দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
এ, কে, এম, ফজলুর রহমান মুন্্শী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
নামাজে একত্ববাদের বিধান :
ইসলামের সাধারণ ফারায়েজ ও আহকাম এবং বিশেষ করে নামাজ এবং এতদ-সংক্রান্ত বিষয়াবলি সম্পর্কে চিন্তা করার সময় একটি নির্দিষ্ট বিধানকে সর্বদাই নজরে রাখা দরকার। সেই বিধানাবলিই মূলত ইসলামের আসল রহস্য এবং গোপন তত্ত্বাবলির মূল নির্যাস।
ইসলামের আসল হাকিকত মাত্র একটিই। তা হলো তাওহীদ। এই তাওহিদ শুধু কেবল দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আধ্যাত্মিক চিত্তবৃত্তির ওপরই নির্ভরশীল নয়; বরং তা হলো এমন কর্মানুষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ততা, যেখানে সকলকেই ইসলামের প্রতিটি হুকুম-আহকামের সাথে পরিচিত হতে হয়। তাই ইসলামের অন্যান্য আহকামের মতো নামাজও এই হাকীকত এবং বৈশিষ্ট্যাবলির বিকশিত রূপ। নামাজের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কার্যক্রম, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি ইঙ্গিত-ইশারা দ্বারা পৃথকভাবে সেই হাকিকত ও বৈশিষ্ট্যকে পরিস্ফুট করা অপরিহার্য।
তবে এ কথা অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, দাওয়াতে মোহাম্মদী (সা.)-কে গ্রহণকারী লক্ষ-কোটি মুসলমানের ওপর নামাজ ফরজ। এই অপরিহার্য এবাদত আদায়ের জন্য যদি নির্দিষ্ট কোনো আকার-আকৃতি, নিয়ম-পদ্ধতি এবং দিক ও সময় নির্ধারণ করা না হতো, তাহলে সকল মুসলমান সমবেতভাবে কখনো তা আদায় করতে সক্ষম হতো না। যদি তাদের মাঝে সকলকেই এই অনুমতি দেয়া হতো যে, যিনি যেভাবে ইচ্ছা এবং যখন যেদিকে খুশি নামাজ আদায় করতে পারবেন, তাহলে ইসলামের একত্ববাদের নিয়ম-শৃঙ্খলা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত এবং নামাজির দৈহিক ও আত্মিক কর্মকা-ের মাঝে একত্ববাদের মূল প্রবাহ কোনোক্রমেই বিকশিত হতো না, এমন কি সারা বিশ্বের লক্ষ-কোটি মুসলমান একক জামায়াতের আওতাভুক্ত হতে পারত না। তাদের মাঝে যদি প্রত্যেককেই এই অনুমতি দেয়া হতো, যেদিকে যখন ইচ্ছা মুখ করে নামাজ পড়তে পারবে, তাহলে ইসলামে একত্ববাদের নেজাম ও বিধান কায়েম থাকত না। এমন কি বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারাও অন্তরস্থিত তাওহিদের বিকাশ পরিস্ফুট হতো না। বিশ্বব্যাপী লক্ষ-কোটি মুসলমানের মাঝে একতা, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার একাকিত্বও পরিদৃষ্ট হতো না।
মোট কথা, এই একতা একত্ববাদিতার নিয়ম-শৃঙ্খলাকে সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলাই হচ্ছে তাওহিদের সবচেয়ে বড় চিহ্ন ও পরিচিতি। লক্ষ-কোটি মানুষের বিক্ষিপ্ত অন্তর ও দেহকে, একই দেহে এবং একই প্রতিকৃতির মাঝে এবং একই অন্তরপ্রসূত ধ্বনির মাঝে প্রতিবিম্বিত করা এভাবেই সহজ ও সম্ভব, যখন তাদেরকে একই আইনকানুন, একই আকার-আকৃতি এবং একই কর্মকা-ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করা হয়। সুতরাং মানব সমাজের যাবতীয় একতাভিত্তিক নিয়ম-শৃঙ্খলা এই বিধানের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। জাতির একতা, সেনাবাহিনীর একতা, কোনো মজলিস ও সভা-সমিতির একতা, কোনো দেশ এবং সা¤্রাজ্যের একতা, মোটের ওপর সবকটি একতাকেন্দ্রিক নিয়ম-শৃঙ্খলা এই নিয়মাবলির ওপরই প্রতিষ্ঠিত। আর এরই ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠে এক মন-দেহ, এক রাষ্ট্র, জনপদ ও পৃথিবী।
নামাজে দৈহিক অঙ্গ সঞ্চালন :
এ কথাও সুস্পষ্ট যে, নামাজের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, কতিপয় পবিত্র আশা-আকাক্সক্ষাকে প্রকাশ করা। মানুষের সহজাত স্বভাব এই যে, যখন মানুষের মাঝে কোনও নির্দিষ্ট আকাক্সক্ষা ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়, তখন অবস্থা অনুসারে তার মাঝে কোনও কাজ বা অনুপ্রেরণাও দেখা দেয়। রাগের সময় চেহারা লাল হয়ে যায়, ভয়ের সময় ফ্যাকাশে হয়ে যায়, আনন্দের সময় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, চিন্তার সময় বিমর্ষ ও মলিন হয়ে পড়ে। যখন সে কাহারো নিকট কোনো কিছু সাহায্য চায়, তখন উভয় হাত সম্প্রসারিত করে, কাউকে সম্মান দেখানোর জন্য দাঁড়িয়ে যায়, কাহারো প্রতি ন¤্রতা প্রকাশের সময় অধোবদন হয়ে যায়, এর চেয়েও বেশি দীনতা ও আনুগত্য প্রকাশের সময় মুখ নিচু করে, এমন কি কখনো পায়ের ওপর মাথা ন্যস্ত করে। এগুলো হচ্ছে আকাক্সক্ষা ও অনুপ্রেরণা প্রকাশের ধারা। যা প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর মাঝেই কম-বেশি লক্ষ্য করা যায়। এই বিশ্লেষণের পর এ কথা বুঝে নিতে হবে যে, নামাজের দোয়া ও কালামসমূহকে যেভাবে মানুষের ব্যবহারিক কর্মকা-ের দ্বারা আদায় করা হয়, ঠিক সেভাবেই নামাজের আরকানসমূহ মানুষের সহজাত স্বভাবসিদ্ধ ও অভিব্যক্তির আকারে বিন্যস্ত করা হয়েছে।
মানুষের আত্মিক কাজকর্ম ও প্রতিক্রিয়ার বিকাশস্থল হচ্ছে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ। কোনও মানুষের হাত-পা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে কোনও রকম অভিব্যক্তি প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত একথা কেউ কল্পনা করতে পারে না যে, তার অন্তরে কি ভাব-ব্যঞ্জনা বা অভিসন্ধি লুকিয়ে আছে। যদি এমনটি না হতো, তাহলে প্রত্যেক মানুষই নিজের অধিকার ও সার্বিক মঙ্গলের দাবিদার হতে পারত। সমাজের কোনও ব্যক্তিই তাকে মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত করতে পারত না। কিন্তু এমন হলে সমাজ ও সভ্যতার বুনিয়াদ গোড়া থেকেই বিনষ্ট হয়ে যেত। মানুষের বাইরের কর্মকা- সম্পর্কে আল্লাহপাক যেমন সুপরিজ্ঞাত তেমনি আন্তরিক ও অভ্যন্তরীণ নকল ও হরকত সম্পর্কে তিনি অবহিত। এ জন্য কেবলমাত্র বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সম্পাদিত ক্রিয়া-কর্মই আল্লাহর নিকট একমাত্র লক্ষ্যণীয় বিষয় নয়, বরং বান্দাহদের উচিত নিজেদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় দিককে একই কেন্দ্রে সন্নিবিষ্ট করে আরজু ও আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা, নিজেদের হীনতা ও আনুগত্য প্রদর্শন করা। সত্যিকার অর্থে আনুগত্য ও কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে দেহ মনের একান্ত নিবিষ্টতার দ্বারাই শুভ ফল লাভ করা সম্ভব। মানুষ দেহ এবং রূহ উভয় দিক থেকেই আল্লাহপাকের মাখলুক। তাদের জীবনের এই উভয় অংশেই রয়েছে আল্লাহপাকের অসংখ্য দান ও অনুকম্পা, অজ¯্র নেয়ামত ও বরকতের পশরা। এ জন্য তা একান্তই অপরিহার্য যে সেই ¯্রষ্টা, প্রতিপালক ও সর্বদয়ালু মহামনিবের সামনে দেহ ও মন সহযোগে সেজদায় পতিত হওয়া, নিজের আরতি ও কাকুতি নিবেদন করা। এ কারণেই ইসলামী শরীয়তে দেহ ও মনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেই নামাজের আহকাম ও আরকান নির্বাচন করা হয়েছে। উপরের আলোচনা হতে বোঝা যায় যে, মানুষের সহজাত স্বাভাবিক ক্রিয়াকর্মের ও চিন্তাধারার প্রতিকৃতিতেই নামাজের আঙ্গিক কাঠামোকে বিন্যাস করা হয়েছে। দৈহিকভাবে আমরা কোনও মহান দাতার সম্মান এবং তার সামনে নিজের ভদ্রতা, শিষ্টাচার ও সৌজন্য এবং সম্মান প্রদর্শনের জন্য তিনটি পন্থা অবলম্বন করতে পারি। (ক) আমরা হয়তো দাঁড়িয়ে যাই, (খ) হয়তো তার প্রতি ঝুঁকে পড়ি এবং (গ) ভূমিতে মস্তক স্থাপন করি। নামাজের মাঝেও এই তিনটি অবস্থাই বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং পৃথিবীর শুভ আরম্ভ হতে আম্বিয়ায়ে কেরাম নামাজের যে শিক্ষা মানুষকে দিয়েছেন, সেখানেও আমরা এ তিনটি অবস্থার সমাহার দেখতে পাই। দাঁড়িয়ে যাওয়া (কিয়াম), ঝুঁকে পড়া (রুকু) এবং জমিনে মস্তক স্থাপন করা সেজদাহ)।
আরকানে নামাজ : “
এ কথা সুপরিজ্ঞাত যে, নামাজ মিল্লাতে ইবরাহীমির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে যখন আল্লাহর ঘর নির্মাণের ও তা পবিত্র রাখার হুকুম প্রদান করা হয়, তখন এ কাজের উদ্দেশ্যও ব্যক্ত করা হয়। আল-কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, “এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, দ-ায়মান হয়ে এবাদতকারী, রুকু আদায়কারী এবং সেজদাহ পালনকারীর জন্য পাক-সাফ করুন। (সূরা হজ্জ : রুকু-৪) এই হুকুমের মাঝে নামাজের তিনটি রুকন : কিয়াম, রুকু এবং সেজদাহর বিস্তৃত ও পর্যায়ক্রমিক বিবরণ আছে। হযরত মারিয়ামের সময় বনি ইসরাঈলের শেষ পর্যায় ছিল তার প্রতি খেতাব করে নির্দেশ করা হয়েছিল, হে মারিয়াম! স্বীয় প্রতিপালকের সন্নিধানে হাজির হয়ে বন্দেগী কর এবং সেজদাহ কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। (সূরা আলে ইমরান : রুকু-৫)
প্রচলিত তৌরাত পাঠেও নামাজের বিভিন্ন আরকানের কথা জানা যায়। কিন্তু মুশকিলের কথা হচ্ছে এই যে, এর অনুবাদকারীরা ইবরানী ও ইউনানী শব্দাবলীর তরজমা নিজেদের খেয়ালখুশি ও ধ্যান-ধারণা অনুসারে করেছেন। শব্দাবলির তরজমা নিজেদের খেয়ালখুশি ধ্যান-ধারণা অনুসারে করেছেন। যার ফলে মূল মর্মোদঘাটনের ক্ষেত্রে বহুলাংশে পর্দার আবরণ সৃষ্টি হয়েছে। মোটকথা ইবাদত এবং সম্মান প্রদর্শনের এ তিনটি তরিকা হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর শরীয়তে এবং তার বংশধরদের মাঝে জারি ছিল। নি¤েœ আমরা এর প্রত্যেকটির উদ্ধৃতি সমষ্টিগত তৌরাত হতে পেশ করছি।
কিয়াম : অবশ্যই ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর সন্নিধানে দাঁড়িয়েছিলেন। (পয়দায়েশ : ১৮-২২)
রুকু : এবং হযরত ইব্রাহীম (আ.) জমিনের দিকে আরও অবনমিত হয়ে আরতি জানালেন, হে আল্লাহ! (পয়দায়েশ : ১৮-২)
সেজদাহ : এবং এ কথা শুনে আল্লাহপাক বনী ইসরাঈলের প্রতি মনোযোগ স্থাপন করলেন এবং তাদের বেদনার প্রতি ¯েœহদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন, আর তারা নিজেদের মস্তক অবনত করল ও সেজদাহ করল। (নির্গমন ৪-৩১) তারপর ইব্রাহিম মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন এবং আল্লাহপাক তার সাথে কথাবার্তা বললেন, (পয়দায়েশ : ১৭-৩) তারপর ইব্রাহিম (আ.) স্বীয়-সহচর নওজওয়ানদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা এখানে এই গর্দভটির পাশে অবস্থান কর, আমি এই ছেলেটির সাথে (স্বীয় পুত্রের কোরবানির জন্য) সেখান পর্যন্ত গমন করব। যেখানে সেজদাহ আদায় করে পুনরায় তোমাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করব। (পয়দায়েশ : ২২-৫) তারপর সেই ব্যক্তি (হযরত ইসহাক (আ.)-এর দূত) মস্তক অবনত করল এবং আল্লাহপাকের সেজদাহ আদায় করল এবং সে বলল, হে আমার পরওয়ারদিগার! ইবরাহিম (আ.)-এর প্রভু প্রকৃতই বরকতময়। (পয়দায়েশ : ২৪-২৬) এবং এমন হলো যে, যখন হযরত দাউদ (আ.) পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছলেন, তখন তিনি আল্লাহকে সেজদাহ করলেন। (শামুয়েল : ১৫-৩২)
যাবুর কিতাবে আছে, হযরত দাউদ (আ.) আল্লাহপাকের কাছে ফরিয়াদ করলেন, “হে আল্লাহ! তোমারই ভয়ে ভীত হয়ে তোমার পবিত্র কেবলার দিকে মুখ করে আমি তোমাকে সেজদাহ করব।” (যাবুর : ৫-৭)
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে, মিল্লাতে ইবরাহিমীর মাঝে এবাদত এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে এ তিনটি পর্যায়ই প্রচলিত ছিল। আর ইসলামেও এগুলোকে বহাল রাখা হয়েছে। বর্তমান প্রচলিত ইঞ্জিলে দোয়া ও নামাজের উল্লেখ বহু স্থানে আছে। মথি ৬-৫ এবং ১৭-২১ এবং ২৬-৩৬ এবং মার্কস ১৪-২৩ এবং লুক ২২-৪১ ইত্যাদি শ্লোকে তার বিবরণ পাওয়া যায়। তবে একই ইঞ্জিলের বিভিন্ন স্থানে নামাজের বিভিন্ন অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে। লুক-এ (২২-৪১) আছে হাঁটু ভেঙে অবনত হওয়ার কথা। (হয়তো তা রুকু) মথি বলছে (২৬-৩৯) মুথড়ে পড়ে যাবার কথা। (সেজদাহ) আর অন্যান্য ইঞ্জিল এ ব্যাপারে নীরবতা পালন করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবের প্রাক্কালে ইহুদি ও নাসারাদের মাঝে যারা নামাজের পাবন্দ ছিল, তারাও এসকল আরকান আদায় করত এবং দাঁড়িয়ে তৌরাত অথবা যাবুরের বিভিন্ন আয়াত তেলাওয়াত করত এবং তারা সেজদাহও আদায় করত। কোরআনুল কারীম সাক্ষ্য দিচ্ছে, “তারা সবাই এক বরাবর নয়, আহলে কিতাবের মাঝে এমন লোকও আছে যারা রাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং সেজদাহ করে। : (সূরা আলে ইমরান : রুকু-১২) হাদিস শরীফে আছে, “রুকু অবস্থায় ইহুদিদের মতো উভয় হাত একত্রিত করে রেখ না।” (ফতহুল বারী, ইবনে হাজার, ২ খ: ২২৭ পৃ:) এর দ্বারা বোঝা যায় যে, আরবের ইহুদিরাও নামাজের এসকল আরকান আদায় করত।
উম্মতে মোহাম্মদীর ওপর ফরজ নামাজও সে সকল প্রাচীন আহকাম ও আরকানসহ অপরিহার্য হয়েছে, যা হযরত ইব্রাহিম (আ.) হতে আজ পর্যন্ত চলে আসছে। সুতরাং ‘ইনসাইক্লোপেডিয়া অব ইসলাম’-এর লেখকগণ এই বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন, “ইসলামী নামাজ তরতীব ও তরকীব অনুসারে বহুলাংশে ইহুদি এবং নাসারাদের মাঝে প্রবর্তিত নামাজেরই অনুরূপ।” (ইনসাইক্লোপেডিয়া অব ইসলাম : সালাত প্রবন্ধ, ৪ খ: ৯৬ পৃ:)
পবিত্র ইসলামের বৈপ্লবিক কর্মকা-ের দ্বারা এই খাজানাকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ইসলাম এর মাঝে নিহিত মানবিক ছোঁয়াচসমূহকে দূরীভূত করে দিয়েছে এবং অবলুপ্ত ফরজগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। বিস্মৃত নিয়মতান্ত্রিকতাকে সচল ও সজীব করেছে। প্রাণহীন নামাজের মাঝে প্রকৃত প্রাণসঞ্চারের পথ উন্মুক্ত করেছে। এর মাঝে পয়দা করেছে ইখলাসের জাওহার। একে বানিয়েছে দ্বীনের স্তম্ভ এবং স্বীয় অবিচ্ছিন্ন শিক্ষা ও কর্মপ্রবাহের দ্বারা এর বাহ্যিক আকার-আকৃতিকেও মানবিক পরিবর্তন হতে মাহফুজ করেছে। এভাবেই ইসলাম নামাজের চিরন্তন ফরজকে পরিপূর্ণতার দোরগাড়ায় পৌঁছে দিয়েছে, যার জন্য সৃষ্টির শুরুতেই এর চয়ন হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।