রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলাটি তিন দিক থেকে নদী বেষ্টিত। তাই নদী তীরবর্তী বাসীন্দার সংখ্যাও এখানে অনেক বেশি। কিন্তু নদী তীরবর্তী অধিকাংশ এলাকায় বেড়ি বাঁধ না থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে ওই সব এলাকার বাসীন্দারা। ফসলের ক্ষতিসহ নানা মুখী ভোগান্তিতে রয়েছে তারা। ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে এই উপজেলাটি বিদ্ধস্ত জনপদে পরিনত হয়েছিল ২০০৭ সালে। তখন উপজেলায় প্রাণহানী ঘটে ৭২ জন নারী পুরুষসহ শিশুর। নিখোঁজের সংখ্যাও কম নয়। নদী তীরের সকল বেড়িবাঁধ বিদ্ধস্ত হয়। তারপর থেকে নামে মাত্র সংস্কার হলেও তা সমস্যার সমাধান করতে পারে নাই। সামান্য জোয়ারে লোকালয় পানিতে প্লাবিত হয়। ডুবে যায় ফসলের ক্ষেত। আবার লবনাক্ত পানিও জোয়ারের সাথে প্রবেশ করে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। জোয়ারের পানির সাথে ভেসে আসা কচুরিপানা জমে যায় ফসলের ক্ষেতে। ডুবে যায় যাতায়াতের পথ। পানির চাপে ভেঙ্গে যায় বসত ঘরের মাটির তৈরী মেঝে। ভেসে যায় মাছের ঘের। স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীদের বন্ধ হয়ে যায় স্কুলে যাওয়া। সব মিলিয়ে বেড়িবাঁধ সংকটে দিশেহারা স্থানীয়রা।
ইন্দুরকানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাওহিদীন ভুইয়া জানান, বেড়ি বাঁধের অভাবে কৃষি ক্ষেত্রে ইন্দুরকানীতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমন মৌসুমে অতিরিক্ত পানিতে ২০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়। এছাড়া রবি মৌসুমে প্রায় ১৫০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
ইন্দুরকানী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পূরবী রানী দাস জানান, বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার বেশ কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। নদী তীরবর্তী বিদ্যালয়গুলোতে যাতায়াতের পথ জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিশু শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হতে পারে না। তাই এই এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মান প্রয়োজন।
উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের বলেশ্বর নদের তীরে বসবাস করেন ফরিদা বেগম। ঘূর্ণিঝড় সিডর তার কোল থেকে কেড়ে নিয়েছে সাত বছর বয়সের মিমি ও তিন বছরের রিনাকে। সেই দিনের ভয়াল স্মৃতি কিছুইতে মনে করতে পারেন না ফরিদা। জলচ্ছাসে ভেসে গিয়েছিল তাঁদের বসত ঘরও। আকাশে মেঘ দেখলেই মলিন হয়ে যায় ফরিদার মুখ। এখনও তাদের নদীরে তীরে নির্মান হয়নি বেড়িবাঁধ। ফরিদা বেগম জানান, মোর মত আর যেন কেউর কোল খালি না অয়। বেড়িবাঁধ না থাহায় মোরা ম্যালা বিপদে আছি। জোয়ার অইলেই উডান বাড়ি সব তলাইয়া যায়। ভয়তে থাহি আবার কোন সময় সিডরের নাহান পানিতে সব ভাসাইয়া লইয়া যায়।
অপর দিকে পত্তাশী ইউনিয়নের চাড়াখালী গুচ্ছগ্রামের লিপি বেগম জানান, গাঙ্গের ঢেউর পানি সব ঘরে ওডে। চাইরো কুল সব তলাইয়া যায়। ঘর দিয়া বাইরকুলেও নামা যায় না। পোলা মাইয়া লইয়া খাডের উপরে বইয়া থাহা লাগে। রাইন্দা খাওয়ারও উপায় থাহে না। চুলায়ও পানি ওডে। দুহারের খাওন খাওয়া লাগে রাইতে।
জোয়ারের পানি বাড়লেই ডুবে যায় সব জলাশয়। তাই মাছ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে এখানকার চাষীরা। তারপরে যা চাষ হচ্ছে তাতেই ক্ষতির পরিমান প্রতি মৌসুমে কোটি টাকার মত।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আসাদুল্লাহ জানান, বেড়ি বাঁধের অভাবে সব চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে মৎস্য বিভাগের। মৎস্য চাষে এই উপজেলার মৎস্য চাষীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অথচ মৎস্য চাষের জন্য বেশ উপযোগি এলাকা ইন্দুরকানী। প্রতি বছর ভাদ্র আশ্বিন মাসের জোয়ারে সরকারি হিসাবে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে চাষী পর্যায়ে।
ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী জানান, ইন্দুরকানী উপজেলার নদী তীরের অধিকাংশ স্থানে কোন বেড়িবাঁধ নেই। ফলে জনগনের খুব সমস্যা হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মান প্রয়োজন।
ইন্দুরকানীতে বেড়িবাঁধ নির্মানের বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদ বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ইন্দুরকানীর বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য ৫ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার একটি বরাদ্দ দিয়েছেন। যা টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।