পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অব্যাহত গ্যাসের সঙ্কটে চট্টগ্রামবাসীর দুর্ভোগ রোজায় আরও বেড়ে গেছে। দিনে-রাতে অধিকাংশ সময়েই গ্যাসের চাপ থাকছে না। এতে করে বাসাবাড়ি হোটেল-রেস্তোঁরায় রান্নাবান্নায় বিরাজ করছে অচলদশা। রোজাদারদের পোহাতে হচ্ছে নানামুখী ভোগান্তি। গ্যাস সঙ্কটের কারণে বৃহত্তর চট্টগ্রামে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, বন্দরনগরীর বেশিরভাগ জায়গায় দিনভর গ্যাস থাকেনা। মাঝরাতের দিকে আসে অল্পস্বল্প গ্যাসের চাপ। গ্যাসের চাপ কম থাকলে মিটিমিটি চুলা জ্বলে। এ অবস্থায় ইফতারি ও সেহেরির খাবার তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময়েই হোটেল-রেস্তোঁরা, বেকারি থেকে খাবার কিনে আনতে হয়। গ্যাসের সঙ্কট যতই তীব্র হচ্ছে ততই বাড়িঘরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। নগরবাসীর গা-সওয়া হয়ে গেছে গ্যাস সঙ্কট। অনেক বাসাবাড়ির রান্নাঘরে গ্যাসবিহীন বিকল চুলার পাশে জ্বালাতে হচ্ছে এলপি গ্যাস কিংবা কেরোসিনের চুল। গ্যাসের অনিশ্চয়তায় এখন চট্টগ্রামবাসীর কাছে গ্যাস এখন সোনার হরিণ। গ্যাস সঙ্কটের কারণে ঈদুল ফিতরের আগে শিল্পাঞ্চলসমূহে কল-কারখানায় উৎপাদনের চাকা থমকে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দা পরিস্থিতি।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাসের চাহিদা ন্যুনতম সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মিলিয়ন (৫০ কোটি) ঘনফুট। কিন্তু ন্যুনতম চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সাধারণত গড়ে মাত্র ১৮০ থেকে, ২শ’ বা ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট। হিসাবে দেখা যায়, চট্টগ্রামে গত তিন সপ্তাহে চাহিদার বিপরীতে গ্যাসের সরবরাহ মিলছে গড়ে প্রায় অর্ধেক। বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, বিনিয়োগ, নতুন নতুন শিল্পায়ন এবয় আবাসন খাতের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে গ্যাসের চাহিদাও। তবে চাহিদার অনেক নিচে রয়েছে জোগান। অন্তত অর্ধেক গ্যাসের ঘাটতি কবে পূরণ হবে তা অনিশ্চিত।
প্রায় ৬০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত, ১২০ বর্গমাইল আয়তনের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী চট্টগ্রামের সর্বত্রই তীব্র গ্যাস সঙ্কটের ফলে অনেকটা হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্যাস সঙ্কট পুরনো ‘ক্রনিক’ সমস্যায় রূপ নিয়েছে। রোজার আগে থেকে গ্যাসের সঙ্কট হয়েছে আরও তীব্রতর হয়েছে। এতে করে নগরজুড়ে বসতঘর থেকে শুরু করে সবধরনের খাবারের দোকান, বেকারি-কনফেকশনারি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, ফাস্টফুডের দোকান নাকাল অবস্থায় পড়েছে। দেশের প্রধান শিল্পাঞ্চল হিসেবে বৃহত্তর চট্টগ্রামের শত শত বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানা ধুঁকছে গ্যাসের সঙ্কটে।
এদিকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে নিয়োজিত কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ (কেজিডিসিএল) গ্যাস সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে নানামুখী প্রচেষ্টা চালিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাসের ঘাটতি পূরণে আন্তরিক ও সচেষ্ট উল্লেখ করে সূত্র জানায়, এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাসের মাধ্যমে চলমান ঘাটতি নিরসনের সম্ভাবনা রয়েছে। কেজিডিসিএল এ মুহূর্তে এলএনজি সরবরাহের দিকেই তাকিয়ে আছে। অন্যদিকে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ‘এনার্জি হাবে’ এলএনজির (ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) প্রথম আমদানি চালান নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল জাহাজ ভিড়লেও কারিগরি বা যান্ত্রিক সমস্যার কারণে তা পাইপলাইনে সরবরাহ করা যায়নি। এমনকি কবে সরবরাহ শুরু হবে তা এখনও অনিশ্চিত।
এক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে একের পর এক জটিলতা। পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহের তারিখ পিছিয়ে গেছে এ যাবত তিন দফায়। কারিগরি ত্রæটি সারানো সম্ভব হলে আগামী জুন মাসের মধ্যে যেকোন সময় এলএনজি সরবরাহ শুরু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মাতারবাড়ীর কাছে সাগরে অবস্থানরত এলএনজিবাহী জাহাজটি থেকে সমুদ্রের তলদেশে পাইপলাইনে ফুটো দেখা দেয়ায় খালাস ও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সাগর উত্তাল থাকায় ফুটো মেরামত ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া চট্টগ্রামের আনোয়ারা-সীতাকুÐ অংশে জাতীয় গ্রীডলাইন পর্যন্ত নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি। আমেরিকান জ্বালানি কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির ভাসমান টার্মিনালযুক্ত জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’ কাতার থেকে এলএনজির চালান নিয়ে বাংলাদেশে আসার পর প্রথম দফায় ২৫ বা ২৬ এপ্রিল, দ্বিতীয় দফায় ১০ মে এবং সর্বশেষ ২৬ মে পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। চট্টগ্রামে ৫০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাসের অর্ধেক অর্থাৎ ২৫ কোটি ঘনফুট চট্টগ্রামের ঘাটতি আংশিক পূরণের জন্য সরবরাহের টার্গেট রয়েছে। অবশিষ্ট ২৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ হওয়ার কথা জাতীয় গ্রীডে।
এদিকে বর্তমানে চট্টগ্রামে গ্যাসের ঘাটতি তীব্র হওয়ায় কল-কারখানা, বাণিজ্যিক, বিশেষত গার্মেন্টস খাতসহ রফতানিমুখী শিল্প সঙ্কটে পড়েছে। গৃহস্থালী খাতে শোচনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। মহানগরী ও বাইরের সিএনজি স্টেশনগুলো গ্যাস সঙ্কটের কারণে অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকছে। খোলার সময়ে গ্যাস সংগ্রহে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে গ্যাসের নতুন সংযোগ অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সংযোগের অভাবে আবাসন শিল্পখাত মন্দাদশা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, চাহিদার বিপরীতে ন্যুনতম গ্যাস প্রাপ্তি ও গ্যাস সংযোগের অভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রফতানিমুখী গার্মেন্টস, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, আবাসন, স্টীল ও রি-রোলিং মিলসমূহে উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের সম্মুখীন। উদ্যোক্তারা হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন। মূলধনী যন্ত্রপাতি বিনষ্ট, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে। ব্যাংকঋণের বোঝা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।