বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলে আসা জাপান শেষ ষোলয় নাম লিখিয়েছিলো স্বচ্ছ খেলার পুরস্কার পেয়ে। মাঠের লড়াইয়ে ফুটবলাররা তো বটেই গ্যালারিতে থাকা দলটির সমর্থকরাও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় দেখিয়েছে অনন্য দৃষ্টান্ত। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে শেষ সময়েল গোলে বেলজিয়ামের কাছে হেরে গেলেও হৃদয় জয় করে নিয়েছে এশিয়ার প্রতিনিধিরা। ম্যাচের মাত্র ১০ সেকেন্ড আগে হারে বিশ্বকাপ স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর ফুটবরারদের কান্না সংক্রমিত হয়েছিল সমর্থকদের মধ্যেও। একদিকে সেই অশ্রæ আটকানোর প্রবল চেষ্টার সঙ্গে ছিল অবিশ্বাস; কিভাবে জয়টা হাতছাড়া হলো! টানটান উত্তেজনার এই ম্যাচ যারা দেখেন নি তারা দারুণ এক রোমাঞ্চ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন ধারাভাষ্যকাররা।
এর আগেও দুইবার বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে ছিটকে গিয়েছিল জাপান। রাশিয়ার আসরে তাই দলটির সামনে সুযোগ ছিল প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার। তবে স্বপ্নভঙ্গে এক অনাকাক্সিক্ষত ‘এলিজি’ রচিত হল রোস্তভ-অন-ডনে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া জাপান ইতিহাস গড়ার পথেই ছিল। কিন্তু দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো বেলজিয়াম সমতায় ফেরার পর যোগ করা সময়ে গোলে জিতে নেয় ম্যাচ। ১৯৭০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পশ্চিম জার্মানির জয়ের পর প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউটে ২-০ গোলে পিছিয়ে জিতল বেলজিয়াম।
রোস্তাভের জাপান ফুটবলারদের এই কান্না সংক্রমিত হলো গ্যালারিতেও। সেখান থেকে সাত সমূদ্র তের নদীর ওপারে লাল-সাদাদের দেশেও। টোকিওর একটি স্পোর্টস বারে বসে ম্যাচ দেখা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী নাও ওকাদা শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন, ‘যখন আমরা লিড নিলাম, ভেবেছিলাম আমরা জিতব। এটা পীড়াদায়ক কিন্তু এটা খুব ভালো ম্যাচ ছিল। আমার ভেতরে তোলপাড় চলছে। আমি চাই পরেরবার জাপান লড়াই চালিয়ে যাবে।’
ফিফার র্যাঙ্কিংয়ে ৬১তম স্থানে থাকা জাপান রাশিয়ার আসরে প্রভাব রাখবে বলে ধরাই হয়নি। তবে বেলজিয়ামের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচের পারফরম্যান্স সমর্থকদের মন জিতে নেয়, ‘এটা আসলেই ভালো দল ছিল। তাদের পাসিং, স্কোরিং এবং দলীয় খেলা ভালো ছিল’, বলেন ৩৯ বছর বয়সী হেয়ারড্রেসার কেনিচি ওকেগামি। ২-২ এর সময় আমি ভেবেছিলাম আমরা পেনাল্টি শুট আউটে যাচ্ছি। এটা বিপর্যয়কর’, যোগ করেন তিনি।
‘শুধু আরেকটু দরকার ছিল, এটা একটা কঠিন ফল’, বলেন ৬১ বছর বয়সী সাবেক ফুটবল কোচ এবং রেফারি কেনতা সাইতো। ‘তারা (জাপান) শেষ দিকে সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারেনি।’ ‘আজকের ম্যাচটি ভালো একটা ম্যাচ ছিল কিন্তু শেষ সময়ে সবকিছু ঘটে গেল’, বলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওকাদা।
স্বপ্নভঙ্গ হলেও রাশিয়ার আসর থেকে ইতিবাচক কিছু নেওয়ার চেষ্টা করছে জাপানের সমর্থকরা। গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের ১-০ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচের চেয়ে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচে ভালো খেলার তৃপ্তি আছে তাদের। অবশ্য পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে জাপানকে সমালোচিত হতে হচ্ছে। শেষ দিকে নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করে সময় নষ্ট করা দলটি ডিসিপ্লিনারি রেকর্ডে এগিয়ে থেকে সেনেগালকে পেছনে ফেলে শেষ ষোলোয় উঠে আসে। তবে এসব সমালোচনার ভিড়ে ঠিকই হৃদয় জয় করে নিয়েছে দলটির সমর্থকেরা। দু’চোখে অশ্রæ নিয়েই গ্যালারিতে পড়ে থাকা অবর্জনা ঠিকই পরিষ্কার করে গেছে সূর্য উদয়ের দেশটির সাদা মানুষগুলো। এই আলো ছড়িয়ে পড়–ক বিশ্বময়, এটাই প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।