Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘খুুন’ আতঙ্কে চট্টগ্রামবাসী

অপরাধীদের ধরতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম


রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে অব্যাহত খুনোখুনি এবং খুনিরা অধরা থেকে যাওয়ায় জনমনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক বাড়ছে। খুনি অপরাধীদের ধরতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। নগরীতে ঈদের আগে পরে চার দিনে চারটি লোমহর্ষক খুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুটি খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ১০ কিশোরসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হলেও অন্য আসামীরা এখনও ধরা পড়েনি। খুনিচক্রের বেশিরভাগ সদস্য এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। চলতি বছরের পাঁচ মাসে নগরীতে ৩২টি খুনের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম জেলাসহ রেঞ্জের এগার জেলায় খুনের ঘটনা রের্কড হয়েছে ২৮৭টি। এসব খুনের সাথে জড়িতদের অনেকে এখনও ধরা পড়েনি। খুনিরা ধরা না পড়ায় মামলার তদন্তে গতি আসছে না। রাজনৈতিক হত্যাকাÐের তদন্ত চলে যাচ্ছে হিমাগারে। তবে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, খুনিদের গ্রেফতারে পুলিশের চেষ্টার কোন কমতি নেই। ইতোমধ্যে দুটি খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ১৩ জনকে ধরা হয়েছে। কিছুটা সময় লাগলেও খুনিরা ধরা পড়বে। খুনের মতো ভয়ানক অপরাধ করে কেউ পালিয়ে থাকতে পারবে না।
হঠাৎ করেই নগরীতে খুনের ঘটনা বেড়ে যায়। ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে চার দিনে পতেঙ্গা, হালিশহর, বাকলিয়া ও চকবাজার থানায় চারটি হত্যাকাÐ ঘটে। ঈদের পরদিন রোববার রাতে চট্টেশ্বরীর মোড়ে পল্টন রোডে পিতার সামনে খুন করা হয় এম আর অনিক নামে এক যুবলীগ কর্মীকে। নিহত অনিকের বাবা মোঃ নাছির বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। নিহতের স্বজনেরা বলছেন, তারা সরকার দলীয় লোক হওয়ায় পুলিশ তাদের ধরার সাহস করছে না। আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে। যুবলীগের দুটি গ্রæপের বিরোধে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে বলেও স্থানীয়দের দাবি। খুনের সময় সেখানে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে।
তবে পুলিশ বলছে, খুনের শিকার আর অভিযুক্তরা সবাই সরকার দলীয় হলেও তুচ্ছ ঘটনায় খুন হয়েছে অনিক। চকবাজার থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, অনিকের বাবা ১২ জনকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। তবে এখনও তাদের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। অনিক হত্যা মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রত্যেক আসামির বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের পাশাপাশি স্বজনরাও বাসায় তালা লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আসামিরা সবাই সরকার দলীয় যুব ও ছাত্রসংগঠনের কর্মী।
একই দিন গভীর রাতে নগরীর হালিশহর আর্টিলারি সড়কে বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখে ফেরার পথে খুন হন মোঃ সুমন নামে এক কিশোর। সে স্থানীয় একটি গ্যারেজের কর্মী। পুলিশ জানায়, বন্ধুদের নিয়ে বিডিআর সিনেমা হলে সিনেমা দেখে বাসায় ফেরার পথে একদল যুবক তাদের পথরোধ করে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এসময় ধস্তাধস্তিতে সুমনসহ দুজন ছুরিকাঘাতে আহত হয়। চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সুমনের বড় ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে হালিশহর থানায় একটি মামলা করেছেন।
এই ঘটনায় গতকাল বুধবার সন্দেহভাজন দশ কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে হালিশহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বদরুল কবীর জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত রক্তমাখা একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। বিকেলে সিএমপি সদর দপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযানের বর্ণনা দেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতরা সবাই কিশোর ও উঠতি যুবক। এরা এলাকায় ছিনতাই ও দস্যুতার সাথে জড়িত।
সোমবার রাতে বাকলিয়া এলাকায় পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে খুন হন জসীম নামে এক যুবক। বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বলেন, পাওনা টাকা নিয়ে দুইজনের কথা কাটাকাটির জেরে মোবারক জসীমকে পেটে ছুরিকাঘাত করে। ওসি জানান, জসীম উদ্দিন হত্যার ঘটনায় করা মামলার তিন আসামিকে মঙ্গলবার রাতভর চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- মোহাম্মদ রাজু (২৩), মোহাম্মদ রনি (২১) ও মোহাম্মদ নুরু (২০)। তিনজনই জসীম হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি। এদের বাড়ি কুমিল্লা ও ফেনীতে হলেও নগরীর বাকলিয়া থানাধীন আলী স্টোর এলাকায় থাকতেন। আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, শার্ট ও টাকা দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারে মামলার এক নম্বর আসামি মোবারকের সাথে জসীমের বিরোধের জেরে এ হত্যাকাÐ ঘটেছে এবং ঘটনার সময় তারা সেখানে উপস্থিত ছিল।
এদিকে গত ১৫ জুন বিকালে পতেঙ্গা এলাকায় নয় মাস বয়েসী এক শিশুকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করা হয়। পতেঙ্গা থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, মামলায় বলা হয়েছে, ওইদিন রিপন তার বড় মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া গিয়েছিলেন। সেদিন বিকাল ৫টার দিকে দুই যুবক বাসায় ঢুকে রিপনের স্ত্রীকে ‘জিম্মি করে’ নয় মাস বয়েসী ছোট মেয়েটিকে বাথরুমে নিয়ে বালতির পানিতে চুবিয়ে রাখে। পরে তারা একটি আংটি ও ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। অন্য একটি ড্রয়ারে ৪ লাখ টাকা থাকলেও তারা তা নেয়নি। তিনি বলেন, বাসার গলির মুখে একটি সিসি ক্যামেরা আছে। সেখানে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ছবি থাকলেও অন্য কিছু পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে নগরীর বাকলিয়া ডিসি রোডে আলোচিত যুবলীগ নেতা ফরিদ হত্যা, অভিজাত ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল সানশাইন গ্রামার স্কুলের ছাত্রী তাসফিয়া আমীন হত্যা মামলার এখনও কোন কিনারা হয়নি। ফরিদকে প্রকাশ্যে দিনের আলোতে যারা গুলি করে হত্যা করেছে তাদের কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করেনি। নিহতের পরিবারের অভিযোগ খুনিরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরছে। স্কুল ছাত্রী তাসফিয়া খুনের রহস্যও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস খুনের ঘটনায় জড়িতদের অনেকে এখনও ধরা পড়েনি। সদরঘাট থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাতে নগরীর লালখান বাজার থেকে মোঃ সালাহউদ্দিন নামে এক আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুদীপ্ত হত্যা মামলার বাকি আসামীদেরও গ্রেফতার করা হবে।

 



 

Show all comments
  • Rajuahmed ২১ জুন, ২০১৮, ১:৪০ এএম says : 0
    মন্তব্য R কি করব মন্তব্য করার আগেই তো মুখ বন্ধ করে দেওয়া হল ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ