২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতই বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রচুর এবং দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। এতে বিপুল সংখ্যক শারিরীক ভাবে কর্মক্ষম মানুষ সল্প মেয়াদে, র্দীঘ মেয়াদে এবং এর ধারাবাহিকতায় স্থায়ীভাবে কর্মকক্ষমতা হারাচ্ছে। উচ্চ রক্ত চাপ ও ডায়াবেটিস- এ দুয়ে মিলে এ ঝুঁকি আরও বাড়াতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্ত চাপ থাকার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। কারও কারও ডায়াবেটিস সনাক্ত হবার আগে থেকেই উচ্চ রক্ত চাপ থকতে পারে। তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সাধারনত ডায়াবেটিস সনাক্ত হবার পরে উচ্চ রক্ত চাপ ধরা পড়ে আর তা ডায়াবেটিসের জটিলতাও হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর উচ্চ রক্ত চাপে আক্রান্ত হবার হার রোগীর কত দিনের ডায়াবেটিস, তার বয়স, লিঙ্গ, দৈহিক স্থুলতা, রোগের পারিবারিক ইতিহাস, শারিরীক শ্রম, খাদ্যাভ্যাস ( বিশেষত লবন খাওয়া ) অন্যান্য সংশ্লিষ্ট রোগের উপস্থিতি, বর্ণ, ওষুধ সেবন ইত্যাদির উপর নির্ভশীল। বস্তুত যারা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্ত চাপ দুটিতেই আক্রান্ত তাদের হ্্রদরোগ, স্ট্্েরাক হবার ঝুঁকি বেশি থাকে; কিডনী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া, চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া এবং সর্বোপরি মৃত্যুর ঝুঁকি বেডে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। বিপুল সংখ্যক ডায়াবেটিস রোগী এ দল ভুক্ত। এখানে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য উচ্চ রক্ত চাপ বলতে ≥ ১৪০/৯০ মি.মি পারদ। এখন প্রশ্ন হলো- ডায়াবেটিস ও হ্রদরোগ পরস্পর সম্পর্কিত কোন সমস্যা নাকি সতন্ত্র স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীর উচ্চ রক্ত চাপ একটি আলাদা শারিরীক সমস্যা। বিশেষত যারা উচ্চ রক্ত চাপ থাকা অবস্থাতেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। ২০০৮ সনের এক গবেষনায় দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রর ২০ বছরের বেশি বয়সি ডায়াবেটিস রোগীর ৭৩ শতাংশই উচ্চ রক্ত চাপেও ভূগছিল। বাংলাদেশি ডায়াবেটিস রোগীদের মাঝে উচ্চ রক্ত চাপে ভোগার হার সুনিশ্চত ভাবে জানা না গেলেও এটি যে অনেক বেশি হবে তা অনুমান করা যায়।
ডায়াবেটিস শরীরের সকল অংশেই হানা দেয়। এতে স্বল্পস্থায়ী এবং দীর্ঘ মেয়াদী বিভিন্ন রকম ক্ষতি সাধিত হতে থাকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হ্রদপিন্ড ও রক্ত নালী সহ রক্ত সংবহনতন্ত্রের সকল অংশ। রক্ত নালীর দেয়ালের ইলাস্টিসিটি হ্রাস পেতে থাকে। এতে হ্রদরোগের ঝুঁকি যেমন বাড়ে তেমনি উচ্চ রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডায়াবেটিস না থাকলে এ ঝুঁকি অনেক কম থাকতে পারত। ডায়াবেটিস রোগীর মস্তিষ্ক, হ্রদপিন্ড, বৃক্ক, রেটিনা, প্রজনন তন্ত্র, ত্বক অতি ঝুঁকি প্রবণ এলাকা। যেসব মহিলা ডায়াবেটিস নিয়েই গর্ভধারন করেন অথবা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্ত চাপ বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ও প্রসূতিবিদ যেমন খুবই সতর্কতার সাথে এগুতে চান: তেমনি গর্ভবতী ও তার পরিবারকেও গভীর ভাবে অনুধাবন করে চিকিৎসায় অংশগ্রহণ করতে হবে। কেননা, এই সকল গর্ভবতী নারীর প্রি-একলামশিয়া ও একলামশিয়া নামক মারাতœক গর্ভকালীন জটিলতায় ভোগার ঝুঁকি অনেক বেশি।
উচ্চ রক্ত চাপ প্রধানত একটি লক্ষণ বিহিন স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই অন্য মানুষদের মতই ডায়াবেটিসেও রক্ত চাপ মেপে তা সনাক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যাদের রক্ত চাপ স্বাভাবিক থাকছে তাদেরও বছরে কমপক্ষে চার বার আদর্শ পদ্ধতিতে রক্ত চাপ মেপে তিনি উচ্চ রক্ত চাপে ভোগছেন কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি সিদ্ধান্ত না নেওয়া যায় পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতি দিনের বিভিন্ন সময়ের রক্ত চাপের গড় হিসেব করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। আর ডায়াবেটিসের রোগীরা যখন নিয়মিত ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের কাছে যান তখন তিনি সকল ডায়াবেটিসের রোগীকেই রক্ত চাপ মেপে রোগ সনাক্ত করণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
ডায়াবেটিস এখন মহামারি আকারে বিরাজ করছে। উচ্চ রক্ত চাপ পৃথিবী ব্যাপী একটি নীরব ঘাতক এবং দুটোই বর্তমানের চেয়ে রোগীর জন্য ভবিশ্যতে বেশি ঝুঁকি তৈরি করে। অতএব, রোগীর চিকিৎসা তো করতে হবেই বরং রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যতটা বেশি উদ্যোগ নেওয়া যায় ততটা লাভজনক হবে। ডায়াবেটিসের সকল রোগীর সকল অবস্থাতেই প্রথম ও প্রধানতম কাজ হল- কাঙ্খিত মাত্রায় রক্তের গøুকোজ নিয়ন্ত্রন। যদিও এটি রোগীভেদে বিভিন্ন রকম হবে। আর উচ্চ রক্ত চাপকে বিবেচনায় নিয়ে নিন্মোক্ত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে হবে:
ক. নিয়মিত রক্ত চাপের রের্কড সংগ্রহ করুন
খ. উচ্চ রক্ত চাপ থাকলে তার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করুন
গ. যাদের এখনও রক্ত চাপ স্বাভাবিক আছে সে সমস্ত ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য বিপুল আনন্দের বার্তা হল- সতর্কতার সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ( প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ )গ্রহণ করলে আপনি দীর্ঘ দিন রক্ত চাপ স্বাভাবিক রাখতে সমর্থ হবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।