Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বেসরকারি ব্যাংক- ৬ শতাংশ সুদে মিলবে সরকারি আমানত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম


এখন থেকে সরকারি আমানত ৬ শতাংশ হার সুদে পাবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। সরকারি ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যাংকে আমানত রাখতে এর বেশি সুদ দাবি করবে না। একই সঙ্গে বিনিয়োগের সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতেও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল সোমবার তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বড় আকারের এই বৈঠকটি ব্যাংকার্স মিটিং হিসেবে পরিচিত। গভর্নর ফজলে কবির এতে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে তফসিলি সকল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ উর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, এক অঙ্কে ঋণের সুদ হার কার্যকর করতে কারো কোন দ্বিমত নেই। এ ব্যাপারে সবাই ঐক্যমত। কিছু ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের সভায় এরই মধ্যে চুড়ান্ত করেছে। আর যেসব ব্যাংক এখনও চুড়ান্ত করেনি তারাও চলতি সপ্তাহেই পরিচালনা পরিষদের সভায় এটি চূড়ান্ত করবে।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতিতে শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরি, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান বাড়াতে ও আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যকে আরো গতিশীল করতে মূলত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২০ জুলাই ঋণের সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস-বিএবি। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়েদ উল্লা আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে ৬ শতাংশ হারে আমানত পাবে।
এ ব্যাপারে আজকের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে বৈঠক শেষে এবিবি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চায় ঋণের সুদ হার এক অঙ্কে নেমে আসুক। এটি কিভাবে কার্যকর করব সেই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে বলেছে। তবে এটি কার্যকর করতে গিয়ে যাতে কোন নৈরাজ্য বা অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি সুন্দর ভাবে দায়িত্ব নিয়ে কার্যকর করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এজন্য যদি ঋণ আমানতের নির্ধারিত হারে কিছুটা ছাড় দিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংক দেবে। এ জন্য যাতে কোন ব্যাংক কে শাস্তি বা জরিমনা না করা হয় সেটি অনুরোধ করেছে ব্যাংকের এমডিরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি বিবেচনার আশ^াস দিয়েছে। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, আমানতের সুদ হার পুননির্ধারণ করাতে কিছুটা আমানত চলে যেতে পারে। সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক সহনীয় ভাবে দেখবে। তবে সব ছাড় কেবল এক অঙ্কে ঋণের সুদ হার কার্যকর করার ওপরে। তবে রাতারাতি কার্যকর হবে না। সময় লাগবে। তবে আমরা সবাই কার্যকর শুরু করে দিয়েছি। তবে কনভেনশাল ব্যাংকগুলো বিদ্যমান আমানতের সুদ হার পুননির্ধারণ করবে না।
সঞ্চয়পত্রের সুদ হারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর একটি বিশেষ উদেশ্য আছে। তবে আমরা অনুরোধ করেছি এর সুদ হার পর্যালোচনা করতে। আমরা শুনেছি, সরকারের সর্বোচ্চ মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটি নিয়ে কাজ চলছে। আজ না হোক আগামী বছর এটি পর্যালোচনা হবে। বড় ঋণ বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্তক থাকতে বলেছে ব্যাংকগুলোকে। ঋণ বিতরণে যাতে কোন ব্যতয় না হয়। টেকসই ব্যাংক খাতের জন্য এটি জরুরি।
বৈঠকে প্রবাসী আয় বাড়ানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলাকে নজর দিতে বলেছে। এছাড়া কিভাবে বৈদেশিক বাণিজ্য আরো জোড়ালে করা যায় সে ব্যাপারেও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। সংঙ্কট থেকে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদ হার। আমানতকারীকে কোন কোন ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে টাকার টানাটানি দূর করতে। আবার আমানতের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগের সুদ হার ১৭/১৮ শতাংশ দাঁড়ায়।
পরিস্থিতি থেকে উত্তরনে সরকারের নীতি সহায়তা চান বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট কাটাতে নতুন নিয়মে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক। কমানো হয়েছে নগদ জমার হার (সিআরআর) হার। সকল তফশিলি ব্যাংকগুলোর মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের সাড়ে ৬ শতাংশ হারে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এবং ৬ শতাংশ দৈনিক হারে নগদ জমা সংরক্ষণ করার বিধান ছিলো। সেটি পুননির্ধারণ করা হয় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ৫ শতাংশ। আগ্রাসী ব্যাংকিং করে তারল্য সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানত হার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ