Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদক নির্মূলে ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা জরুরি

সামাজিক আন্দোলনের আহবান প্রধানমন্ত্রীর

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশে যেমন সামাজিক আন্দোলন হয়েছিল। আমরা চাই, ঠিক সেভাবেই মাদকের বিরুদ্ধে আরেকটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠুক। সব অভিভাবক, স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের এ বিষয়ে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে হবে। সরকার প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে চায়। সেখানে প্রযুক্তি থাকবে, জ্ঞানভিত্তিক জাতি হবে এটিই আমাদের লক্ষ্য। গতকাল রোববার দুপুরে গণভবনে থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনাকলে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রাধীন বিআইডাবিøউটিএ ও বিআইডাবিøউটিসি-এর চারটি ১৫৮ টিইইউ সেলফ প্রোপেল্ড মাল্টিপারপাস ইনল্যান্ড কন্টেইনারবাহী জাহাজ, মুন্সিগঞ্জ-গজারিয়া ফেরি সার্ভিস এবং মুন্সিগঞ্জ-পাটুরিয়া ফেরি সার্ভিস চালু ও নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য নতুন চারটি আট ইঞ্চি কাটার সাকশন এম্ফিবিয়ান ড্রেজার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশের নদীপথগুলো কার্যকর করতে চায়। কারণ নদীপথে পরিবহন খরচ অনেক কম। তিনি বলেন, ‘নদীগুলোতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দ্রæত নদীপথগুলো চলাচলের উপযুক্ত করে, সারা দেশে নদীভিত্তিক পরিবহন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাই আমরা।’ এ জন্য নদীভাঙন প্রতিরোধেও পদক্ষেপ জোরদার করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
নদীকে শরীরের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শরীরের কোথাও রক্ত সঞ্চালন পথে বøক হলে মানুষ মরে যায়। নদীপথগুলোও এভাবে বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশ থাকবে না। তাই দেশের নদীপথগুলো যেন আবার চালু হয়, আমরা সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী, ইছামতি- চারটি নদী চলে গেছে মুন্সিগঞ্জের ওপর দিয়ে। এ অঞ্চলের জন্য নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ। তাই ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অল্প খরচে, সহজে নৌপথেপণ্য পরিবহন করা যায়। আলুসহ এখানকার অন্যান্য উৎপাদিত ফসলকে কাজে লাগানোর জন্য যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পদ্মাসেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। নৌপথগুলো আবারও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল করা হলে খুব অল্প খরচে পণ্য পরিবহন করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতা নিজের সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি অতীতের সরকারগুলোর সমালোচনাও করেন। ২০০১ থেকে ২০০৭ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়টি নষ্ট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তখন বাংলাদেশের সব সম্ভাবনা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আমরা আবার ক্ষমতায় আসি। এরপর দেশকে আমরা উন্নয়নশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ব্যবসা করতে আসিনি, দেশ গড়তে এসেছি। ১৯৭৫-এর পর যেসব সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছে। কিন্তু আমরা জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে খুলনা শিপইয়ার্ডকে একসময় বিএনপি সরকার পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিল, আমরা নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি সেটা। আজ সেখান থেকে যুদ্ধজাহাজ পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে। বিএনপি আমলে মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল, আমরা তা আবারও চালু করেছি। সুন্দরবনে যত ক্ষুদ্র খাল ছিল বন্ধ করে সেখানে চিংড়ি চাষ শুরু করে। আমি ক্ষমতায় এসে সেই খালগুলো কাটার নির্দেশ দিই। সেগুলো কাটা এতটা সহজ ছিল না। অনেক চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল, তবুও আমরা করেছি। দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার ধাপে ধাপে বিভিন্ন বাস্তবমুখী প্রকল্প হাতে নিচ্ছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে বলেও জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
‘ঈদের উপহার ধরলা সেতু
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের ধরলা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটের মানুষের জন্য ধরলা সেতুকে ঈদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুর অঞ্চলের মানুষের জন্য এই সেতুটি আমার পক্ষ থেকে ঈদের উপহার হিসেবে নেবেন। এটি আপনাদের ঈদের উপহার হিসেবে দিলাম। আপনারা এই সেতু রক্ষণাবেক্ষণ করবেন, দেখেশুনে রাখবেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর এই সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০৬ কোটি ৮৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ৯৫০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয় ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা ও আন্তরিকতা থাকলে দেশের সমৃদ্ধি সম্ভব। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেছিলাম, পাঁচ বছর চালিয়েছি। ২০১৪ সালে সরকার গঠন করে আবার জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছি বলেই নয় বছরে বাংলাদেশ উন্নতি করতে পেরেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেতুর ফলে এ এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার হবে। মানুষের যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে উঠবে। উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, ‘আজকে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট থেকে শুরু করে আপনাদের রংপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছে সরকার। উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আবার ধরলা-ব্রহ্মপুত্র থেকে শুরু করে দেশের নদীগুলোর ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্ষাকালে যাতে এসব নদী বেশি পানি ধারণ করতে পারে, যাতে বন্যা না হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। একসময় উত্তরবঙ্গে মঙ্গা হতো, এখন সে সমস্যা কেটে গেছে। যে জমিতে একবার ফসল হতো , সেটি দো-ফসলি হয়েছে। খাদ্য ও সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।’
এ সময় ছিটমহল সমস্যা সমাধানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘লালমনিরহাটের প্রত্যেকটা উপজেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। স্বাধীনতার পর পর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সচেষ্ট ছিলেন। পরে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল কিন্তু কেউ ছিটমহল সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেনি। দীর্ঘদিন পর ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পর বাংলাদেশে অনেক সরকার এসেছিল, কিন্তু কোনও সরকার ভারতের কাছে ছিটমহল সমস্যা সমাধানের দাবি জানায়নি। কিন্তু আমরা সে সমস্যার সমাধান করেছি। পৃথিবীর ইতিহাসে এত শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ, যা বিরল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এমনকি নদী বা সাগরে দুর্যোগের সময়ও মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল থাকবে। সবাই প্রয়োজনে নিজেদের অবস্থানের কথা জানাতে পারবেন। এর ফলে প্রযুক্তির প্রসার ঘটবে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে। মানুষকে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তারা ইন্টারনেটে কাজ করে টাকা উপার্জন করছে, এটি আরও বৃদ্ধি পাবে।’
দুই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রাম এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার সুবিধাভোগী জনগণের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথাও বলেন।



 

Show all comments
  • জামান ৪ জুন, ২০১৮, ৫:৪৭ এএম says : 0
    সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Khalid Hasan ৪ জুন, ২০১৮, ৪:০৭ পিএম says : 0
    নেশা দ্রব্য বহন,বিতরন, উৎপাদন,সংরক্ষন,সেবন মৃত্যুযোগ্য অপরাধ আইন ও প্রয়োগ করুন
    Total Reply(0) Reply
  • MD Iman Hossain ৪ জুন, ২০১৮, ৪:১৩ পিএম says : 0
    ঠিক বলেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • MJ Abedin ৪ জুন, ২০১৮, ৪:১৪ পিএম says : 0
    বদিদের আড়ালে রেখে ?????????????
    Total Reply(0) Reply
  • Mehedi Hasan ৪ জুন, ২০১৮, ৪:১৫ পিএম says : 0
    মাদক মুক্ত সমাজ চাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ