পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : মিয়ানমার থেকে ট্রলারে মাছের নিচে ১৩ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের চালান নিয়ে আসার পর মূল হোতা আশরাফ আলী গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। গত ৩ মে রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর শ্যামলী আবাসিক এলাকায় অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে ইয়াবার চালানসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফ স্বীকার করেন, ঢাকা থেকে বিমানে ইয়াঙ্গুন যান। সেখান থেকে ট্রলার ভাড়া করে মাছের নিচে ইয়াবার চালান লুকিয়ে সাগর পথে চট্টগ্রাম আসেন। পুলিশ বলছে, ইয়াবা পাচার করে মাত্র কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক আশরাফ মাদকের একজন শীর্ষস্থানীয় গডফাদার। ইয়াবা আড়াল করতে এরাকায় নিজেকে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। আশরাফের মতো অনেকে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসে। সাগর, পাহাড় আর সড়ক পথে নিয়ে আসা ইয়াবা ছড়িয়ে দেয়া হয় সারা দেশে।
ইয়াবা ছাড়াও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকার মাদক সিন্ডিকেট ভারতীয় ফেনসিডিল, পাহাড়ে তৈরী দেশি মদ, গাঁজা আর বিদেশি জাহাজে আসা মদের বড় বড় চালান ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়। র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা তালিকায় তারা শীর্ষ ইয়াবা বা মাদক গডফাদার হিসাবে পরিচিত। তবে দেশে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত সরাসরি মাদক পাচারের সাথে যুক্ত এমন গডফাদারদের কেউই ধরা পড়েনি। ফলে উন্মুক্তই রয়ে গেছে মাদকের উৎস।
মাদকবিরোধী অভিযানে গত সোমবার পর্যন্ত ১৩১ নিহত হয়েছে। র্যাব ও পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে চট্টগ্রামে ৫ জন নিহত হয়। কিন্তু নিহত ১৩১ জনের মধ্যে শীর্ষ মাদক পাচারকারি কেউ নেই। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলের কোন গডফাদারের গায়ে এখনও আঁছড় লাগেনি। সীমান্ত পথে মাদকের চালান নিয়ে আসার সাথে জড়িতরা আড়ালে থেকে যাওয়ায় পাচার বন্ধ হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, মাদক বিক্রেতাদের ঘিরে অভিযানের মধ্যেই রুট বদল করে ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে শীর্ষ পাচারকারীরা। কক্সবাজার বা চট্টগ্রামের পরিবর্তে বর্তমানে মিয়ানমার থেকে সাগর পথে ইয়াবার চালান বরিশাল ও নারায়ণগঞ্জ হয়ে পাচার হচ্ছে।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাদক বিশেষ করে ইয়াবার ছোবল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ইয়াবার হোম ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। যুবকদের আড্ডায় ও বিভিন্ন ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা। বরিশাল কলোনীসহ নগরীর অসংখ্য স্পটে বসছে মাদকের হাট। মাদকাসক্তের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। মাদকসেবিদের কারণে পরিবার ও সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে কিশোর-কিশোরীরাও আসক্ত হয়ে পড়ছে।
দেশে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। এই দুটোই আসে প্রতিবেশি দুটি দেশ থেকে। গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে সাগর, পাহাড় ও সড়ক পথে ইয়াবার চালান আসছে। এক সময় নেশার এ রঙিন ট্যাবলেট ধনাঢ্য পরিবারের বখে যাওয়া সন্তানদের কাছে লোভনীয় ছিল। কিন্তু সহজলভ্য হওয়ায় গ্রামেও মিলছে ইয়াবা এবং বড়ছে আসক্তের সংখ্যা।
বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমার সীমান্তে ছোট-বড় কয়েকশ ইয়াবার কারখানা গড়ে উঠেছে। উৎপাদিত ইয়াবার পুরোটাই বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সম্মেলনে একাধিকবার ইয়াবার কারখানা বন্ধ করার অনুরোধ করা হলেও সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। বন্ধ হয়নি ইয়াবার উৎপাদন ও পাচার। রাজনৈতিক দলের সীমান্তবর্তী এলাকার নেতা ও ক্যাডার এবং কতিপয় অসাধু পুলিশের সমন্বয়ে ইয়াবার চালান পাচার হচ্ছে। এছাড়া পার্বত্য জেলা থেকে গাঁজা ও মদ এবং বিদেশী জাহাজে আসা মাদকের চালান আর ভারত থেকে সীমান্ত পথে ফেনসিডিল আসছে।
চলমান অভিযানের মুখে মাদকের গড ফাদাররা কৌশল পাল্টেছে, কিন্তু বন্ধ করেনি পাচার। র্যাব-৭ চট্টগ্রামের একজন কর্মকর্তা জানান, যাদের তালিকা নিয়ে অভিযান শুরু হয়েছিলো তাদের অনেকে হাওয়া হয়ে গেছে। র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহমদ সম্প্রতি ইনকিলাবকে বলেছেন, অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। কেউ পালিয়ে থাকলেও তা সাময়িক। চলমান অভিযানে মানুষের সমর্থন রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাচাকারী আর গডফাদার কেউই রেহাই পাবে না।
মাদকের উৎস মুখ বন্ধ না করলে অভিযানে সফলতা আসবে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. ইকবাল বাহার। গত শনিবার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার এক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘চরণ ঢাকব, না ধরণী ঢাকব’। এখন যেখান থেকে উৎস, সেই উৎস মুখ যদি বন্ধ না হয়, তাহলে মাদককে নির্মূল করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। কারণ ১০টি জায়গা দিয়ে হয়ত এই মাদকটি আসে। এটি ১০ হাজার বা ৫০ হাজার জায়গায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। ৫০ হাজার জায়গায় ৫০ হাজার মানুষকে আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত দুরূহ। এ কারণে আমরা উৎস মুখটাকে যদি বন্ধ করতে পারি, তাহলে কিন্তু মাদককে নির্মূল করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।