পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল মঞ্চের পর্দা উঠে গেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেছে ফুটবল উন্মাদনা। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম সর্বত্রই ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বকাপ জ্বরের উত্তাপ। দেশের কোটি কোটি ফুটবল ভক্ত নাচছেন উন্মাদনায়। খেলছে ৩২টি দল। সারাদেশের ফুটবল প্রেমীরা পছন্দের দলের সমর্থনে গাছের ডালে ঘরের ছাদে পতাকা উড়িয়েছেন। ‘ক্রিকেটে’ সারাবিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি পেলেও ফুটবলে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। বিশ্ব ফুটবলে পিছনের সারিতে থাকলেও ‘সমজদার দর্শক’ হিসেবে বাংলাদেশীদের অবস্থান সামনের কাতারে। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোর তুলনায় তৃতীয় বিশ্বের এই বাংলাদেশে বিশ্বকাপ উত্তেজনা বেশি। ২১১টি দেশের মধ্যে ফিফা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯৪তম। তারপরও বিশ্বকাপ ফুটবল উত্তেজনার পারদ সর্বচ্চো পর্যায়ে। জার্মানী, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগালের হাজারো সমর্থক থাকলেও কালো মানিক খ্যাত পেলের দেশ ব্রাজিল এবং দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে চলছে অন্যরকম উত্তেজনা।
আপনি ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা এই প্রশ্ন এখন সর্বত্রই। বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি, সহকর্মী, সহশিক্ষার্থী, পরিচিত-অপরিচিত যাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত হচ্ছে প্রথমেই জিজ্ঞাস করছেন আপনি ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা? নিজের সমর্থনের সঙ্গে মিলে গেলে বাড়তি আদর-আপ্যায়ন। খেলা শুরুর আগ থেকেই খেলা নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তি-তর্ক-বিতর্ক আর গল্প? কে সেরা? আর্জেন্টিনা, না ব্রিাজিল? স্পেন না জার্মানী? পর্তুগাল না স্বাগতিক রাশিয়া? মেসি, রোনালদো, নেইমারের ছবিসম্বলিত গেঞ্জি গায়ে মিটিং মিছিল ও শো-ডাইন হচ্ছে। অবাক বিষ্ময়ে কেউ উচ্চারণ করছেন ‘আহা এবার ইতালি নেই!’ জমে উঠেছে যুক্তি-তর্ক আর গল্প?
এরশাদের শাসনামলে মূলত ঢাকার ক্লাব মহামেডান ও আবাহনী দেশের দর্শকদের কাছে ফুটবল জনপ্রিয় করে তোলে। সে সময় বিদেশ থেকে খেলোয়ার এনে দেশের দুই বড় ক্লাব হৈচৈ ফেলে দেয়। দুই ক্লাবের খেলা মানে বাড়তি উত্তেজনা; সংঘাত-সংঘর্ষ লেগে যেত সমর্থকদের মধ্যে। দেশের দর্শকরা আবাহনী আর মহামেডান দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। সে সময় ১৯৮৬ সালে প্রথম বিটিভিতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা সরাসরি প্রচার করা হয়। জার্মানী, স্পেন ও ফ্রান্স, ইতালি তখনো ভালো খেললেও ওই সব দেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মতো ‘তারকা’ খেলোয়ার ছিল না। মূলত ছিয়াশি ও নব্বইয়ের বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার ‘ফুটবল যাদু’ বাংলাদেশের দর্শকদের আর্জেন্টিনার সমর্থনে উদ্বুদ্ধ করে। তখন থেকে ম্যারাডোনার সমর্থকরাই ‘আর্জেন্টিনা’ সমর্থন দিয়ে আসছে। এরপরে বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিলের রাজত্ব। দেশটি ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ বিজয়ী হয় শক্তিশালী ইটালিকে পরাজিত করে। ১৯৯৮ সালে ফাইনালে উঠে স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে হেরে গেলেও ২০০২ সালে আবারো বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। বিটিভিতে সরাসরি বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা প্রচারের পর থেকে টানা ৫টি বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ‘দাপুটে খেলা’ দুই দলের পক্ষ্যে বাংলাদেশে তৈরি হয় সমর্থক গোষ্ঠী।
সউদী আরব, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মিশর, পানামা, পেরু, ইরানের মতো দেশ বিশ্বকাপ ফুটবল খেললেও বাংলাদেশ কখনোই বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি। অদূর ভবিষ্যতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে সে চেষ্টাও নেই। অথচ দেশে ফুটবল প্রেমী দর্শক কোটি কোটি। তারা ‘রাশিয়া বিশ্বকাপ’ উপলক্ষ্যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থন প্রায় পাগলামির পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ঢাকার অফিসগুলো এবং পাড়া মহল্লার অলিগলি ঘুরলে চিত্রটি বোঝা যাবে। গ্রামগঞ্জেও একই চিত্র। ফুটবল খেলাকে সমর্থন করে পাগলামী, হিংসা, বিদ্বেষ ছড়ানো এবং আনন্দ-বেদনাও কম হচ্ছে না। এখনো ঘটনা রয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানী, পর্তুগাল এবং বিভিন্ন দেশের সমর্থকরা ওই দেশের সমর্থনে একশ, দুইশ গজ লম্বা পতাকা তৈরি করেছেন। খেলা নিয়ে কোথাও কোথাও বাজি-জুয়াও শুরু হয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জয়নাল আবেদিন টুটুল নিজের ৬ তলা বাড়ি পুরোটাই ব্রাজিলের রঙে রাঙিয়েছেন। এ ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছে। অন্যদিকে বরিশাল সিটির জামাল মিয়ার বাড়ি আর্জেন্টিনা বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কারণ বাড়িটি আর্জেন্টিনার পতাকার আদলে রং করা হয়েছে। এমন হাজারো অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা বা পাগলামি ঘটছে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা নিয়ে। এমনকি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় আর্জেন্টিনার তারকা লিওনেল মেসি ও ব্রাজিলের তারকা নেইমারকে নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে ধারালো ছুরির আঘাতে বাবার মৃত্যু ও ছেলে গুরুতর আহত হয়েছে। আবার ১২ বছর বয়সী এক কিশোর ব্রাজিলের পতাকা রাস্তার পাশের খাম্বায় লাগাতে গিয়ে ইলেকট্রিক শকে প্রাণ হারিয়েছে।
প্রায় ১৬ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থনে বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকদের এই ‘ক্রেজকে’ মর্যাদা দেয়ার পথ কি? বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে ক্রিকেটের মতো ফুটবলের দিকে অধিক নজর দেয়া উচিত। ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে ফুটবল নিয়ে উত্তেজনা ছিল; তখন ক্রিকেট তেমন গুরুত্ব পায়নি। ’৯০ দশকে ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেয়ায় বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ সাফল্য দেখিয়েছে। ফুটবলেও বাংলাদেশ যাতে আগামীতে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। ফুটবল দর্শকদের কথা বিবেচনা করে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সময় এসেছে। ‘আমাদের মেসে ইমদাদ হক ফুটবল খেলোয়াড়/হাতে পায়ে মুখে শত আঘাতের ক্ষতে খ্যাতি লেখা তার’ (পল্লীকবি জসিমউদ্দীন)। ফুটবলে আমাদের দেশ কবে ইমদাদ হকদের জন্ম হবে; বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলবে সে প্রত্যাশা সবার।
স্মারক ডাকটিকেট
বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে চারটি স্মারক ডাক টিকেট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটা কার্ড প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মন্ডলসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যমানের ৪টি ডাকটিকেট, প্রতিটি ৫০ টাকা মূল্যমানের ২টি স্যুভেনির শীট, ১০ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম ও পাঁচ টাকা মূল্যমানের ডাটা কার্ড প্রকাশ করে। এজন্য একটি বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করা হয়। এগুলো বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা জিপিওতে পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে দেশের সকল ডাকঘরে পাওয়া যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।