Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাসায় ফিরে মা দেখেন মেয়ের গলাকাটা লাশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বাসায় ফিরে মা দেখলেন মেয়ে বিছানায় বালিশ চাপা দেওয়া অবস্থায় ছটফট করছে। বালিশ তুলে দেখেন তার গলাকাটা, রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিছানা। উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নৃশংস এ খুনের ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল (বুধবার) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ রোডের ল্যান্ডমার্ক আবাসিক এলাকায়। নির্মম খুনের শিকার ইনহাস বিনতে নাছির (১২) নগরীর মেরন সান স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তাদের বাসা ওই আবাসিক এলাকার লায়লা ভবনের ৫ম তলা। তার বাবা মোহাম্মদ নাছির সউদী আরবে থাকেন।
দিনের আলোতে বাসায় হানা দিয়ে ফুটফুটে নিষ্পাপ কিশোরীকে কারা হত্যা করেছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এটি কি পরিকল্পিত হত্যা, নাকি ডাকাতি তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ কিশোরী হত্যাকাÐের মাত্র ১২ ঘণ্টা আগে নগরীর পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় এক যুবককে। সেখানে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয় অপর একজন। ঈদের আগে-পরে নগরীতে সংঘটিত ৪টি চাঞ্চল্যকর খুনের কুল-কিনারা হওয়ার আগেই আরও ২টি খুন। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাও।
বাকলিয়ায় কিশোরীকে গলাকেটে খুনের ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই ও ডিবি তদন্তে নেমেছে। তবে তাৎক্ষণিক খুনের রহস্যের কোন কিনারা করতে পারেনি তারা।
মেয়েটির মা নাসরিন আক্তার খুশবু বলেন, তার তিন মেয়ের মধ্যে ইনহাস সবার বড়। সকাল ৮টায় তিনি মেজো মেয়ে জারিন বিনতে নাছিরকে স্কুলে দিতে বাইরে যান। ঘরে তখন ইনহাস আর আড়াই বছর বয়েসী ছোট মেয়ে ইননাছ বিনতে নাছির ছিল। সকাল ৯টায় বাসায় ফিরে তিনি ঘরের দরজা খোলা পান।
পরে ইনহাসের ঘরে গিয়ে তাকে বালিশ চাপা ও গলাকাটা অবস্থায় দেখতে পান। তাদের তিন কক্ষের ওই বাসায় তিন মেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে থাকেন খুশবু। ঈদে সাতকানিয়ায় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পর এখনও ফেরেননি তার শাশুড়ি। ঘটনার সময় বাসায় বড়দের কেউ ছিলেন না। চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আলাউদ্দিন জানান, তাদের এক নিকটাত্মীয় শিক্ষানবিশ আইনজীবী একাই মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসাইন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঘরের আলমারির কাপড়-চোপড় তছনছ করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, আলমারি থেকে তাদের বেশ কিছু গয়না খোয়া গেছে। তবে ইমিটেশনের অলঙ্কারের বক্স ও শোবার ঘরের ওয়ারড্রব অক্ষত ছিল। আলমারির চাবিটি ফ্লোরে পড়েছিল। তিনি বলেন, আমরা কিশোরীর মায়ের হাতও কাটা দেখেছি। তিনি দাবি করেছেন, তার মেয়ের এ পরিস্থিতি দেখে আহাজারি করতে করতে এক পর্যায়ে নিজের ‘হাত কেটে আত্মহত্যা’ করার চেষ্টা করেন।
উপ-কমিশনার বলেন, আমরা ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা দেখে এটিকে পুরোপুরি ডাকাতিও বলছিনা। আবার পরিকল্পিত হত্যাকাÐও বলতে পারছি না। সব দিক বিবেচনা করেই তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হবে।
বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী জানান, কিশোরী খুনের ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে ইতোমধ্যে থানা-পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। কর্মব্যস্ত সকালে আবাসিক এলাকায় খুনিরা হানা দিয়ে নিরাপদে কিভাবে চলে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া খুনের ঘটনা আশপাশের কেউ জানতে পারেনি এটাও রহস্যজনক বলছে পুলিশ। একই ভবনে নিহত কিশোরীর অনেক স্বজন থাকলেও রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার সময় কেউ সাথে যায়নি কেন তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
মঙ্গলবার রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগে ছুরিকাঘাতে সাইদুল ইসলাম ওরফে অনিক (২০) নামে এক যুবক খুন হন। একই ঘটনায় সম্রাট (২২) নামে আরো একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। অনিকের স্বজনরা দাবি করেছেন, কথা কাটাকাটির জেরে অনিককে খুন করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হামজারবাগের আতুরার ডিপো এলাকার ১৪ নম্বর গলিতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত অনিক (২০) পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। আহত সম্রাট পোশাক শ্রমিক।
নিহতের খালা পারভিন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, সানি ও তৈয়ব নামে দুই যুবকের সঙ্গে সম্রাট এবং অনিকের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে তৈয়ব (২৪) ও রাসেল (২৩) নামে দুইজনকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে জাঙ্গলপাড়া বুড়ির দিঘীর পাড় থেকে তৈয়ব ও রাসেলকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে পুলিশের সাথে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধ হয় বলে দাবি করেছে পুলিশ। ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, দুজনকে নিয়ে ভোরে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে তাদের সহযোগিরা পুলিশের কাছ থেকে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তৈয়ব গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে তৈয়বের দেখানো জায়গা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও তিন রাউন্ড কার্তুজ এবং একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • কামরুল ২৮ জুন, ২০১৮, ৪:৪৫ এএম says : 0
    দ্রুত অপরাধীদের খুঁজে বের করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • নিঝুম ২৮ জুন, ২০১৮, ৪:৪৬ এএম says : 0
    প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি না পাওয়াতে দেশে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ