বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
এবারের বিশ্বকাপের স্বাগতিক দল রাশিয়া। নিজেদের মাটিতে নজরকাড়া পারফারমেন্স না দেখাতে পারলেও তারা ইতোমধ্যে আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে নীচের সারির দল হয়েও তাদের শেষ আটে জায়গা পাওয়াটা অঘটনই বলা চলে। তবে রাশিয়ার চোখ আরো উপরে। তাদের লক্ষ্য টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলে চমক দেখানো। আর তা করতে হলে স্বাগতিকদের টপকাতে হবে শেষ আটে ক্রোয়েশিয়া বাধা। বিশ্বকাপের চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে আজ ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখী হচ্ছে রাশিয়া। সোচি’র ফিশৎ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় শুরু হবে ম্যাচটি। দু’দলই চায় এ ম্যাচ জিতে শেষ চারে জায়গা করে নিতে।
ইউরো ২০১৬ ও সর্বশেষ ব্রাজিল বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও না জেতার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই এবার নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে রাশিয়া। গত বছর কনফেডারেশন্স কাপে ব্যর্থতার পরে তাদের জাতীয় দলের মান নিয়ে সব জায়গায় সমালোচনা হলেও বিশ্বকাপের শুরুটা ছিলো রাশিয়ার দূর্দান্ত। গ্রæপ পর্বে প্রথম ম্যাচে সউদী আরবকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে এবারের আসরে শুভসূচনা হয় স্বাগতিকদের। যদিও এ ম্যাচ জেতার আগে সাত ম্যাচ জয়বিহীন ছিল তারা। কিন্তু সব কিছুকে পিছনে ফেলে একের পর এক অঘটনের জন্ম দিয়েই এখন রাশিয়া খেলছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ‘এ’ গ্রæপ রানার্সআপ হিসেবে শেষ ষোল’তে জায়গা পায় তারা। নক আউট পর্বে ২০১০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে বধ করেই কোয়ার্টারে আসে স্বাগতিকরা। শেষ ষোল’র ম্যাচে নির্ধারীত সময়ের খেলা ১-১ ব্যবধানে ড্র থাকায় টাইব্রেকারে স্পেনকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে রাশিয়া। বিশ্বকাপে এই ফলাফল তাদের জন্য অবশ্যই কৃতিত্বের। আর এই কৃতিত্বের জন্য দলের প্রধান কোচ স্তানিসলাভ চেরচেসভ, জনপ্রিয় মিডফিল্ডার আলেক্সান্দার গোলোভিন, আরটেম ডিজুবা ও দুর্দান্ত পারফর্ম করা গোলরক্ষক ইগর আকিনফিভ ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা পেয়ে পুরো দল এখন স্বাগতিক হিসেবে রাশিয়াকে আরো বড় কিছু উপহার দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে।
ম্যাচের আগে রাশিয়ার ২২ বছর বয়সী তারকা মিডফিল্ডার আলেস্কান্দার গোলোভিন বলেন, ‘বিশে^র যে কোন দলের বিপক্ষে স্পেন বল নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা রাখে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে সমাধান খুঁজে পেয়েছিলাম। আশা করছি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আমরা আমাদের শক্তিশালী কৌশল কাজে লাগাতে পারবো। এর অর্থ এই নয় যে ক্রোয়েশিয়া স্পেনের চেয়ে দূর্বল। এর অর্থ হচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার খেলার স্টাইলটা ভিন্ন। সুযোগ সৃষ্টির জন্য তাদের সব সময় বলের প্রয়োজন হয় না।’
অন্যদিকে শেষ আটে রাশিয়ার প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়াও ১৯৯৮ সালের পরে বিশ^কাপে সবচেয়ে বড় সাফল্যের অপেক্ষায় দিন গুনছে। দলের মিডফিল্ডার ইভান পেরিসিচ বিশ^াস করেন সেই ক্ষমতা ক্রোয়েশিয়ার আছে। ১৯৯৮ সালে বিশ^কাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মত অংশ নিয়েই তৃতীয়স্থান অর্জন করেছিল ক্রোয়েটরা। ২০ বছর পরে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাবার হাতছানি এখন মানজুকিচ, রাকিটিচ, মড্রিচদের সামনে। ফ্রান্স বিশ^কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানদের হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। তবে শেষ চারে স্বাগতিক ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে হারিয়ে তৃতীয় হয় তারা। এবার রাশিয়ায় উজ্জীবিত ক্রোয়েশিয়া। গ্রæপ পর্বে তারা অসাধারণ পারফরমেন্স করেছে। ‘ডি’ গ্রæপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করা ক্রোয়েশিয়া গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোল’তে নাম লেখায়। নক আউট পর্বে তারা সমানে পায় ডেনমার্ককে। এ ম্যাচের নির্ধারীত সময়ের খেলা ১-১ গোলে অমিমাংসিত থাকলে টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে ড্যানিশদের হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। এখন লুকা মোদ্রিচ, ইভান রাকিটিচদের নিয়ে গড়া নতুন প্রজন্ম ক্রোয়েশিয়াকে আবারো নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে পুরোপুরি প্রস্তুত ক্রোয়েশিয়া। এমনটাই জানান দলের মিডফিল্ডার ইভান পেরিসিচ। তিনি বলেন,‘আমরা সাফল্যের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। আশা করছি শেষটাও ভাল হবে। আমাদের নিজেদের উপর আস্থা আছে। আমরা আমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানি।’
জার্মানীকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ক্রোয়েশিয়ার ৯৮’ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার ২০ বছর কেটে গেছে। এ সম্পর্কে ফরোয়ার্ড আন্টে রেবিচ বলেন, ‘ফ্রান্স বিশ^কাপের ওই ম্যাচটি দেখার সময় আমার বয়স মাত্র চার বছর ছিল। জার্মানদের বিপক্ষে স্মরণীয় ওই জয়ের স্মৃতি এখনো আমার মনে আছে। পুরো পরিবারের পরিবেশটা দারুণ ছিল তখন।’ এখন সেই সাফল্য পেতে হলে ক্রোয়েশিয়াকে স্বাগতিক রাশিয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। কারণ শেষ ষোল’তে স্পেনকে হারেিয় রাশিয়া দারুণ উজ্জীবিত অবস্থায় আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।