Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকার চারনদী ও ৪৩ খাল উদ্ধারের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দিন

পানিবদ্ধতা বিষয়ক সেমিনারে বক্তাদের আহবান

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : খাল, জলাধার ও নিম্নাঞ্চল দখল ও ভরাটের কারণে ঢাকা শহরে পানিবদ্ধতা হচ্ছে। প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশনের নালাগুলোতে প্রভাবশালী মহলের দখলদারিত্ব চলছে। এসব দখলমুক্ত করা এতই কঠিন হয়ে পড়েছে যে, একটি খাল উদ্ধার করতে গেলে সরকার পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এজন্য এখন ঢাকাকে পানিবদ্ধতামুক্ত করতে হলে ঢাকার চারপাশের নদী ও বিদ্যমান ৪৩টি খালসহ একটি প্রকল্প করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসনে প্রতিবন্ধকতা ও উত্তোরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম-বাংলাদেশের (সিডিজেএফবি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন-প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, এমপি বলেন, দেশের অর্থনীতিসহ সকল কিছু ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। কিন্তু, এটা হতে পারে না। গাইবান্ধা থেকে লোক এসে ঢাকার শিল্পকলকারখানায় কাজ করবে, এটা সঠিক না। তাদের জন্য সেখানেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকাকেন্দ্রিক সবকিছু করার এই সংস্কৃতি থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকার পানিবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের জন্য চারপাশের নদী ও খালগুলোকে দখলমুক্ত করে নাব্যতা ও পানি ধারণের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। জানি, এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। একটি খাল উদ্ধার করতে গেলে সরকারও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। কেননা, অত্যন্ত প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে খালগুলো। এজন্য ঢাকার চারপাশের নদী ও খালগুলোকে প্রবহমান করতে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ জামাল মোস্তফা বলেন, ঢাকা শহরের পানি কোথায় সরাবো? বুড়িগঙ্গার তলদেশে ময়লা-আর্বজনা। আমার জীবনে কখনো দেখিনি এই নদী ড্রেজিং করতে। তুরাগ, বালু নদী দখলদারদের কবলে। ৭০-৭৫টি খাল ছিল, অথচ এখন ৪৩টির চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোও দখলদার কবলে। নানামুখি উদ্যোগ নিয়েও সেবাসংস্থাগুলো এসব খাল দখলমুক্ত করতে পারছে না। এ সমস্যার জন্য ঢাকার চারপাশের নদী ও ৪৩ খালকে একটি প্রকল্পের আওতায় এনে ড্রেজিং করে প্রবহমান করতে হবে। প্রভাবশালী দখলদারদের খাল থেকে হঠাতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এসময় তিনি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মিরপুরের সরকারি কর্মচারীদের আবাসন প্রকল্প ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভাষাণটেক প্রকল্পের নামে জলাশয় ভরাট করার তীব্র সমালোচনা করেন। ওই জলাশয় ভরাট বন্ধে উচ্চ আদালত ও প্রধানন্ত্রীর নিশেধাজ্ঞা থাকলেও সেসব তারা থোড়ায় কেয়ার করছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা-সিপের নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল হক চৌধুরী বলেন, ঢাকাকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়ন কাজ হওয়াতে ঢাকামুখি মানুষের চাপ বাড়ছে। আর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এই শহরে বসবাস করায়, সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অরলা মারফি বলেন, ঢাকায় এখন ১ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যা। আর এই জনসংখ্যা প্রতিবছর ৪ ভাগ হারে বাড়ছে। ঢাকার সমস্যার লাগাম টেনে ধরার এখনই সময়। দেরিকরলে এই শহরকে বাসযোগ্য রাখা সম্ভব হবে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, নদী ও খালের দখলদারিত্ব দেখভালের দায়িত্ব যাদের, তারা সঠিকভাবে এ দায়িত্ব পালন করছে না। আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। এ কারণে ঢাকাশহরের আশপাশের সকল নিচুভূমি ও জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। এখন ২৬টি খালও সচল নেই। ঢাকার পানিবদ্ধতা নিরসন করতে হলে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীভূত করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, বিগত ৬-৭ বছরে জলবায়ূ পরিবর্তনের ধারায় দেখছি বর্ষাকাল এখন ৬-৭ মাস। যদিও আমরা আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাসকে বর্ষাকাল হিসেবে জানি। অতিবৃষ্টিপাতের কারণে ১৪৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জনবহুল এই শহরের মাত্র ২ হাজার কিলোমিটার নর্দমা দিয়ে এত অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া পৃথিরীর সকল দেশে ড্রেন দিয়ে বৃষ্টির পানি জায়, ময়লা। খালের সিএস, আরএস রেকর্ড ধরে খালের সীমানা চিহ্নিত করে শক্তহাতে খাল উদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভারে ঢাকাশহর তার সক্ষমতা হারিয়েছে। ৭০ লাখের উপরের জনসংখ্যার শহরে বিনিয়োগের আউটপুট কম। তারপরও এই শহরে বড় বড় বিনিয়োগ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েকবছর ধরে উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, মেগা প্রকল্পের দিকে সরকারের আগ্রহ বেশি। কোন প্রকল্পে জনগনের দুর্ভোগ ও পরিবেশকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া যে কোন বাসযোগ্য শহরের জন্য ১২-১৫ ভাগ জলাধার ও ২০-২৫ ভাগ উন্মুক্ত জায়গা থাকা দরকার। কিন্তু এগুলো আমরা ধ্বংস করে ফেলেছি। বিদ্যমান ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সক্ষমতা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৮০-৯০ ভাগ করা গেলে শহরের বিদ্যমান জলাবদ্ধতা থাকার কথা না।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ঢাকা ওয়াসা পানি নিষ্কাশন নর্দমা দিয়ে পয়ঃনিষ্কাশন কাজ করছে। আর কোন ধরনের শোধন ছাড়াই সেসব খাল ও নদীতে ঢেলে দিচ্ছে। এরফলে নগরীর আশপাশের জলাভূমি ও চারনদী দূষিত হচ্ছে। এছাড়াও তিনি, খাল উদ্ধার, খাল খনন, প্রশস্তকরণ এবং ঢাকা শহরের ড্রেনেজ বিভাগের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাতে ন্যাস্ত করার পরামর্শ দেন।
ঢাকা ওয়াসার পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, ঢাকাশহরের ১২-১৫ ভাগ জলাধারের জায়গায় রয়েছে মাত্র ২ ভাগ। এই অবস্থায় পানি নিষ্কাশন কাজ খুবই দূরহ। তবে বিদ্যমান পানিবদ্ধতার সমস্যার সমাধানে ঢাকা ওয়াসা রুটিন কাজের পাশাপাশি মেগা প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছে।
অন্যান্যের মধ্যে সেমিনারের আলোচনায় অংশ নেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর সুরাইয়া বেগম, সিনিয়র সাংবাদিক তৌফিক আলী প্রমুখ। নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম-বাংলাদেশের সভাপতি অমিতোষ পাল সেমিনারের সভাপতিত্ব এবং সাধারণ সম্পাদক মতিন আব্দুল্লাহ সঞ্চলনা করেন। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ