পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রফতানি আয় বেশ ইতিবাচক ধারায় এগোচ্ছে। গত ১১ মাসের (জুলাই-মে) রফতানি পরিসংখ্যান অনেকটা এ বার্তাই দেয় বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা মনে করেন, এই বছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। আর এরই ধারাবাহিকতায় রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আগামী অর্থবছরের জন্য চার হাজার ৫০০ কোটি ডলারের একটি প্রস্তাবিত রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। রফতানি আয়ের এ লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও ইপিবি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইপিবি দেশের পণ্য ও সেবা রফতানি খাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে চার হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্যদ্রব্য রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার ৪০ কোটি ডলার। আর সেবা খাতে নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬০ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৫২ কোটি ডলার বেশি। চলতি অর্থবছরের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ১৪৮ কোটি ডলার। ইপিবির তথ্য অনুসারে সেবা খাতে নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬০ কোটি ডলার। সরকারি পণ্য ও সেবা, পরিবহন, টেলিযোগাযোগ সেবা, ভ্রমণ ও কম্পিউটার সেবা রপ্তানি থেকে এ আয় আসবে। গত অর্থবছরে এ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪১৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার।
জানা যায়, ইপিবি খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সম্প্রতি নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। এ সময় সংগঠনের নেতারা জানান, আগামী অর্থবছর জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। আর এ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করছে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা।
তবে পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ মনে করে, গত অর্থবছর এ খাতটি বড় একটি ধাক্কা খেলেও চলতি অর্থবছরে সেটা সামলিয়ে উঠেছে। গত ১১ মাসে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এর ধারাবাহিকতা থাকলে তাদের আশা আগামী অর্থবছরেরও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব হবে।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত রফতানি আয়ের চেয়েও বেশি রফতানি করা সম্ভব। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের রফতানি ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করে আমাদের এমটাই মনে হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের রফতানিকারকরাও বেশ আশাবাদী। খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আমরা লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করেছি। আগামী অর্থবছরে কৃষিতে লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ৮.৭৩ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ৬.৭০ শতাংশ, চামড়ার জুতায় ১১.২৫ শতাংশ, পাটজাত পণ্যে ৮.৩৮ শতাংশ এবং প্রধান রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাক নির্ধারণ করা হয়েছে ৮.৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া মোট পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.২১ শতাংশ এবং সেবা খাতে ১০.৯৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকারের নেওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কার্যক্রম শুরু হলে বর্তমান রফতানি আয়কে ৫০ বিলিয়ন ডলার করা সম্ভব। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দেশের রফতানি আয় হয়েছে তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় হয়েছে তিন হাজার ৪১০ কোটি ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তিন হাজার ১২০ কোটি ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিন হাজার ১৮ কোটি ডলার এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে দুই হাজার ৭০২ কোটি ডলার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।