বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইহুদী, খ্রীষ্টান, মোশরেক, কাফের প্রভৃতি আল্লাহদ্রোহী ও নবীবিদ্বেষীরা শুরু থেকে কোরআন বিকৃতি ও ইসলামবিরোধীতায় রত আছে এবং কোরআনের বহু স্থানে তাদের প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটিত হয়েছে। ইহুদীরা হজরত উজায়র (আ:) কে ইবনুল্লাহ (আল্লাহর পুত্র) আখ্যায়িত করে গুমরাহ হয়েছে।
নাসারা (খ্রীষ্টানগণ) হজরত ঈসা মাসীহ (আ:) কে আল্লাহর পুত্র (ত্রিত্ববাদের ভ্রান্ত বিশ^াস) বলে গুমরাহ হয়েছে এবং মোশরেকগণও (অংশীবাদীরা) গুমরাহ হয়েছে ফেরেশতাগণকে আল্লাহর কন্যা বানিয়ে (নাউজুবিল্লাহ)। এসব ভ্রান্ত জাতির আরও নানা উদ্ভট আকীদা বিশ^াস রয়েছে। আমাদের আলোচনা ঐ ভ্রান্ত জাতিগুলোকে নিয়ে নয়। আমাদের আলোচনা সে সব গুমরাহ, বিপথগামী এবং ভ্রান্ত সম্প্রদায় গুলোকে নিয়ে যাদেরকে ইসলামী দলগুলোর অন্তর্ভুক্ত মনে করা হয়। তারা বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে বিতর্কিত হয়েছে এবং পদস্খলন হয়েছে। ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ যাদের গুমরাহ ও পথভ্রষ্ট বলে গণ্য করেছে তাদের সংখ্যা বিপুল। তাদের একটির নাম ‘নূসাইরিয়া’ সম্প্রদায়, যাদের মূল আকীদা-বিশ^াস হচ্ছে হজরত আলী (রা:) খোদ আল্লাহ অথবা আল্লাহ তাঁর মধ্যে ‘হলুল’ করেছেন, অর্থাৎ প্রবিষ্ট হয়েছেন (নাউজুবিল্লাহ)। অনুরূপ একটি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের নাম ‘রাফেজী’। তাদের ভ্রান্ত মতবাদের মধ্যে অন্যতম, হজরত আলী (রা:) হচ্ছেন নবী। তারা সালাতে (দরূদ শরীফ) বিকৃত করে খতমে নবুওয়াতের বিশ^াসকে অস্বীকার করেছে। এ পর্যায়ে প্রথমে আমরা কোরআন ও হাদীসের আলোকে সালাত অর্থাৎ দরূদ সম্পর্কে কিছু জ্ঞাতব্য বিষয় এবং দরূদের তাৎপর্য মর্যাদার উল্লেখ করে দরূদ বিকৃতকারীর পরিণতির ঘটনাটি বর্ণনা করতে চাই।
আল কোরআনে বলা হয়েছে, তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও তোমদের জন্য প্রার্থনা করে অন্ধকার হতে তোমাদেরকে আলোকে আনার জন্য এবং তিনি মুমিনদের প্রতি দয়ালু। (সূরা: ৩৩ আহযাব, আয়াত: ৪৩) আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।
(সূরা: ৩৩ আহযাব, আয়াত: ৫৬) এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎপথে পরিচালিত। (সূরা: ২ বাকারা, আয়াত: ১৫৭) মরুবাসীদের কেউ কেউ আল্লাহতে ও পরকালে ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর সান্নিধ্য ও রসূলের দোয়া লাভের উপায় মনে করে। বাস্তবিকই তা তাদের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায়, আল্লাহ তাদেরকে নিজ রহমতে দাখিল করবেন। নিশ্চই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা: তওবা, আয়াত: ৯৯) ওদের সম্পদ হতে ‘সদকা’ গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি ওদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে। তুমি ওদেরকে ‘দোয়া’ করবে। তোমার দোয়া তো ওদের জন্য চির স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
(সূরা: তওবা, আয়াত: ১০৩)
ব্যাখ্যা: দরূদ (দুরূদ) ফারসী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, সালাম, প্রশংসা। পারিভাষিক অর্থে বলা হয় সেই দোয়া ও সালামকে যা রসূলুল্লাহ (সা:) -এর প্রতি পাঠ করা হয়। আরবীতে নামাজকে যেমন সালাত বলা হয়, দরূদকেও সালাত বলা হয়। তবে আরবীতে সালাত শব্দ ব্যবহারের কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র রয়েছে। অর্থাৎ যখন শব্দটি আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন ‘রহমত’ বুঝাবে এবং ফেরেশতাদের জন্য ব্যবহার করা হলে মুসলমানদের জন্য ‘ক্ষমা বা অনুগ্রহ প্রার্থনা’ করা বুঝাবে। আর সালাত রসূলুল্লাহ (সা:) -এর জন্য ব্যবহার করা হলে দোয়া বুঝাবে। উল্লেখিত আয়াতসমূহে সব ধরণের অর্থ ব্যক্ত হয়েছে। ‘সাল্লা’ মানে দোয়া করা, নামাজ পড়া। এভাবে ক্রিয়াপদ নানা রকমের হতে পারে। ‘সালাত’ শব্দের অর্থগত পার্থক্য জানা থাকা দরকার।
হাদীসে বলা হয়েছে, হযরত আবু হোরায়রা (রা:) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তাঁর প্রতি দশবার দরূদ পাঠ করেন। (মুসলিম, আবু দাউদ) হজরত ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, রাসূল্লাহ (সা:) বলেছেন; নিশ্চয় কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে সে ব্যক্তি যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশী দরূদ পাঠ করে। (তিরমিজী, ইবনে হাব্বান) সূরা আহযাবের ৪৩ নং আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ (সা:) -এর নিকট আরজ করেন, হে আল্লাহ’র রসূল! ইসলামের রীতি আমরা জেনেছি। অর্থাৎ ‘আত-তাহিয়াত’ আপনি দরূদ পাঠের নিয়মও বলে দিন। তিনি এই দরূদ শরীফ এরশাদ করলেন; আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা মোহাম্মাদিন ওয়া আলা আলে মোহাম্মাদ (শেষ পর্যন্ত)।
ব্যাখ্যা: হজরত নবী করীম (সা:) -এর পবিত্র নাম উচ্চারিত হলে কোন দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে, সে সম্পর্কে নানা কথা আছে। অনেকের মতে, ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ’ এ পর্যন্ত পাঠ করা ওয়াজেব, বাকী সুন্নত।
দরূদ বিকৃতির করুণ পরিণতি:
আহমদ ইয়ামানী (র:) এর বরাতে আল্লামা সাখাভী (র:) এক ‘রাফেজী’র একটি বিস্ময়কর শিক্ষামূলক ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আহমদ ইয়ামানী (র:) বলেন, আমি সানায় অবন্থানকালে প্রত্যক্ষ করেছি যে, এক ব্যক্তির আশে পাশে বহু লোকের সমাবেশ ঘটেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ব্যাপার কি? লোকেরা বলল, এই ব্যক্তি সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতকালে যখন এই আয়াত ‘ইউছাললুনা আলান নবী’ (তারা নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করে) পর্যন্ত পৌঁছে তখন তার স্থলে পাঠ করে, ‘ইউছাললুনা আলা আলীয়্যিন নবী’ (তারা দরূদ পাঠ করে আলীর প্রতি, যিনি নবী) এভাবে পাঠ করা মাত্র লোকটি বোবা হয়ে যায়, কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং অন্ধ ও অবস হয়ে যায়। (ফাযায়েলে দরূদ শরীফ-মওলানা জাকারিয়া) হজরত আলী (রা:) কে যারা নবী মানে তাদের দুনিয়াতেও শোচনীয় পরিণতির এটি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আল্লাহ সকলকে এ ধরণের বিপদ হতে রক্ষা করুন এবং সর্বশেষ নবী হজরত রসূলুল্লাহ (সা:) -এর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের তওফিক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।