নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জাহেদ খোকন : ফুটবলের সাড়া জাগানো আসর বিশ্বকাপকে ঘিরে সব সময় সবার মাঝেই থাকে উম্মাদনা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এই উম্মাদনা চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বিশ্বকাপ শুরুর প্রায় মাস খানেক আগে থেকে ফুটবলের মহাযুদ্ধে খেলা প্রিয় দলের জার্সি ও পতাকা সংগ্রহে ধুম পরে যায় সমর্থকদের মাঝে। এই সময়ে দেশের সব ক্রীড়া সামগ্রী বিক্রির দোকানে পতাকা ও জার্সির ক্রেতা ছাড়া অন্য কোন সমাগ্রীর ক্রেতা চোখে পড়ে না। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। রাশিয়া বিশ্বকাপ দ্বোরগোড়ায়। আগামী ১৪ জুন মাঠে গড়াচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২১তম আসর। রাশিয়ার ১১ শহরের ১২টি স্টেডিয়ামে খেলা হবে এবারের বিশ্বকাপের। এ আসরকে ঘিরে পুরো বিশ্বই এখন ভুগছে বিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরে। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই বিশ্বজুড়ে উম্মাদনা চলছে প্রিয় দলের স্তুতিতে। ইতোমধ্যে প্রিয় দল ও খেলোয়াড়ের জার্সি কেনার জন্য নেমে পড়েছেন সমর্থকরা। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ এখন দু’ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে আর্জেন্টিনা তো অন্য ভাগে ব্রাজিল। জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স ও পর্তুগালের সমর্থক ছিটে-ফোটা চোখে পড়লেও জার্সি ও পতাকা কেনার দৌড়ে বাংলাদেশে এগিয়ে আছেন ব্রাজিলের চেয়ে আর্জেন্টিনার সমর্থকরাই।
রাশিয়া বিশ্বকাপকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও চলছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দু’দলের সমর্থকদের ট্রল। নিজেদের মতামত দিতে সেখানে হামলে পড়ছেন অনেক ভক্তরাই। প্রিয় দলের জার্সী এবং পতাকা কিনতে সমর্থকরা ধর্না দিচ্ছেন ক্রীড়া সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোতে। যেখানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিশ্বকাপে অংশ নেয়া জনপ্রিয় দলগুলোর জার্সি ও পতাকা। তবে এই দোকানগুলোতে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জার্সি এবং পতাকাই বেশী চোখে পড়ছে। ক্রেতাদের কেউ প্রিয় ফুটবলারের নামাংকিত জার্সি কিনছেন, তো কেউবা পছন্দের দলের জার্সিতে নিজের নাম লিখিয়ে নিচ্ছেন। এভাবেই নিজেদের ভালো লাগা ও ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলছেন সমর্থকরা। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, চাহিদায় এগিয়ে আর্জেন্টিনার পতাকা ও জার্সি। সমর্থকরা মেসির দলের ক্রীড়া প্রতীকই বেশী কিনে নিচ্ছেন। এরপরই ভক্তদের প্রিয় ব্রাজিলের জার্সি ও পতাকা। বাংলাদেশের কোটি ফুটবল ভক্ত আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ক্রীড়া প্রতীক কেনার পাশাপাশি সংগ্রহ করছেন জার্মানি, স্পেন আর পর্তুগালের জার্সি। এবার ইতালি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ না পাওয়ায় তাদের জার্সির কোন চাহিদা নাই বাংলাদেশ ফুটবল ভক্তদের কাছে। রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ্যর রাস্তার দু’পাশে তাকালে মনে হতে পারে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার কোন শহরের অলিগলি। এখানকার ক্রীড়া সামগ্রি বিক্রির দোকানে দোকানে আর হকারদের হাতে হাতে হলুদ ও আকাশি জার্সিতে সয়লাব। তবে জার্সির মানের ওপরই দামের পার্থক্য নির্ভর করছে। সমর্থকরাও বেছে বেছে কিনে নিচ্ছেন প্রিয় দলের জার্সি-পতাকা। দোকানের পাশপাশি ফুটপাতেও সাজানো রয়েছে পশরা। আছে ভাসমান হকারও। পতাকা বিক্রেতারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাঁশের সঙ্গে রঙবেরঙয়ের পতাকা ঝুলিয়ে। বাঁশের মাথায় সবার ওপরে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। গুলিস্তানের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে এমন অসংখ্য দোকান চোখে পড়েছে যেখানে সাধারণ জামা-কাপড়ের বদলে ওঠানো হয়েছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার জার্সি।
গুলিস্তানস্থ সমবায় টুইন টাওয়ার মার্কেটে বর্তমানে জার্সি বানানোর ধুম লেগেছে। বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিশ্বকাপে খেলা বিভিন্ন দেশের জার্সি। এই মার্কেটের অন্যতম পরিচালক কামাল উদ্দিন খান বলেন, ‘চার বছর পর এমন উপলক্ষ্য ফিরে আসে আমাদের মাঝে। গুলিস্তান স্পোর্টস মার্কেট এবং আমাদের এই মার্কেটে এখন ফুসরত নেওয়ার সুযোগ পায় না কর্মচারীরা। তাদের চোখে ঘুম নেই। দিন-রাত জার্সি ও পতাকা তৈরী কাজেই সময় পাড় করছে তারা। কারিগররা এই মৌসুমটাতেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দোকানের মালিকরাও খুব ব্যস্ত থাকেন বিশ্বকাপের আগে। ক্রেতাদের প্রায় ৬০ ভাগই আর্জেন্টিনার সমর্থক এবং বাকি ৪০ ভাগ ব্রাজিলের সমর্থক হওয়ায় এ দু’দেশের জার্সি ও পতাকাই বেশী বিক্রি হচ্ছে।’ এই মার্কেটের জিদান স্পোর্টসের স্বত্বাধিকারী মো. শহিদুল্লাহ জানান, ‘কোন ফুসরতই পাচ্ছি না আমরা। প্রচুর অর্ডার রয়েছে জাার্সির। সবাই খুব ব্যস্ত জার্সি তৈরীতে। আমার এখানে আর্জেন্টিনার জার্সিই বেশি বিক্রি হচ্ছে। ব্রাজিলের জার্সি বিক্রিও কম নয়। আসলে এই একটি মৌসুমই আমাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।’ গুলিস্তানের আমিন অ্যান্ড কোংয়ের স্বত্বাধিকারী আজিজুর রহমান বলেন, ‘পবিত্র রমজানের আগে আমি দু’দফা জার্সি তুলেছিলাম। সব বিক্রি হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে জার্সির অর্ডার দিয়েছি। তবে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জার্সির চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। তাই আমি ৯৫ ভাগ জার্সির অর্ডার দিয়েছি এই দু’দেশের।’
ভসমান পতাকা বিক্রেতা জসিমউদ্দিন বলেন, ‘আমি প্রতিদিন ১০০টি পতাকা বিক্রি করলে তার মধ্যে ৭০টিই থাকে আর্জেন্টিনার। বাকিগুলো ব্রাজিলের। তবে মাঝে মাঝে জার্মানি ও স্পেনের পতাকাও চান ক্রেতারা। মেসি-নেইমার লেখা জার্সিরও চাহিদা আছে। এক্ষেত্রে আমি গুলিস্তানের বিভিন্ন দোকান থেকে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জার্সি সংগ্রহ করে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি।’
গুলিস্তানের সমবায় টুইন টাওয়ার মার্কেটে আর্জেন্টিনার জার্সি কিনতে আসা ঢাকার চাঁনখারপুলের হাসান সোহেল বলেন, ‘ছেলেবেলা থেকেই ম্যারাডোনার নাম শুনে আসছি। কিন্তু তার খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। ম্যারাডোনার খেলা না দেখলেও তার প্রতি অন্যরকম ভালোবাসার কারণেই আমি আর্জেন্টাইন সমর্থক। যখন থেকে ফুটবল খেলা বুঝি, ঠিক তখন থেকেই। আর্জেন্টিনার খেলায় অন্যরকম ছন্দ আছে। সেই ছন্দ এখন লিওনেল মেসির মাঝে দেখতে পাই। যা আমাকেই শুধু নয়, কোটি ফুটবলপ্রেমীকে মুগ্ধ করে। প্রতি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সির গায়ে খেলা দেখি। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। তাই মেসিদের জার্সি কিনতেই এখানে আসা।’
এসময় সোহেলের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্রাজিল সমর্থক গোপীবাগের ফারুক হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্বকাপের খেলা দেখি। সে থেকেই ব্রাজিল সমর্থক বনে যাই। ব্রাজিলের খেলা আমার কাছে খুব ভালো লাগে। ওরা পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া দলটি প্রতি বিশ্বকাপে বেশ কিছু প্রতিভাবান ফুটবলার উপহার দেয়। যারা পরবর্তীতে বিশ্ব ফুটবলকে নেতৃত্ব দেন। প্রিয় দলের জার্সি গায়ে চড়িয়ে খেলা দেখার মজাই আলাদা। তাই ব্রাজিলের জার্সি কিনতে গুলিস্তানে এসেছি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।