পবিত্র লাইলাতুল বরাত

আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য বৈষম্য অবশেষে বাণিজ্যযুদ্ধে রূপ নিতে চলেছে। নির্বাচনী প্রচারনার সময়ই ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর অন্তত ৩৫শতাংশ আমদানী শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে বিদ্যমান বাস্তবতায় চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন ধরনের বাণিজ্যদ্বন্দের ফলাফল সম্পর্কে খোদ মার্কিন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাই সন্দিহান। এ ধরনের পদক্ষেপে শেষ পর্যন্ত মার্কিন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এহেন আশঙ্কার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর ২০০বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপের ঘোষনা দিয়ে কার্যত তিনি চীনের সাথে একটি বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিশ্বের প্রথম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিকভাবে এরা পরস্পরের উপর বেশ কার্যকরভাবে নির্ভরশীল। মার্কিন পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যে চীনের সাথেই ৩৩৭ বিলিয়ন ডলার। যতই দিন যাচ্ছে চীন-মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলেছে এবং সঙ্গতকারণেই তা চীনের অনুকুলে। একদিকে লোকসানের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ধস নেমেছে অন্যদিকে সাধ্যের মধ্যে কমমূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য পেতে চীনা কোম্পানীর দিকেই ঝুঁকে পড়েছেন মার্কিন ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এ ধরনের বাস্তবতাকে আবেগ বা একতরফা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গৃহিত পদক্ষেপগুলো বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে কোন কোন বাণিজ্যবিশ্লেষক মনে করছেন। মার্কিন আমদানীকারকরা ২০১৭ সালে চীনা কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে ৫২৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানী করেছিল,পক্ষান্তরে মার্কিন কোম্পানীর কাছ থেকে চীনা কোম্পানীর আমদানীর পরিমান ছিল ১৮৬ বিলিয়ন ডলার। এ হিসেবে চীন হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম রফতানীবাজার। চীনা পণ্যের উপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা আগেই ঘোষণা করেছিল চীন। এখন মার্কিন পেট্টোলিয়াম, কৃষি ও প্রযুক্তি পণ্যের উপর চীনের পক্ষ থেকে অনুরূপ শুল্ক আরোপের ঘোষনা দিয়েছে। এর ফলে মার্কিন কৃষি এবং হাইটেক কোম্পানীগুলো নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চীনের এ ধরনের পাল্টা ঘোষনার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরীহ কৃষকদের উপর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে। এভাবে চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সূচিত বাণিজ্যযুদ্ধ তার নিজের জন্য বুমেরাং হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ‘আমেরিকা ফার্ষ্ট’ নীতি গ্রহণের নামে প্রথমেই টিপিপি চুক্তি থেকে সরে দাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে কোন কাজে আসেনি। চলতি অর্থবছরে গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বাণিজ্যঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
চীন-মার্কিন বাণিজ্যদ্ব›দ্ব বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রভাব সৃষ্টি করবে। মার্কিন ট্রেড ডিফিসিট নিরসনে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু চীনকেই টার্গেট করেননি, তার বাণিজ্য নীতি ইতিমধ্যে চীন,ভারতসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথেও ব্যাপক মতভেদ তৈরী করেছে। বিশেষত স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর বাড়তি কর বসানোর প্রেক্ষাপটে চীনের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও ভারতের মত বন্ধুরাষ্ট্রও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একা হয়ে পড়তে দেখা গেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একপাক্ষিক শুল্কায়ণ এবং প্রধান বাণিজ্যিক শক্তিগুলোর পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বাণিজ্য কমে গিয়ে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান তথা বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে চীন-ভারতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের ঝুঁকি ও সম্ভাবনার দিকগুলো আগেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে। বিবদমান দেশগুলোর পণ্য আমদানীর বিকল্প বাজার হিসেবে বাংলাদেশ নিজের সক্ষমতা ও সম্ভাবনা কতটা কাজে লাগাতে পারে তার উপর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অনেকাংশে নির্ভর করছে। পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যযুদ্ধে রূপ নিলে আমাদের গার্মেন্টস খাতসহ রফতানীমুখী খাতসমুহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য বিকল্প বাজার অনুসন্ধানসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য অর্থ, পরিকল্পনা , পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সংসদীয় কমিটির সমন্বয়ে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। তারা পুরো বিষয়ে বিচারবিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও উদ্যোগ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ভারত ও চীনের সাথে বাণিজ্য বৈষম্য ও ঘাটতি নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পাট, তৈরী পোশাকসহ বাংলাদেশী পণ্যের উপর ভারতের অনৈতিক শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।