পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণপরিবহনের বাড়তি ভাড়ায় মহাদুর্ভোগে সাধারণ যাত্রীরা। ঘর থেকে বেরুলেই পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। নিয়মিত বাসের যাত্রীরা কয়েকদিনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। জ্বলানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেড়েছে গণপরিবহনের ভাড়া। আর এই অজুহাতেই যাত্রীদের পকেট কাটছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া বৃদ্ধির তালিকা করে দেয়ার পর তারা যেন আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন। কোন গন্তব্যেরই নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। সরকারি তালিকার চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছেন তারা। এই বেশি ভাড়া আদায়ের কারণে প্রতিনিয়তই যাত্রীদের সাথে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটছে।
গণপরিবহন মালিক পক্ষের কোন তদারকি রাজধানীর কোথাও যেন নেই। বাসের হেলপার-চালকের সমন্বয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর এসব দেখার কোন লোক নেই। বেশি ভাড়া আদায়ের অরাজকতা ও যাত্রী পরিবহন শ্রমিকদের অপ্রীতিকর পরিস্তিতিতে বাস মালিক ও সরকারের পক্ষের তেমন কোন তদারকি দেখা যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ বিআরটিএ ভাড়া নির্ধারণের পর তারা যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সার্টিফিকেট পেয়েছেন। বেশিরভাগ বাসে এখনো নতুন তালিকা টানানো হয়নি। বেশি ভাড়া আদায়ের জন্যই এই ফন্দি বাসের হেলপারদের। যদি কোন যাত্রী চেলেঞ্জ করেন তাহলে পকেট থেকে তালিকা বের করেন। নিজেদের খেয়ালখুশি মতো ভাড়া নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। এটাকে এক ধরনের ডাকাতি বলে অভিহিত করছেন সাধারণ যাত্রীরা।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে গণপরিবহনে অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তা বন্ধসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নামে একটি সংগঠন। গতকাল সোমবার নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এসময় আন্দোলনকারীরা বলেন, গণপরিবহনের ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। যা বহন করা সাধারণের পক্ষে সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষে যা আরও অসম্ভব। গণপরিবহনে ভাড়ার নামে নৈরাজ চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। পরিবহন মালিকদের করা এই ওয়েবিলের কারণে নির্ধারিত ভাড়ার প্রায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি টাকা গুনতে হয় যাত্রীদের। বছরের পর বছর এই ওয়েবিল নৈরাজ্য চলে এলেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার। ওয়েবিল যেন যাত্রীদের গলারকাঁটা। অবিলম্বে এটি বন্ধ হওয়া দরকার।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর অস্থিরতা তৈরি হয়েছে গণপরিবহনে। বেশিরভাগ জায়গায় ভাড়া নেয়া হচ্ছে ইচ্ছেমতো। বাকবিতণ্ডা হচ্ছে যাত্রী ও শ্রমিকদের মাঝে। ভাড়ার নৈরাজ্য ঠেকাতে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। কিন্তু রাজধানীর এতো রাস্তাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম আরও বাড়ানোর কথা জানান যাত্রীরা। সকাল থেকেই গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় পর এক একটি বাস আসলে তাতে যাত্রীরা ওঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। সেসব বাসে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে ছুটছে মানুষ। কোনো বাসেই তালিকা না থাকলেও দূরত্বভেদে ৫ থেকে ২০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এ সময় অনেক যাত্রী বাড়তি ভাড়া না দিয়ে তালিকা দেখতে চান। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাসের কন্ডাক্টরদের তর্কবিতর্ক করতে দেখা গেছে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে রাজধানীতে ভয়াবহ যানজটে সকাল থেকে চরম ভোগান্তিতে অফিসগামী মানুষেরা। ৩ কিলোমিটার যেতে অফিসগামী এসব যাত্রীদের ২ ঘণ্টা লাগছে। বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত, বনানী ফ্লাইওভার হয়ে কাকলী থেকে মহাখালী, খিলক্ষেত থেকে কুড়িল হয়ে নর্দ্দা, নতুনবাজার থেকে বাড্ডা হয়ে রামপুরা, গুলশান থেকে বনানী ও মহাখালী, হাতিরঝিল থেকে রামপুরা, হাতিরঝিল থেকে মগবাজার হয়ে কাকরাইল মালিবাগ, মৌচাক, পল্টন ও গুলিস্তান হয়ে মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তীব্র যানজট। একদিকে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি আরেকদিকে যানজট যাত্রীদের দুর্ভোগ যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে, পোস্তগোলা-দিয়াবাড়ী রুটে চলা রাইদা পরিবহনকে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগে জরিমানা গুনতে হলো ১২ হাজার টাকা। গতকাল সোমবার রামপুরার সড়কে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত যাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বাসটিকে এই জরিমানা করেন। এই স্পটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোশনুর রুবাইয়াৎ। অভিযোগ আছে রাইদা পরিবহন রাজধানীতে অবৈধ ওয়েবিলে চলাচল করে। নতুন করে বাড়ানোর ফলে বাসটিতে একেক চেক পয়েন্টে পাঁচ টাকা করে ভাড়া বেশি নিচ্ছে। রাইদা পরিবহনকে জরিমানা করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ভাড়া তদারকিকালে রাইদা পরিবহনের একটি বাস থামানো হলে যাত্রীরা বাড়তি টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন। দেখা যায় বাসে নতুন ভাড়ার তালিকাও প্রদর্শিত হয়নি। পরে বাসটিকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে অতিরিক্ত আদায়কৃত অর্থ যাত্রীদের ফেরত দেয়া হয়েছে জানিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও নতুন ভাড়ার তালিকা প্রদর্শনের বিষয়টি কঠোরভাবে তদারকি করা হচ্ছে। কুর্মিটোলা এলাকায় বিআরটিএর অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজিদ আনোয়ার জানান, কয়েকটি বাসকে বেশি ভাড়া নেয়ায় জরিমানা করা হয়েছে। আর মনজিল পরিবহনের একটি রুট পারমিটহীন বাসকে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। আজমেরী, নূরে মক্কা ও প্রজাপতি পরিবহনের তিনটি বাসকে জরিমানা করা হয়েছে।
বাস যাত্রী আবু হানিফ বলেন, যেখানে এক থেকে দুই টাকা ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। জোর করে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। বেশি ভাড়া না দিলে বাস থেকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভাড়ার তালিকার কথা বললে ক্ষেপে যান।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে রয়েল পরিবহনের সুপারভাইজার ওয়াদুদ ইনকিলাবকে বলেন, ভাড়া বেশি হওয়ায় যাত্রী প্রায় অর্ধেক কমেছে। সাধারণ যাত্রীরা আগের ভাড়াতেই গন্তব্যে যেতে চান। ভাড়া বাড়ার কারণে এখন যাত্রীদের সাথে তর্ক করতে হয়। এতে আমরা খুবই যন্ত্রণার মধ্যে কাজ করছি। কোন কোন যাত্রী গেলেও অনেকে অনুরোধ করেন যেন আগের ভাড়াতে নেয়া হয়।
বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এম সাজ্জাদুল হাসান বলেন, যেহেতু তেলের দাম বেড়েছে, সেহেতু সাময়িক একটু সমস্যা আমাদের মেনে নিতেই হবে। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হলো জনগণ যেন হয়রানির শিকার না হয়। সরকার নির্ধারিত যেই ভাড়া এর বেশি যেন তারা না নিতে পারে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, বাস মালিকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নেই। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় হলেও সরকার কার্যত এসব বাসের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। সিটি সার্ভিসে সরকার কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করলেও বাসে বাসে ওয়েবিলে যাত্রীর মাথা গুণে গুণে ভাড়া আদায় করা হয়। ঢাকা মহানগরীর কথিত সিটিং সার্ভিসে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করলেও সর্বশেষ গন্তব্য পর্যন্ত ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। অনতিবিলম্বে বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করে সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণপূর্বক নতুন ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।