Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কলমীশাকের পুষ্টিকথা

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

দেশীয় কলমী বাংলাদেশের সুপরিচিত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন একটি পুষ্টিকর শাক। এটি দেশের পুকুর, ডোবা, হাওর ও খাল-বিলে ভাসমান অবস্থায় আপনা আপনি জন্মে থাকে। এশাকে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন এ,বি,সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। 
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম দেশীয় কলমী শাকে ১.৮ গ্রাম প্রোটিন, ৯.৪ গ্রাম শর্করা, ০.১ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ০.১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১(থায়ামিন), ০.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেভিন), ৪২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১০৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.৯ মিলিগ্রাম লৌহ, ১০৭৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ৪৬ কিলো ক্যালোরী খাদ্যশক্তি থাকে। 
হেলেঞ্চা, থানকুনি, কচুশাক (কালো) ও পুইশাকের চেয়ে কলমী শাকে ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন)এর পরিমাণ বেশি রয়েছে। ভিটামিন বি-১ (থায়মিন), স্নায়ুতন্ত্রকে সবল ও স্বাভাবিক রাখে এবং দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি সাধনে সাহায্য করে। ভিটামিন বি-১ এর মারাত্মক অভাব হলে বেরিবেরি নামক রোগ হয়। তাছাড়া ডাঁটাশাক ও সবুজ রঙের কচু শাকের তুলনায় দেশীয় কলমী শাকে অধিক পরিমাণে ক্যারোটিন থাকে। এক্যারোটিন হতে আমাদের দেহে ভিটামিন ‘এ’ সৃষ্টি হয়। চোখের দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখা ভিটামিন ‘এ’র প্রধান কাজ। দেহে ভিটামিন ‘এ’র অভাব হলে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, রাতের বেলায় অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা হয়। এ অবস্থাকে বলা হয় রাতকানা রোগ। ভিটামিন ‘এ’র অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে চোখে অন্যান্য কঠিন রোগ দেখা দেয় এবং আস্তে আস্তে চোখ অন্ধ হয়ে যায়। অল্প বয়স্ক শিশুরাই (‘দশ বছর বয়স) পর্যন্ত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। শিশু ও ছোট ছেলে-মেয়েদের অন্ধত্ব ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধে দেশীয় কলমী খুবই উপকারী শাক। গর্ভবতী মহিলাদের দেহে ভিটামিন ‘এ’র অভাব হলে গর্ভের শিশু দুর্বল ও ক্ষীণ স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে। তাই শিশু ও কিশোর-কিশোরীসহ গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যারোটিন (ভিটামিন ‘এ’) সমৃদ্ধ দেশীয় কলমীশাক এবং গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের অন্যান্য শাক-সবজি থাকা আবশ্যক। 
কচুশাক (সবুজ), থানকুনি ও হেলেঞ্চা শাকের তুলনায় দেশীয় কলমী শাক থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। ভিটামিন ‘সি’ আমাদের দাঁত, মাড়ি ও পেশী মজবুত করে। তাছাড়া ভিটামিন ‘সি’ সর্দি-কাশি ও ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করে এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই দেহের ভিটামিন ‘সি’ এর চাহিদা পূরণে দেশীয় কলমীশাক এবং অন্যান্য ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ শাক-সবজি আমাদের বেশি করে খাওয়া উচিত। ভিটামিন ‘সি’ তাপে সংবেদনশীল বলে রান্নার সময় শাক-সবজির শতকরা ৫০ ভাগ ভিটামিন ‘সি’ নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য কলমীশাক এবং অন্যান্য শাক-সবজিতে বিদ্যমান ভিটামিন ‘সি’ রক্ষার জন্য উচ্চতাপে অল্প সময়ে রান্না করে যত দ্রæত সম্ভব তা খেয়ে ফেলা উচিত। 
ডাঁটাশাক,থানকুনি ও হেলেঞ্চা শাকের চেয়ে দেশীয় কলমী শাকে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। মানবদেহের হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গর্ভবর্তী মহিলারা যদি ক্যালাসিয়ামের অভাবে ভোগেন তাহলে এর প্রভাব শিশুদের ওপর দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুদের হাড়ের কাঠামো দুর্বল, ছোট ও বাঁকা হয়, দাঁত দেরীতে ওঠে এবং দাঁত হয় অপুষ্ট। তাছাড়া শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানের সময় প্রসূতি মায়ের খাবারেও যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকা আবশ্যক। তাই শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য দেশীয় কলমীশাক অত্যন্ত উপকারী সবজি। 
কলমীশাকের পাতা ও কান্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ থাকার কারণে এটি দেহের হজম, পরিপাক ও বিপাক প্রক্রিয়ার কাজে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে কলমীশাক খেলে কোষ্ঠ-কাঠিন্য দুর হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। পুষ্টি উপাদান ছাড়াও কলমীশাকের অনেক ওষুধি গুণও রয়েছে। কলমীশাকের রস ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে সকাল ও বিকেল দৈনিক দু’বার খেলে প্রসূতি মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া কলমী শাকের রস দু’চামচ একটু গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে বলে ভেষজবিদরা মনে করেন। 
কলমী শাক ভাজি ও মাছের সঙ্গে ব্যঞ্জন হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। এ শাকের তরকারী খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। পরিমাণমতো তেল দিয়ে রান্না না করার কারণে কলমী ও অন্যান্য শাকে বিদ্যমান ক্যারোটিন দেহে শোষিত হতে পারে না। এজন্য কলমীশাক আবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল দিয়ে রান্না কওে খেতে হবে। সর্বোপরি দেশীয় কলমীশাক দামে সস্তা ও সহজলভ্য অথচ পুষ্টিমাণে সমৃদ্ধ। 
অপুষ্টি বাংলাদেশের একটি মারাত্মক জাতীয় সমস্যা। এদেশের নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, কিশোরী অধিকাংশ মানুষই অপুষ্টির শিকার। তবে শিশু, কিশোর-কিশোরী ও মহিলারাই বেশী অপুষ্টিতে ভুগছে। এমনকি দেশের বয়স্ক লোকেরাও পুষ্টির অভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারছে না। তাই দেহের পুষ্টি সাধনে এ সময় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্যান্য শাক-সবজির সাথে বেশি করে কলমী শাকও অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।

ষ মোঃ আবদুর রহমান
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা
উপজেলা কৃষি অফিস, তেরখাদা, খুলনা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন