নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইমামুল হাবীব বাপ্পি : পুরো আর্জেন্টিনা তো বটেই, এমনকি বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকদের প্রতিনিধি হিসেবে একবুক স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়ার পা রাখেন লিওনেল মেসি। লক্ষ্য বিশ্বকাপ অতৃপ্তি ঘোঁচানো। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খায় সেই স্বপ্ন। নিঝনি নভগোরোদে এসে পড়ল তা মুখ থুবড়ে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের ভাগ্য এখন আর নিজেদের হাতে নেই; এখন তা নির্ভর করছে অনেক ‘যদি-কিন্তু’র উপর।
কিন্তু কেন এমন হলো? আর্জেন্টিনা কি গ্রæপ পর্বেই বাদ পড়ার মত দল? যে দলে রয়েছেন মেসি-আগুয়েরো-ডি মারিয়া-দিবালার মত বিশ্বের সেরা সব তারকরা সেই দলে কি এমন সমস্যা ছিল যে খাঁদের কিনারে গিয়ে ঠেকেছে? আসরের দুই ম্যাচেই দলের প্রধান তারকা মেসি ছিলেন নিষ্প্রভ। কিন্তু কেন? এর উত্তর একটাইÑ হোর্হে সাম্পাওলি।
চিলি ও স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার হয়ে সাফল্যই আর্জেন্টিনার কোচ হতে সহায়তা করেছিল সাম্পাওলিকে। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ও বিশ্বের নামজাদা সব খেলোয়াড় হাতে পেয়েও দলটাকে গুছিয়ে নিতে পারেননি ৫৮ বছর বয়সী কোচ। খেলোয়াড়দের গাঁথতে পারেননি এক সুঁতোয়। বিশ্বকাপের মত আসরে এসেও তাকে ভাবতে হয় কোন ফর্ম্যাটে তিনি দলকে খেলাবেন!
তার পরিকল্পনারই অংশ হিসেবেই পরশু ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, লুকাস বিলিয়া ও মার্কোস রোহোদের মত পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের একাদশে জায়গা হয়নি। বনেগা-লো সেলসোদের মত মিডফিল্ডারকেও পুরো সময় বসিয়ে রাখেন বেঞ্চে। এক কথায় যে খেলোয়াড় যেখানে খেলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তাদেরকে সেখানে খেলানো হয়নি। এছাড়া ফুটবলের প্রথা মেনে দলের তারকা খেলোয়াড়কে ঘিরেও রচিত হয়নি ম্যাচের পরিকল্পনা। তার খেসারত সাম্পাওলিকে দিতে হয়েছে ক্রেয়োশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে নাকানিচুবানি খেয়ে।
আর্জেন্টিনা দলটি বড় ধাক্কা খায় তাদের এক নম্বর গোলকিপার সার্জিও রোমেরোকে হারিয়ে (ইনজুরির কারণে)। এদিন একাদশে ছিলেন উইয়ি কাবায়েরোকে। চেলসি বদলি গোলকিপার একসময় ভালো খেলোয়াড় ছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই, বিশেষ করে যখন তিনি মালাগাতে খেলতেন। কিন্তু ৩৬ বছর বয়সে এসে তিনি যে কতটা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছেন তার প্রমান তিনি দিয়েছেন সাম্পাওলিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে।
এদিন ৩-৪-৩ ফর্ম্যাশনে খেলেছে আর্জেন্টিনা। আধুনিক ফুটবলে যে কৌশল বড়ই অকেজো। কোচের এই কৌশলে যে খেলোয়াড়রা খুশি নন তা বোঝা গিয়েছিল ম্যাচ শুরুর আগে দলীয় সংগীতের সময়। এসময় বার বার ক্যামেরা খুঁজে নিচ্ছিল মেসির চিন্তিত মুখকে। ম্যাচ শেষেও কারো সঙ্গে মোলাকাত না করে একাকী সবার আগে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন ৩০ বছর বয়সী।
মাঠেও এদিন মেসি ছিলেন একা। আর্জেন্টিনার কোন মিডফিল্ডারকে এদিন মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনে হয়েছে তিনজন খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলছে আর্জেন্টিনা। শুনতে অবাক মনে হলেও প্রথমার্ধে মাঝমাঠ থেকে মেসির কাছে বল দেওয়া হয়েছে মাত্র দুইবার! ৬০০ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে মেসি কখনো পড়েছেন বলে মনে হয় না। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক যা কয়েকবার বল পেয়েছেন সেটাও ক্রোয়েটরা সামলে নিয়েছে শক্ত পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই। মাঝমাঠ থেকে বলের যোগান না পেলে কিভাবে আক্রমণে যাবেন মেসি? এই সহজ হিসাবটা সাম্পাওলি কেন মেলাতে পারেননি সেটা বড় একটা বিষ্ময় বটে।
ম্যাচ শেষে বিবিসি ফুটবল বিশ্লেষণ কক্ষে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেসিরই একসময়ের ক্লাব সতীর্থ ও স্পেন মিডফিল্ডার সেস ফ্যাব্রিগাস। আর্জেন্টিনাকে তিনি ‘ভগ্ন দল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘মনে হলো তারা একে অন্যের জন্যে নয়, বিপক্ষে খেলছে।’ চেলসি তারকা বলেন, ‘এটা মেসির জন্য কঠিন। তার পিছনে তেমন কোন খেলোয়াড়ই ছিল না। সত্যিই সে এভার বনেগা অথবা গিওভানি লো সেলসোর অভাব বোধ করেছে।’ ফ্যাব্রিগ্যাস বলেন, ‘তার (মেসির) এমন কারো দরকার ছিল যে তাকে একটু হলেও সহায়তা করবে, খেলাটা গড়ে দেবে। আপনি সব সময়ই চাইবেন যত বেশি সম্ভব আপনার সেরা খেলোয়াড়কে বলের যোগান দিতে।’
কিন্তু বাস্তবে মেসি কাল বলে পাঁ ছোঁয়াতে পেরেছেন মাত্র ৪৯বার! স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা আগুয়েরো ৫৪ মিনিট মাঠে থেকে বলে পা লাগাতে পারেন মাত্র ১৬বার! যে কারো কাছে যা শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হওয়ারই কথা। পরিসংখ্যানটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। কৌশলের অংশ হিসেবে আক্রমণের ডান প্রান্তে ছিলেন মেসি, বাঁ প্রান্তে মেজা, মাঝে আগুয়েরো। নিয়ম মেনে মেসির দিক থেকেই বার বার আক্রমণে উঠা উচিত ছিল আর্জেন্টিনার। কিন্তু সাম্পাওলির কৌশল ছিল ভিন্ন। বার বার তাদেরকে মাঠের বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করতে দেখা গেছে। যে কারণে মেসি ডান প্রান্তে শুধু হেটেই বেড়িয়েছেন বলের আশায়, কিন্তু পাননি। সাম্পাওলির পরিকল্পনা ছিল মেসিকে সামলাতেই ব্যস্ত থাকবে ক্রোয়েট রক্ষণ, সেই ফাঁকে তারা বাঁ-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করবে। আইসল্যান্ড ম্যাচের পরে তিনি এমনটা জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনাটা যে ছিল একেবারেই যাচ্ছেতাই তা না বললেও চলে।
এদিকে রক্ষণও ছিল ফাঁকা নড়বড়ে। কোচের পরিকল্পনায় ছিলেন তিনজন সেন্টারব্যাক। অথচ সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলতে অভ্যস্ত কেবল অটামেন্ডি। তাগিøয়াফিকো ও মার্কেদোরা হলেন ফুলব্যাক। ফুলব্যাক হয়ে সেন্টারব্যাকের কাজ তারা কিভাবে সামলাবেন তার চিন্তা কি করেননি সাম্পাওলি? যে কারণে বার বার তাদের রক্ষণ ফাঁকা হয়েছে। ফুলব্যাকের কাজই তো একটু উঠে গিয়ে আক্রমণে সহায়তা করা। মানজুকিচের মিস কিংবা ম্যাচের গোল তিনটার দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন কতটা অরক্ষিথ ছিল তাদের রক্ষণ। লুকা মড্রিচ ডি বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছেন আয়েশি ভঙ্গিমায় ইচ্ছামত জায়গা তৈরী করে নিয়ে। রাকিটিচের সামনে তো গোলকিপারও ছিল না। আর প্রথম গোলটি তো ‘মিসটেক অব ফুটবল বিশ্বকাপ’ বললেও ভুল হবে না। এমনকি ক্রোয়েশিয়া আরেকটু আক্রমনাত্মক মানসিকতা নিয়ে খেললে গোলের সংখ্যা বাড়াতেও পারত।
সাবেক আর্জেন্টাইন রাইট ব্যাক জাবালেতার তো নিজ দলের এমন পারফর্মান্স মানতেই পারছেন না, ‘এমন পারফর্ম্যান্স আমি মানতেই পারছি না। দলকে খুব অসহায় দেখাচ্ছিল। তারা এদিন কিছুই করতে পারেনি।’ আর সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালেন শিয়েরার বলেন, ‘মাঠে আর্জেন্টিনার কোন পরিকল্পনাই ছিল না।’
এমন ভুলের পর সাম্পাওলির সমালোচনার মুখে পড়াটাই ছিল স্বাভাবিক। দেশটির গণমাধ্যম তো তাকে ধুয়ে দিচ্ছে। দলে মেসির মত তারকাকে কাজে রাগাতে না পারার কারণেও তাকে শুনতে হচ্ছে নানান সমালোচনা। অথচ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় শঙ্কায় পড়ার পর উল্টো খেলোয়াড়দের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়েছেন সাম্পাওলি!
ম্যাচ পরবর্তি সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টাইন কোচ বলেন, ‘আমি খুব আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু এই পরাজয় আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি পরিষ্কারভাবে খেলাটা পড়তে পারিনি। আসলে সব কিছুই হয়েছে দল ও দলের খেলোয়াড়দের দ্বারাই। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোনো পরিকল্পনাই কাজ করেনি।’ তবে তিনি মেসিকে রেখেছেন আলাদা পাত্রে। তার মতে, দলের বাকিদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য না পাওয়াতেই মেসি প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাম্পাওলি বলেন, ‘বাস্তবতা হলোÑ লিও অকেজো ছিলো, কারণ তার সঙ্গে দলের অন্যদের যেভাবে পারফর্ম করা উচিত সেভাবে তা হয়নি।’
কোচের এ বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন দলটির ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো। একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তার (সাম্পাওলি) যা ইচ্ছা বলতে দিন!’ চিন্তিত বদনে ৩০ বছর বয়সী বলেন, ‘আমার রাগ ও দুঃখ হচ্ছে। অবশ্য এখনো আমাদের সুযোগ আছে।’ এরপর কোচের প্রসঙ্গে আর কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি আগুয়েরো।
একইসঙ্গে ব্যর্থতার দায় নিজের বলেও স্বীকার করেছেন সাম্পাওলি, ‘এটা আংশিক দায়িত্ব নয়, পুরো দায় কোচের। গোলকিপার উইলি কাবায়েরোর সমর্থনেও কথা বলেছেন সাম্পাওয়ালি। তিনি বলেন, ‘তাকে (গোলরক্ষক) দোষ দিয়ে লাভ নেই। যদি আমি ভিন্ন কিছুর পরিকল্পনা করতাম, তবে ভিন্ন কিছুই হতো। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তেমন কিছু করার আগেই গোল খেয়ে দল মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আমাদের মূল চালিকা শক্তি লিও। কিন্তু দল তার কাছে বল পৌঁছাতে পারেনি। বলা যায় প্রতিপক্ষ তার কাছে পৌঁছাতে দেয়নি। তিনি বলেন, ‘এটা (পরাজয়) দেশ ও দলের জন্য লজ্জা ও কষ্টের। এটা আর্জেন্টিনার মানুষ আশা করেনি। দেশের হয়ে আমি এটা অনেক বছর থেকেই অনুভব করছি, আবারও তেমন কিছুই হতে যাচ্ছে। এটা আসলেই কষ্ট দেয়। দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারি না। আর্জেন্টিনার ভক্তদের খুশি করার পরিকল্পনা নিয়েই রাশিয়ায় এসেছিলাম। আমি আমার সামর্থ্যরে সবটুকুই দিয়েছি।’
সাম্পাওলি অবশ্য নাইজেরিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে কোচ হিসেবে থাকবেন কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। ম্যাচ শেষে নাকি দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে তারা সাম্পাওলির অধীনে আর খেলতে চান না। অন্যথায় তারা অবসরে চলে যাবে। টুইটারে জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকজন ফুটবল সাংবাদিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।