চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন খান
॥ শেষ কিস্তি ॥
যেমন খ্রিস্টপূর্ব ১৪ শতকে মিশরীয় “অ্যাটোনিসম” মতবাদে সূর্যের উপাসনা চলত। এমনিভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় এবং মেসো-আমেরিকান সংস্কৃতিতে সূর্য পূজারীদেরকে পাওয়া যাবে। ১৯ শতাব্দীর উত্তর-আমেরিকায় কিছু সম্প্রদায় গ্রীষ্মের প্রাক্কালে পালন করত সৌর-নৃত্য এবং এই উৎসব উপলক্ষে পৌত্তলিক প্রকৃতি পূজারীরা তাদের ধর্মীয়-বিশ্বাসের পুনর্ঘোষণা দিত। মানুষের ভক্তি ও ভালবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির প্রতি আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরক বা অংশীদারিত্বে লিপ্ত করানো শয়তানের সুপ্রাচীন “কাসিকাল ট্রিক” বলা চলে। শয়তানের এই কূটচালের বর্ণনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনে তুলে ধরেছেন: “আমি তাকে ও তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয় করেছে” (সূরা আল নামল, ২৭:২৪)
আজকের বাংলা নববর্ষ উদযাপনে গানগেয়ে বৈশাখী সূর্যকে স্বাগত জানানো, আর কুরআনে বর্ণিত প্রাচীন জাতির সূর্যকে সিজদা করা, আর উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের সৌর-নৃত্য এগুলোর মধ্যে চেতনা ও বিশ্বাসগত কোন পার্থক্য নেই, বরং এ সবই স্রষ্টার দিক থেকে মানুষকে অমনোযোগী করে সৃষ্টির আরাধনার প্রতি তার আকর্ষণ জাগিয়ে তোলা শয়তানী উদ্যোগ। বিশ্ব কবি তার ধর্ম বিশ্বাস থেকে তার বৈশাখ কবিতাতে ভৈরব রুদ্র বৈশাখের কাছে মিনতি করে অনেক কিছু চেয়েছেন। সেটা তার ধর্ম বিশ্বাস। কিন্তু এক জন মুসলমান কিভাবে নিজ ধর্ম বিশ্বাসকে এড়িয়ে যেয়ে কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে কিছু চায়?
নর-নারীর অবাধ মেলামেশা : পহেলা বৈশাখ বা অন্য কোনো উপলক্ষে তরুণ-তরুণীরে বেপর্দা ও বেহায়াপনার সুযোগ দিবেন না। অবাধ মেলামেশার সুযোগ দিবেন না। তাদেরকে বুঝান ও নিয়ন্ত্রণ করুন। আপনি মসজিদে নামায আদায় করছেন আর আপনার ছেলে-মেয়ে পহেলা বৈশাখের নামে বেহায়াভাবে শোভাযাত্রা, মিছিল বা উৎসব করে বেড়াচ্ছে। আপনার ছেলে-মেয়ের পাপের জন্য আপনার আমলনামায় গোনাহ জমা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়। অন্য পাপ আর অশ্লীলতার পার্থক্য হলো, যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকে “দাইউস’’ বলে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম করেছেন। মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং দাইউস, যে তার পরিবারের মধ্যে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়”। (মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯)
ব্যবসায়িক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনো স্বার্থে অনেক মুসলিম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলা-মেশা ও বেহায়াপনার পথ খুলে দেয়ার জন্য মিছিল, শোভাযাত্রা, মেলা ইত্যাদির পে অবস্থান নেন। মনে রাখবেন, আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য এরচেয়ে ভয়ঙ্কর আর কিছুই হতে পারে না। দেখা, ছোঁয়া, শোনা ও কথার দ্বারা সংঘটিত যিনাই মূল ব্যভিচার সংঘটিত হওয়াকে বাস্তব রূপ দান করে। তাই জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এমন সকল স্থান থেকে শতহাত দূরে থাকা কর্তব্য, যে সকল স্থানে দেখা, ছোঁয়া, শোনা ও কথার ব্যভিচারের সুযোগকে উন্মুক্ত করা হয়।
হে মুসলিম পহেলা বৈশাখের আচারানুষ্ঠান বিজাতীয় সংস্কৃতি হতে এসেছে জানার পরও শুধুমাত্র সাময়িক আনন্দের আশায় আপনারা কি এটা পালন করবেন? এই অশ্লীল ধর্মাচার আপনার বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক জেনেও কি আপনি স্রোতে গা ভাসিয়ে দেবেন? পুঁজিবাদী বেনিয়াদের ব্যবসায়ের ক্রীড়নক হিসেবে আপনি কি কাজ করবেন? পুঁজিবাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিম তরুণদের পরিচয় ভুলিয়ে দেয়া। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও এর ধারক-বাহক পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদীরা মুসলিমদের ভূমিতে প্রাচীন বিজাতীয় সংস্কৃতিকে নিজেদের সংস্কৃতি হিসেবে দাঁড় করাতে চায়। এইজন্য তারা মিসরবাসিকে অনুপ্রাণিত করে ফেরাউনদের ইতিহাস দ্বারা, অগ্নিপূজারীদের নববর্ষ নওরোজকে উপস্থাপন করে পারস্যের মুসলিমদের সংস্কৃতি হিসেবে। একইভাবে বাংলার মুসলিমদেরকে তারা অনুপ্রাণিত করতে চায় আর্যদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বারা। তাদের এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা পৌত্তলিক সংস্কৃতিকে হাজার বছরের বাঙ্গালিদের সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দিতে চায়। যারা অশ্বত্থ গাছকে বট গাছ বলে চালিয়ে দিতে পারে, তারা কি অন্যের সংস্কৃতিকে আপনার সংস্কৃতি বলে চালাতে পারে না? আপনি কি এইসব জানার পরও তাদের পাঁতা ফাঁদে পা দেবেন? অথচ আপনি হচ্ছেন আবুবকর-উমর, আবু হানিফা-শাহজালালের উত্তরসুরী। আপনি কি একবারও ভেবে দেখবেন না রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে অন্য জাতিকে অনুকরণ করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত” (আবু দাউদ)। হে মুস’আব বিন উমায়ের এর উত্তরসুরী, হে তরুণ-তরুণী! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে মেধা দিয়েছেন, সুন্দর অবয়ব দিয়েছেন। আপনি কি একবারও ভাববেন না কী ক্ষমতা দিয়ে আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, কিসের জন্য আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আপনাকে পালকের মতো ভেসে যাওয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। আপনার রয়েছে ক্ষমতা নিজেকে চেনার, তারুণ্যের নেতৃত্ব গ্রহণ করে সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নেয়ার। তাই আসুন আমরা পহেলা বৈশাখের রঙে রঙ্গিত না হয়ে আমাদের স্রষ্টা আল্লাহর রঙে রঙ্গিত হই।
উপসংহার : পহেলা বৈশাখকে উৎসব দিবসের মর্যাদা দিয়ে সার্বজনীন উৎসবের নামে ইদানিং যা হয়ে থাকে তা আমাদের ঈমান ও ইবাদাতের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ; কুফুর ও শিরকে পরিপূর্ণ। আমরা হিন্দু ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপারে সহনশীল। তারা তাদের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, এতে আমাদের ও আমাদের ধর্মের কোন আপত্তি নেই। তবে আমাদর বক্তব্য হচ্ছে, মুসলমান তরুণ প্রজন্মের জন্য। সার্বজনীনতার নামে, সংস্কৃতির নামে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো হচ্ছে। “আমরা আল্লাহকে রব পেয়ে, ইসলামকে জীবনব্যবস্থা পেয়ে ও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী পেয়ে সন্তুষ্ট।” উৎসবের জন্য ইসলামী শরীয়ত লঙ্ঘিত হয়, পাপাচার ও অপসংস্কৃতি হয় এমন কোন আয়োজনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন থেকে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।