Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছ্ইায়ের মাঝে প্রাণ ফেরানোর লড়াই

ময়মনসিংহ হকার্স মার্কেট

| প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ঈদকে সামনে রেখে প্রাণ ফিরে এসেছে সারা দেশের ঈদ বাজারে। ক্রেতা বিক্রেতার দরকষাকষিতে বাজার সরগরম থাকলেও ব্যাতিক্রম ময়মনসিংহের হকার্স মার্কেট। প্রতি বছর এসময় মার্কেটিতে বিক্রেতারা ক্রেতাদের চাহিদা মত পণ্য সংগ্রহ-বিক্রি করা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও তারা এখন পরিস্কার করছে মালামালের ধ্বংসস্তুপ। হিসাব করছে ক্ষতির পরিমাণ। বুকে তাদের অজানা শঙ্কা। মাথায় কড়া সুদে ঋণের বোঝা আর কপালে চিন্তার ভাঁজ। যদিও জেলা প্রশাসন থেকে ঈদের আগেই ব্যবসায়ীদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়াসহ পুনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা গাঙ্গিনাপাড় হকার্স মার্কেটের বড় বাজার এলাকার বাসিন্দা বিপু মোহন্ত তার ছোট ভাই বিকাশ মোহন্তকে সঙ্গে নিয়ে হকার্স মার্কেটে জুয়েলারি ব্যবসা করেন। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দোকানে রক্ষিত ২০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার। এর মধ্যে গ্রাহকের অর্ডার দেওয়া স্বর্ণালংকারও রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে বিপু গাঙ্গিনারপাড় ব্যবসায়ী সমিতি থেকে ৩ লাখ টাকা সুদে ধার নিয়েছিলেন। প্রতিদিন তাকে এ বাবদ গুনতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। দোকানের সব মালামাল পুড়ে যাওয়ায় এখন কীভাবে দোকান দাঁড় করাবেন আর ঋণ পরিশোধ করবেন এ নিয়ে চিন্তিত বিপু। তিনি জানান, ‘দোকান পুড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে গ্রাহকরা ছুটে আসছেন তাদের অর্ডার দেওয়া স্বর্ণালংকারের খোঁজ নিতে। অর্ডারের কী করবো জানি না, এখন কীভাবে সংসার চলবে আর ধারকর্জ কীভাবে পরিশোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না।’
কথা হয় টেইলার্সের দোকানের দর্জি শহীদুলের সাথে। চোখে মুখে হাতাশা নিয়ে তিনি জানান, ক্যাশের ভেতর কয়েক লাখ টাকাও ছিলো। একটি টাকাও সাথে নিয়া যাইতে পারে নাই। গ্রাহকদের অনেক কাপড় ছিল, সব পুড়ে শেষ তাদের কি জবাব দিবো জানি না। আগুন আমাদের কপালটাই পুড়াইয়া দিলো। অহন আমরা কী লইয়া বাঁচমু।
শুধু নাদিম, বা শহীদুলই নন, একই অবস্থা মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও। সবাই দিশেহারা, ঘুরে দাঁড়ানোর চিন্তায়। সবার চাওয়া আবারো প্রাণ ফিরে আসুক হর্কাস মাকের্টে।
ব্যবসায়ীর বাইরে যারা এই বাণিজ্যিক মার্কেটে বিনিয়োগকারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কীভাবে টাকা তুলে আনবেন এমন অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিনিয়োগকারী জানান, হকার্স মার্কেটে ১০ জন ব্যবসায়ীর কাছে তার ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগকৃত টাকা থেকে প্রতি মাসে যা লাভ আসে তাই দিয়ে তার সংসার চলে। এখন সেই টাকা নিয়েও অনিশ্চয়তায় আছেন তিনি।
তবে ঈদের আগেই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে মার্কেটের ঘর নির্মাণসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
এদিকে গত শুক্রবার থেকেই ময়মনসিংহ পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পুড়ে যাওয়া মালামাল সরানোর কাজ শুরু করেছেন। এ কাজে সহায়তা করছেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা। উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার ভোরে ময়মনসিংহের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে গাঙিনাপাড় হকার্স মার্কেটের ১৪৭ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রাথমিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকার ওপরে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ