Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জয়ের পথে নৌকা

নৌকা:৩১৭৯৪৪ ধানের শীষ:১৫২১১০

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম | আপডেট : ২:২৮ এএম, ২৭ জুন, ২০১৮

হাইকোর্টের বেধে দেয়া নিষেধাজ্ঞা এবং সময়সীমার মধ্যেই অবশেষে অনুষ্ঠিত হলো আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ভোট কারচুপি, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল, এজেন্ট বের করে দেয়া, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ ও অন্যপক্ষের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দাবির মধ্যেই সুনিশ্চিত বিজয়ের পথে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল (মঙ্গলবার) রাত আড়াই টায় এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মদ্যে ৩১৪টির ফল প্রকাশ করা হয়। তিন চতুর্থাংশের বেশি কেন্দ্রে ঘোষিত ফল অনুযায়ি নৌকা প্রতীক নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৪৪ ভোট। অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজার ১১০ ভোট। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬জন। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয় গণনা। যেসব কেন্দ্রে গণনা শেষ হয় তা জেলা শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে বসে ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মÐল।

যদিও ব্যাপক কারচুপি, ভোট ছিনতাই, এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ চার শতাধিক কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়েছে হাসান সরকার। তবে নির্বাচন কমিশনের দাবি গাজীপুরের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় জনগণ নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়েছে। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি এবং নির্বাচন কমিশনকে দায়ি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গাজীপুরের নির্বাচন হলো শেখ হাসিনা মার্কা নির্বাচন।
গাজীপুরে গতকাল প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। খুলনায় বিতর্কিত নির্বাচন এবং এর আগে গাজীপুরের নির্বাচন স্থগিত করায় এই নির্বাচনের দিকে অনেকেরই দৃষ্টি ছিল। দিনভর দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, ব্যালট ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনায়সহ নানা অনিয়মে ৯টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও অনিয়ম ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। গতকাল গাজীপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু বেলা ১১টার পর থেকেই হঠাৎ করে একের পর এক কেন্দ্রে ব্যালট পেপার না থাকায় ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। ভোট দিতে আসা ভোটাররা এর প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ভোট দেয়ার দাবিতে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বিক্ষোভও করেছেন। স্থগিত থাকা কেন্দ্রগুলোর কয়েকটিতে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যালট ছিনতাই এবং ইচ্ছেমত নৌকা প্রতীকে সিল মারার কারণে সঙ্কট দেখা দেয় বলে অভিযোগ করেন ভোটররা। ভোট কেন্দ্রগুলো দেখা যায় সরকার দলীয় প্রার্থীর নেতাকর্মী ও এজেন্টদের দখলে। শতাধিক কেন্দ্রে ঘুরে এবং অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে খবর নিয়ে কোন কেন্দ্রেই বিএনপির পোলিং এজেন্ট খুজে পাওয়া যায়নি।
এর আগে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে টঙ্গীর আউচপাড়া বসির উদ্দিন উদয়ন একাডেমিতে ভোট প্রদান করেন হাসান উদ্দিন সরকার। সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে ভোট দেন জাহাঙ্গীর আলম। ভোট দেওয়ার পর হাসান সরকার তার এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন। তবে তিনি জয়ের ব্যাপারেও আশা প্রকাশ করেন। মেয়র নির্বাচিত হলে গাজীপুরকে একটি আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করার প্রতিশ্রæতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জনগণ সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছে। নাগরিকদের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি। শুধু আওয়ামী লীগের লোক নয়, সব দলের মানুষকে, সব ভোটারকে আমি স্বাগত জানাই। তারা যেন ভালোভাবে ভোট দিতে পারে, তাদের অধিকার যেন বাস্তবায়ন করতে পারে, এর জন্য আমাদের নেতা-কর্মীদের বলা আছে। ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার ২০ মিনিট পরই ধানের শীষের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। হাসান উদ্দিন সরকার দুপুর ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে ও খোঁজ খবর নিয়ে নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরেন।
সরেজমিনে কেন্দ্র পরিদর্শন: গাজীপুরের জয়দেবপুরে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদরাসা কেন্দ্রে ২০ থেকে ৩০ জন যুবক জোর করে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নৌকা মার্কা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। বেলা দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটায় সেখানে আধঘণ্টার মতো ভোট নেওয়া বন্ধ ছিল। ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এখলাসুর রহমান বলেন, ২০ থেকে ৩০ জন যুবক অতর্কিত কেন্দ্রের তিনতলার একটি বুথে ঢুকে তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। এরপর দ্রæত নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্সে ভর্তি করেন। কোনোভাবেই নিবৃত্ত করা যায়নি। এ ঘটনার পর আধঘণ্টার মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখতে হয়। জোর করে ব্যালটবাক্স ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি ভোট চালু রাখতে বলেছেন। পরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
গাজীপুরের পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে সবার সামনেই জালভোট দিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। ভোটারের কাছে থাকা তিনটি ব্যালট পেপারের মধ্যে শুধু মেয়র পদের ব্যালট নিয়ে সিল দিয়ে বাক্সে ফেলছিলেন। ওই ব্যক্তি নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী ছিলেন। আপনি কেন সিল মেরে দিচ্ছেন’ এমন প্রশ্নে বুথ থেকে দ্রæত বেরিয়ে যান ওই ব্যক্তি। এ ঘটনায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি বারবার মানা করার পরও তিনি এ কাজ করছেন।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওই কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম। তাকে এই ঘটনা জানানো হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়ম পাননি। বেলা ১১টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পরিদর্শন শেষে কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বহিরাগত লোকজন প্রায় সব কটি বুথে ঢুকে প্রকাশ্যে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ফেলতে থাকেন।
আটটি বুথের বেশির ভাগের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট না হয়েও নৌকার ব্যাজধারী বহিরাগত ব্যক্তিদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। তাঁরা ভোটারের হাত থেকে নয়, সরাসরি সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মারতে থাকেন। তবে তাঁরা শুধু মেয়র পদের সাদা রঙের ব্যালট পেপারই নিচ্ছিলেন। ভোটারের নাম জিজ্ঞেস করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরতে দেখা যায় তাঁদের। প্রতিটি বুথে এমন একাধিক ব্যক্তি এই সিল মারার কাজ করেছেন।
কোনাবাড়ীর গ্রেটম্যাট প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকেই ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেয়া হয়। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোঃ মুনসুর বলেন, ব্যালট পেপার শেষ হওয়ায় ভোট গ্রহণ বন্ধ রয়েছে। এ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫২ জন। এরমধ্যে সেসময় পর্যন্ত ৩০০‘র মতো ভোট পড়ে। ভোট দিতে এসে ব্যালটের অভাবে অনেকেই ভোট না দিয়েই ফিরে যান। কয়েকজন ভোটার জানান স্থানীয় যুবলীগ নেতারা এসে ব্যালট পেপার সব ছিনতাই করে নিয়ে গেছেন। ওই কেন্দ্রের একজন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো চাকরি করি। ছিনতাই হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তিনি হ্যা বা না কোন উত্তর না দিয়ে কেবল এই কথাই বলতে থাকেন। ব্যালট ছিনতাইয়ের বিষয়ে মোঃ মুনসুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন পরে তার সামনেই একজন কমিশনার প্রার্থীর এজেন্ট হুমায়ুন কবির ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রমাণ দিলে তিনি চুপ হয়ে যান।
একই চিত্র দেখা যায় কোনবাড়ী এম ই এইচ আরিফ কলেজ কেন্দ্রে, ১১টার পরপরই ওই কেন্দ্রের সব ব্যালট পেপার সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা নিয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয়। ওই কেন্দ্রে গেলে দেখা যায় কোন রুমেই মেয়র পদে ভোট দেয়ার জন্য ব্যালট পেপার নেই। জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার নাম প্রকাশ না করে বলেন, ব্যালট সব শেষ হয়ে গেছে। ভোটররা বাইরে অপেক্ষা করছে আর ব্যালট কিভাবে শেষ হলো তাও তিন ঘণ্টার মধ্যে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যালট শেষ হয়ে গেলে তো আমাদের করার কিছু নাই।
কোনাবাড়ীর আইডিয়াল হাইস্কুল কেন্দ্রে ১১টার পর থেকেই দুটি বুথেও ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ এই সময় বাইরে ছিল বিপুল সংখ্যক ভোটারের দীর্ঘ সারি। এই দুই বুথের পোলিং এজেন্টদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়ায় ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাহমুদুল আমিন বলেন, ঝামেলা হওয়ায় দুটি বুথের ভোট গ্রহণ বন্ধ আছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়েছে। আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে আব্দুর রহমান নামে এক ভোটার বলেন, প্রায় দেড়ঘণ্টা যাবৎ ভোট দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বলা হচ্ছে ব্যালট পেপার নেই। ১৭নং ওয়ার্ডের মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ করেন ভোটার গোলাপী বেগম। তিনি জানান, ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে সোয়া ১২টায় ভোট দিতে পেরেছেন তিনি। মোঘরখাল জামেয়া আরাবিয়া নূরীয়া আলহাজ্ব মকবুল আহমেদ মাদরাসা কেন্দ্রে ব্যালট সঙ্কটের কারণে ১১টার দিকে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়। এসময় ওই কেন্দ্রের বাইরে বিপুল সংখ্যক ভোটার ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ব্যালট নাই শুনে তারা তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ শুরু করেন। ভোট দেয়ার দাবিতে তারা বিভিন্ন ¯েøাগানও দেন। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার হাসানুল করিম কামাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ব্যালট পেপার দিতে দেরি হওয়ায় বাইরে অপেক্ষমাণ ভোটাররা হইচই শুরু করেন। এ সময় ভোটাররা আতঙ্কে দৌড়াতেও শুরু করে। তখন আধঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে ভোট গ্রহণ চালু করেন।
গতকাল টঙ্গীর শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র, মুন্নু টেক্সটাইলমিল উচ্চ বিদ্যালয়, খান আইডিয়াল স্কুল, সিরাজ উদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় সকালের দিকে দু’একটিতে বিএনপির পোলিং এজেন্ট পরবর্তীতে তাদের বের করে দেয়া হয়। কেন্দ্রের বাইরে মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের কোন সমর্থক দেখা যায়নি। কোন কেন্দ্র বা কত নম্বর বুথে ভোটার ভোট দিতে পারবেন এমন তথ্য জানানোর জন্যও বিএনপির কেউ ছিল না।
তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকদের বেশি চোখে পড়েছে। বাড়ি বাড়ি যেয়ে ভোটারদের রিকশা, অটোতে করে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এছাড়া অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী ল্যাপটপ দিয়ে ভোটারদের ভোট দেবার কেন্দ্র ও বুথ জানিয়েছেন।
মুন্নু টেক্সটাইল মিল উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়। এ বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, বিশৃংখলা রোধে ভোটার নাম্বার ও বুথ ঠিক করার কারণে কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সিরাজ উদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভীড় লক্ষ্য করা যায়।
গাজীপুর সদর এলাকার ৩০ নং ওয়ার্ডের নীলেরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুপুর আড়াইটার সময় গিয়ে দেয়া যায়, ভোটারদের উপস্থিতি সামান্য। এর মধ্যে কয়েকজন মহিলা ভোট দিতে আসার পর দেখেন তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে কেউই তাদের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে রাজি হননি। তারা বলেন, ভোট দিতে পারি নাই সমস্যা নাই কিন্তু নতুন করে আর ঝামেলায় জড়াতে চাই না। এরপর দ্রæত ভোট কেন্দ্র থেকে চলে যান তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার একজন শিক্ষক ভোটার জানান, সকাল থেকে অনেকেই ভোট দিতে এসে দেখে তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলেনি। কারণ এটা জাহাঙ্গীরের এলাকা। যারা বিএনপিতে ভোট দেবে তাদের দেখে নেবারও হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কোন কেন্দ্রের বিএনপির এজেন্ট ছিল না: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইনকিলাবের ৫ জন প্রতিবেদন প্রায় শতাধিক কেন্দ্র পরিদর্শন করে। এসব কেন্দ্রের কোনটিতেই গতকাল বিএনপির প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। ভয়-ভীতি প্রদর্শন, পুলিশের হামলা, কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়ার মাধ্যমে এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে আসতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির কয়েকজন পোলিং এজেন্ট। এছাড়া নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে কাজ করা অনেকের সাথেই কথা বলে জানা যায় গাজীপুরের ভোট কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
গাজীপুরের পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টরা নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের কাছ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের প্রায় সবাইকে গলায় ঝুঁলিয়ে রাখা কার্ড প্রদর্শন না করে শার্টের নিচে, পকেটে ঢুকিয়ে রাখতে দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্রের কাছে ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্পেও নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের বসে থাকতে দেখা যায়। সেখানে ধানের শীষের এজেন্টদের দেখা যায়নি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোনাবাড়ি এলাকার ৬টি ওয়ার্ডের প্রায় সবকটি কেন্দ্রে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদেরকে পুলিশ গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনবাড়ি এলাকার ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে ধানের শীষের কোন এজেন্টকেই কেন্দ্রে পাওয়া যায়নি। এসব কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট অনুপস্থিত কেন জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট হাস্যকর সব জবাব দিয়েছেন। মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানিশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএনপি’র পোলিং এজেন্ট অনুপস্থিত কেন জানতে চাইলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা জানান, মোবাইল নিয়ে এসেছিল, পরে সেটি আবার রাখতে গেছে। কিন্তু আর আসেনি। পারিজাত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরিফ কলেজ, আইডিয়াল হাই স্কুলে বিএনপির এজেন্টের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে নৌকার এজেন্টরা বলেন, তারা ছিল, মাত্রই বাথ রুমে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও তাদের দেখা যায় নি। কোনাবাড়ি এলাকার একটি কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপি’র এজেন্ট মামুনুর রশিদ জানান, আওয়ামীলীগ ভোট শুরুর আগেই মেয়রের ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ভরেছে। আমাদেরকে কেন্দ্র থেকে পুলিশ দিয়ে বের করে দিয়েছে তারা। পুলিশ আমাদেরকে বলে “বের হয়ে যাও তা না হলে গ্রেফতার করা হবে”।
এজেন্ট না থাকার বিষয়টি গ্রেটম্যাক প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা কেন্দ্রে কেন আসেনি তা আমরা জানি না।



 

Show all comments
  • Hridoy Sorkar Bijoy ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:০৫ এএম says : 0
    নির্বাচন না করলেই হতো,, ভোটের আগেই ঘোষনা করে দিতো যে আওয়ামীলীগ জয়ী
    Total Reply(0) Reply
  • আরাফাত সিদ্দিকী ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:০৬ এএম says : 0
    দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে
    Total Reply(0) Reply
  • Rakib AL Islam ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:০৮ এএম says : 0
    অভিনন্দন জাহাঙ্গীর আলম
    Total Reply(0) Reply
  • Bahar Uddin ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:০৯ এএম says : 0
    এসব কি ভোট.. এভাবে জয়লাভের কোন আনন্দ নাই.
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Morol Rana ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:১২ এএম says : 0
    আওয়ামী সরকারের নির্বাচন মানে নতুন ইতিহাস জন্ম দেয়া
    Total Reply(0) Reply
  • Tonmoy ২৭ জুন, ২০১৮, ১:৪০ পিএম says : 0
    ata to agei jana
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ