Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই শিশুর কান্নায় কাঁদলেন আদালত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

বাবা-মায়ের সংসার জোড়া লাগাতে ১২ বছরের শিশু ধ্রæব ও ৯ বছরের শিশু লুব্ধক অঝোরে কাঁদছে। তাদের কান্না দেখে কাঁদছেন স্বয়ং বিচারপতি ও এজলাস কক্ষে উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিক। এক পর্যায়ে দুই ছেলে বক্তব্যে জানতে চান আদালত। পরে বড় ছেলে আদালতে বলেন, আমরা আর কিছু চাই না, বাবা-মাকে একত্রে দেখতে চাই। এ সময় আদালত বলেন, এ দৃশ্য দেখেও কি আপনাদের মন গলে না? আপনারা কি সন্তানের জন্যও নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করতে পারবেন না? সামনে তাকিয়ে দেখেন, আপনাদের এ দৃশ্য দেখে সকলের চোখেই পানি চলে আসে। গতকাল সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়।
জানা যায়, শিশু দুটির মা রাজশাহীর কামরুন্নাহার মল্লিকা, বাবা মাগুরার মেহেদী হাসান। ঢাকায় দুইটি কলেজের পড়েছেন তারা। হঠাৎ দুজনের পরিচয়। এরপর প্রেম। অতঃপর দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০০২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে। এরপর তাদের সুখী দাম্পত্য জীবন শুরু। দুজনের ঘর আলোকিত করে আসে দুটি ফুটফুটে সন্তান। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য ঘটে। এর পরিণতিতে ২০১৭ সালের ১২ মে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। মেহেদী হাসান স্ত্রীকে তালাক দেয়ার এক সপ্তাহ আগে দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়ি মাগুরাতে পাঠিয়ে দেন। শিশু দুটিকে তাদের ফুফুর তত্ত¡াবধানে মাগুরার জেলা শহরের একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। বাবা ঢাকার উত্তরায় থাকলেও তার ব্যক্তিগত গাড়ি সন্তানদের ব্যবহারের জন্য দিয়ে দেন। মাগুরাতে বড় হচ্ছিল শিশু দুটি। এই এক বছর মা ও সন্তানের মধ্যে দেখা হয়নি। মল্লিকার অভিযোগ, সব রকম চেষ্টা করেও শিশু দুটির ফুফুর কারণে তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত সন্তানদের নিজের হেফাজতে নেয়ার জন্য হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন তিনি। মল্লিকা তার দুই সন্তানকে নিজ হেফাজতে নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করলে গত ২৯ মে আদালত শিশু দুটিকে হাইকোর্টের হাজির করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও শিশু দুটির বাবাকে নির্দেশ দেন। ২৫ জুন তাদের হাজির করতে বলা হয়। একই সঙ্গে সন্তানকে কেন মায়ের হেফাজতে দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। সেই নির্দেশ মোতাবেক শিশু দুটিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এছাড়া শিশু দুটির বাবা-মা, মামা, নানি ও ফুফুসহ আত্মীয়-স্বজনরা আদালতে হাজির হন।
শুনানির এক পর্যায়ে শিশু দুটির বক্তব্য শুনতে চান আদালত। দুই শিশুর মধ্যে বড়জন সালিম সাদমান ধ্রুব আদালতকে বলেন, আমরা আর কিছু চাই না, বাবা-মাকে একত্রে দেখতে চাই।
শিশু দুটির বক্তব্য শুনে আদালত ফের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন। এ সময় মায়ের পক্ষের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল আদালতকে বলেন, একটা বছর ধরে মা তার সন্তানকে দেখতে পাচ্ছেন না। তিনি সন্তানদের সঙ্গে মায়ের কথা বলার সুযোগ চান। পরে আদালতের অনুমতি পেয়ে ছেলেদের কাছে এগিয়ে যেতেই মা দুই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেন। এ সময় ছেলেরাও দীর্ঘদিন পর মাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। বড় ছেলে তখন হাত বাড়িয়ে বাবাকেও ডাকতে থাকে। ছেলে বলতে থাকে, বাবা, তুমি এসো। তুমি আমার কাছে এসো। আম্মুকে সরি বলো। এ সময় বাবাও এগিয়ে এলে আদালতের ভিতর এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নার দৃশ্য দেখে বিচারক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সকলের চোখে পানি চলে আসে। দীর্ঘ এক বছর পর বাবা-মাকে একসঙ্গে পেয়ে ছেলেদের কান্না সকলের বিবেককে নাড়া দেয়। এ সময় আদালতে উভয় পক্ষের আইনজীবীসহশতাধিক আইনজীবী দাঁড়িয়ে সমস্বরে সন্তানদের বিষয়টি চিন্তা করে বাবা-মাকে মেনে নেয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে সন্তানদের চাওয়া অনুযায়ী তাদের দাম্পত্য জীবন যাতে বজায় থাকে এ সেরকম একটি আদেশ দেয়ার দাবি জানান। পরে আদালত বলেন, আগামী ৪ জুলাই পরবর্তী দিন ঠিক করে শিশু দুটিকে হাজির করার নির্দেশ দিয়ে বিষয়টি মুলতবি করেন। আদালতে শিশু দুটির বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস বল। মায়ের পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

 



 

Show all comments
  • মারিয়া ২৬ জুন, ২০১৮, ৩:৩৪ এএম says : 0
    নিউজটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো
    Total Reply(1) Reply
    • Safiullah ২৬ জুন, ২০১৮, ৮:০৬ এএম says : 4
      Subject pathetic but islamic law see
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৭ জুন, ২০১৮, ১২:১২ এএম says : 0
    এটাই প্রকৃত দৃশ্য, বই পুস্তকে পড়েছি সন্তানরা হচ্ছে বাবা মার মধ্যে একটা সেতু। আর এই সেতু যদি মজবুত হয় তাহলে বাবা মা কখনো সন্তানকে ছেড়ে একা হতে পারেন না এটাই সত্য। আমি আমার জীবনে এধরনের অনেক ঘটনা দেখেছি বাবা মা নানা কারনে বিচ্ছেদ হলে এই সন্তানরাই তাদের দুজনের মধ্যে সেতুর কাজ করে এবং দুজন ঠিকই মিলে যায়। আমি আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন দুই শিশু ছেলের ভবিষতৎ ভালোর জন্যে বাবা মাকে আবার মিলিয়ে দেন। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আদালত

২৪ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ