দিকে তাকিয়ে থাকি। খেলার মাঠ নদীতে চলে যাওয়ায় খেলাধুলা করতে পারি না। প্রধান শিক্ষক পরিতোষ কুমার পাল বলেন, আতঙ্কের পাশাপাশি আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ ভবন নদীতে গেলে এসব ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেব? তখন পাঠদান ব্যাহত হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। অনেক লেখালেখিও হয়েছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। চরমঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, খেলার মাঠ পুরোটাই নদীতে চলে গেছে। নদী থেকে বিদ্যালয় ভবনটির দূরত্ব এখন মাত্র ৩০ ফুট। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাহাবুদ্দিন মোল্ল্যা জানান, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙন বেড়েছে। যেকোনো সময় বিদ্যালয় ভবন নদীতে বিলীন হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কাজ হচ্ছে না। অভিভাবক ফজর আলী মোল্যা বলেন, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে আমরা আতঙ্কে থাকি। ভবন নদীতে গেলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে, এ নিয়েও অমরা উদ্বিগ্ন। পিচরসুসাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান জানান, খেলার মাঠের অর্ধেকই নদীতে চলে গেছে। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি এই প্রথম নদী গর্ভে যাবে। শিয়েরবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিপক কুমার বিশ্বাস জানান, ২০১৩ সালে বিদ্যালয় ভবন নদীতে ভেঙে গেলে বাজারের এক পাশে ছাপড়া তুলে কোনোরকম চলছিল পাঠদান কার্যক্রম। আবার নদী এগিয়ে এসেছে। এখন মাত্র ১৫০ ফুট দূরে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান বলেন, এসব বিদ্যালয়ের ভাঙনের তথ্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোহাগড়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এএইচএম আল জহির বলেন, এসব এলাকার ভাঙনরোধে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তিনবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনো খবর আসেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লোহাগড়ায় মধুমতীর ভাঙন বিলীনের পথে বিদ্যালয় ও বসতভিটা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ