Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কদমতলীর বাপ্পা এখন কোটিপতি

মাদক ব্যবসা-

| প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 বিশেষ সংবাদদাতা : ওরা পাঁচ ভাই। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বাপ্পা, জনি, মোক্তার ও নকিসহ চারজন এবং এক বোন সবাই মাদক ব্যবসায়ী। বাবাসহ এই পরিবারের কারো কোন চাকুরি কিংবা বৈধ আয়ের ব্যবসা নেই। কেউ লেখাপড়াও জানেনা। অথচ সবাই বিত্তশালী। এর মধ্যে বাপ্পা কোটিপতি। জুরাইন এলাকায় তার তিনটি বাড়ি। গুলশান ও ধানমন্ডিতে রয়েছে কয়েকটি আলীশান ফ্ল্যাট। রয়েছে কয়েকটি দামী গাড়ি। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ঘেঁষে কয়েক বিঘা জমি। চলে বিশাল ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায় ঢাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় বাপ্পার নাম রয়েছে ৫ নম্বরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাপ্পাকে এলাকায় খুব একটা দেখা যায় না। অভিজাত এলাকা গুলশানে থাকে সে। যখন এলাকায় আসে তখন তার সাথে থাকে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকার মানুষ তখন আতঙ্কে থাকে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, বাপ্পার ভাই জনি আগে এলাকায় কমবেশি অবস্থান করতো। কিন্তু মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার পর সেও আতœগোপনে চলে গেছে। তবে মাঝে মধ্যে গভীর রাতে এলাকায় আসে। 

বাপ্পার বাবার নাম আবদুল জব্বার। এলাকায় তিনি কানা জব্বার নামে পরিচিত। এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জব্বার ছিলেন এলাকার চিহিৃত ডাকাত। একবার ডাকাতি করতে গিয়ে ধরাও পড়ার পর বিক্ষুদ্ধ জনতা তার একটি চোখ উপড়ে ফেলে। সেই থেকে তার পরিচিতি কানা জব্বার। তিনি রাজধানীর কদমতলী থানাধীন ১৮৯৩/১ পূর্ব জুরাইনের গার্মেন্টস গলির বাসিন্দা। পাঁচ ছেলে এক মেয়ের জনক জব্বার। চোখ না থাকলেও অপরাধ বন্ধ করেননি কখনো। ডাকাতির পর শুরু করেছিলেন ফেন্সিডিল ব্যবসা। স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় এবং সন্ত্রাসী সন্তানদের কারনে তার মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ার সাহস কেউ দেখায়নি। বাবার কাছ থেকেই মাদক সেবন ও বিক্রির কৌশল রপ্ত করে জব্বারের ছেলেরা। তবে বড় ছেলে বাপ্পা ও মেজ ছেলে জনি অল্প দিনেই অপরাধ সামাজ্য গড়ে তোলে। জুরাইনে বাপ্পা এখন আলোচিত ও আতঙ্কের নাম। পূর্ব জুরাইনের টিনসেড যে বাড়িতে জব্বার বসবাস করেন সেটি এখন কানা জব্বার গলি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
এলাকবাসী জানায়, জব্বারের পুরো পরিবারই মাদক কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত। আর এ অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সন্ত্রাসী লালন, থানা পুলিশ ম্যানেজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতাসহ যা কিছু করা দরকার সবই করে বাপ্পা। পূর্ব জুরাইন (গ্যাস পাইপ রোড) ৯৬/১ নং হোল্ডিংয়ে বাপ্পার বাড়ী। এছাড়াও হাজী খোরশেদ আলী সরদার রোডস্থ ১৮৯৭ নম্বর হোল্ডিং-এ রয়েছে টিন সেড বাড়ি। গুলশান, বারিধারা ও ধানমন্ডিতে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। স্থানীয়রা জানায়, বাপ্পা নিজের নাম ঠিকানাও লিখতে পারেনা। কিন্তু অবৈধ মাদকের টাকায় কোটি কোটি টাকার মালিক। তার উপদেষ্টা ও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে রয়েছেন বেশ কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাপ্পার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৩টি অস্ত্র ও ৩টি মাদকসহ ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। মাদকের ব্যবসা করতে গিয়েই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে বাপ্পা। অভিযোগ রয়েছে, মাদকসহ তাকে ধরিয়ে দেয়ায় খেসারত হিসেবে জীবন দিতে হয়েছে জুরাইনের ড্যান্স মাস্টার এলিন হোসেন রানাকে। রানা হত্যা মামলার অন্যতম আসামী বাপ্পা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানায়, স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই বাপ্পা মাদক ব্যবসাসহ সকল অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু কখনোই বেশিদিন জেলে থাকতে হয়নি তাকে। নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী ও বিশ^স্ত সিন্ডিকেট, ক্ষমতাসীনদলের প্রভাবশালী নেতা, থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলেছে বাপ্পার মাদক ব্যবসা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কদমতলী থানা এলাকার মাদকের শতাধিক স্পটের রয়েছে। এর মধ্যে ২০টির উপরে রয়েছে পাইকারি স্পট। নামা শ্যামপুরের বটতলার সবচেয়ে বড় স্পটের নিয়ন্ত্রক ছিল কুখ্যাত বিল্লাল ডাকাত। শ্যামপুর বড়ইতলায় লিটন, জালাল, বন্দুক সেলিম ও ফারুক, কমিশনার রোড, চেয়ারম্যান বাড়ি, কলেজ রোড, রহমতবাগ ও নবীনবাগের স্পট নিয়ন্ত্রণ করে আবু, চানু, আমীর, কাউসার সুমন ও গনি। জুরাইনের আলমবাগে রয়েছে আউয়ালের প্যাথেডিন স্পট। রায়েরবাগ এলাকায় রয়েছে গেসু, সুমন, মামুন, রাজন, বাহার, মোশাররফ ও খোকার স্পট। পাটেরবাগ খালপাড়ে রয়েছে জামাল, মানিক, সুমন ও ফিরোজের স্পট। গীত-সংগীত সিনেমা হলের পেছনে ও ডিপটির গলিসহ ওই এলাকার মাদক স্পট চালায় চোরা বাবুল, শহীদ, খবুর, সুজন, পিচ্চি সুমন, চাকমা মামুন, পাপ্পু, জাভেদ, সোহেল, সান্টু, পিন্টু ও বাপ্পি। এ ছাড়া কদমতলীর বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে ফারুক, ছ্যাচরা রিপন, রোলেক্স, বিধান, ভেলু রিপন, মুরাদ, সাইফুল, ট্যাপলা আলম, মনা, লম্বা সাগর, আদম রাসেল, ঠেউয়া সুমন, কাউয়া রাজন, জিতু, ও হানিফের স্পট র‌্যাব-পুলিশের তালিকায় রয়েছে। তবে এসব স্পটের অনেকগুলোই সরাসরি নিয়ন্ত্রনে করে বাপ্পা বাহিনী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলেও বাপ্পাসহ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের কেউই গ্রেফতার হয়নি। মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী বাপ্পা এলাকায় নানা অপরাধ করে বেড়ালেও সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে। অনেকেই বলেছেন, নিজের অপরাধ আড়াল করতে কদমতলী থানায় প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিতো বাপ্পা। এ প্রসঙ্গে কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিল বলেন, বাপ্পার পুরো পরিবারই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন আগে হেরোইনসহ তার বোন ও দুলাভাই শাহজাহানকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তারা বর্তমানে কারাগারে। বাপ্পার এক ভাইও আছে কারাগারে। ওসি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কাউকেও ছাড় দেয়া হবে না। একদিন সকলেই ধরা পড়বে। ###

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ