Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকিতে সুন্দরবন ও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য

কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকে রবিউল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশ্বজলবায়ু পরিবর্তনে বিরুপ প্রভাবে সমগ্র পৃষ্টের উচ্চতা ও পানিতে লবনাক্ততার পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবন উপকূলীয় জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে। দিনের পর দিন বিস্তির্ন বনাঞ্চল পানিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ক্রমশ সংকীর্ন হচ্ছে দেশের মোট আয়তনের ৪.২ শতাংশ বনাঞ্চল। ফলে অবস্থার উন্নতি না হলে আগামী ২১০০ সালের মধ্যে সমগ্র সুন্দরবন অঞ্চলের শত ভাগ তলিয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা বিশেষ্ণদের।
সূত্র মতে সমগ্র সুন্দরবন বাংলাদেশ ও ভারতে বিস্তৃত। জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রের পানিতে মাত্রারিক্তভাবে লবনাক্ততার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রের তলদেশের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দেড় দশকে সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় ইতোমধ্যে ১/২ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন পরীক্ষার এক রিপোট সূত্রে জানা যায়, সংশিষ্ট বিষয়ে দ্রত পদক্ষেপ গ্রহন না করলে ১০ বছরের মধ্যে সমগ্র বনাঞ্চলের ১৫ শতাংশ তলিয়ে যাবে। জাতিসংঘের এক গবেষণা রিপোটে জানা যায়, সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ১০ সে. মি বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনে ১৫ শতাংশ, ২৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেলে ৪০ শতাংশ, ৪৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেলে ৭৫ শতাংশ এবং ৬০ সে.মি. বৃদ্ধি পেলে সমগ্র সুন্দরবন পানিতে ডুবে যাবে। সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সাগর বক্ষে জেগে উঠা নয়নাভিরাম তালপর্টি ইতোমধ্যে সাগর বক্ষে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া গহীন সুন্দরবনে পশ্চিম বন বিভাগের মান্দারবাড়ীয়া কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের ভেতরে ছোট ছোট নদী খালগুলোতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ কমে গেছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে বিচিত্র প্রানী জগতের বিচরণ ক্ষেত্র। ১৯২৭ সালে বন আইনে বনজ সম্পদ আহরনের দিক নির্দেশনা থাকলে ও অন্যন্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ১৯৫৫ সালে নতুন নীতি মালা ঘোষিত হয়ে পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে পুনরায় সংশোধিত হয়। কিন্তু এ দুটি নীতিমালায় বনজ সম্পদ রক্ষ্যায় স্পষ্টভাবে কিছুই বলা হয়নি। সর্বশেষ ১৯৭৯ সালে বননীতি মালা ও ছিল অস্পষ্ট। পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে বন আইনে নীতিমালা সংশোধিত হলেও তা বনজ সম্পদ রক্ষ্যা, আহরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে বিরুপ প্রভাবে ধারনা ও ছিল অপযাপ্ত। নিউইয়ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রতিনিয়ত পোড়ানো হচ্ছে জীবাশ্ন জ্বালানী। বৃদ্ধি পাচ্ছে মাত্রারিক্ত কার্বন। বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা বৈশ্বিক উঞ্চতা। মানব সৃষ্টি এসব কর্মকান্ডে দিন দিন ফুসে উঠছে সমুদ্র। আঘাত হানছে সামুদ্রিক ঝড়, পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু। এ জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ঝুঁকির মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। ঝুঁকিতে আছে এই অঞ্চলের ১০ লক্ষাধিক মানুষ্ কার্বন নিসরনে বাংলাদেশের ভুমিকা (গ্রীন হাউস) মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ। কার্বণ নিসরনে আমরা পিছিয়ে থাকলেও ঝঁকিতে আমরা এগিয়ে আছি। সূত্র মতে ২১০০ সাল নাগাত সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ৩ ফুট বৃদ্ধি পাবে। তখন লবনাক্ত পানিতে তলিয়ে যাবে সমুদ্র উপক‚লীয় অঞ্চল। ঘরবাড়ি ছাড়া হবে বাংলাদেশের ১০ লক্ষাধিক মানুষ। আবহাওয়া বিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান ইনকিলাবকে জানান, সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বাড়ার কারনে ২০৫০ সাল নাগাত বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকার ১৭ শতাংশ জমি তলিয়ে যাবে। বাস্তহারা হবে ১ কোটি ৮০ হাজার মানুষ। পৃথিবী শ্রেষ্ট ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের সাথে জড়িয়ে আছে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলসহ সমগ্র দেশের অস্থিত পরিবেশ ও প্রতিবেশ। দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সুন্দরবনের উপর কম বেশি নির্ভরশীল। ভবিষ্যত প্রজম্মকে একটি সুস্থ পরিবেশ সম্পন্ন দেশ উপহার দিতে এবং সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন বনজ ও মৎস্য সম্পদের মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের পথ সুগম করতে মায়ের মত সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখা অতি জরুরি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জলবায়ু পরিবর্তন


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ