Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদক সংক্রান্ত বিরোধে চৌদ্দগ্রামে আতঙ্ক ৮ বছরে ৯ খুন

| প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চৌদ্দগ্রাম থেকে মোঃ আকতারুজ্জামান : মাদক সংক্রান্ত বিরোধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক বাড়ছে। পরিবার থেকে শুরু থেকে সমাজের সব ক্ষেত্রেই বাকবিতন্ডা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও খুনের ঘটনা ঘটছে। এনিয়ে শিক্ষিত ও সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৮ বছরে মাদক নিয়ে বিরোধের জের ধরে ৯ ব্যক্তি খুন হয়েছে। এছাড়া মাদক নিয়ে শালিশকে কেন্দ্র করে উজিরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামকে নানা প্রকার হয়রানী ভোগ করতে হয়েছে। তবে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা করলে মাদক নির্মুল করা সম্ভব বলেও দাবি করেছেন সচেতন মহল। সুত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৬ মার্চ রাতে আলকরা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাইচ্ছুটি গ্রামে র‌্যাব-১০ এর সদস্যরা ক্রেতা সেজে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে গেলে র‌্যাব-মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে ৬ জন আহত ও ১ জন নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ হওয়া আলা উদ্দিনের পরিবার বলছে, র‌্যাব তাকে গুলি করে হত্যা করে লাশ নিয়ে গেছে। ঘটনার ৮ বছর পরও আলা উদ্দিনের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় র‌্যাব-মাদক ব্যবসায়ীদের পরিবারের লোকজনের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। অপরদিকে, সরকারী কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে র‌্যাব বাদী হয়ে ওই এলাকার ৩৯ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। ২০১২ সালের ১ এপ্রিল রোববার গভীর রাতে আবদুল করিম (২৮) নামের এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। করিম আলকরা ইউনিয়নের উত্তর কাইচ্ছুটি গ্রামের মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে। সরেজমিন গিয়ে ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, করিম বাড়ির পাশ্ববর্তী রাস্তার পাশে একটি মুদি দোকান করতো। ঘটনার দিন রাত ১১ টার দিকে বাড়ি ফিরে ভাত খেয়ে প্রতিদিনের মতো সে ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ তার পরিচিতি কয়েকজন যুবক মোবাইলে ফোন করে তাকে বাইরে আসতে বলে। এরপর করিম বাইরে গিয়ে রাতে আর ঘরে ফিরেনি। পরদিন সোমবার সকালে স্থানীয়রা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের (পিলার নং-২১২০) নো-ম্যান্সল্যান্ডে করিমের গলা কাটা লাশ দেখে আত্মীয় স্বজনদের খবর দেয়। ৪ মে বিকেলে ঘোলপাশা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় আহত হয় ফ্যাক্টরী শ্রমিক সেলিম মিয়া। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ মে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। সে ওই গ্রামের সোবহান মেম্বারের ভাগিনা। এঘটনায় শাহজাহান, মুন্সি ও নুরু নামের তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মাদক নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধের কারণে নিহতের মামা সোবহান মেম্বার শালিশের মাধ্যমে মিমাংশার আশ্বাস দিলে এক পক্ষের লোকজন সোবহান মেম্বারের উপর হামলা চালায়। এসময় সেলিম মিয়া তাদের বাধা দিলে হামলাকারীরা তাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। ৩১ মে সকালে কালিকাপুর ইউনিয়নের কে কে নগর সীমান্তে স্বপন দেব নামের এক ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীকে গুলি চালিয়ে খুন করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ। সে ভারতের যাত্রাপুর থানার মহেশপুর গ্রামের টুনু মেম্বারের ছেলে। মাদক নিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে কথা কাটাকাটির জের ধরে গালমন্দ করায় বিএসএফ তাকে মাথায় গুলি করলে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। ২ জুন রাতে জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের দক্ষিণ বেতিয়ারা গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী ও প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিনকে ছুরিকাঘাতে খুন করে তার সহযোগীরা। সে একই গ্রামের আবদুস সামাদের ছেলে। মহিন তার সহযোগী সজিবকে মাদকের টাকা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে মারধর করায় ক্ষীপ্ত হয়ে সজিবের নেতৃত্বে দূর্বৃত্তরা মহিনকে খুন করে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামীদের মধ্যে অনেকে আটক হয়েছে। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছে। আরেকজন ভারতে অবস্থান করছেন। আরেকজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় বলে এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে। ৩১ জুলাই মঙ্গলবার রাতে ঘোলপাশা ইউনিয়নের আমানগন্ডা গ্রামের সীমান্তবর্তী বাগানে আলোচিত মাদকের আখড়ায় জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক শ্রমিককে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে হত্যা করেছে সিলেটের সুনামগঞ্জের লিটন নামের অপর এক শ্রমিক। নিহত জাহাঙ্গীর কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার জোড়ইন গ্রামের মৃত জিন্নাত আলীর ছেলে। সে আমানগন্ডা গ্রামের মৃত হরমুজ মিয়ার মেয়ে ফরিদা বেগমকে বিয়ে করে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছিল। ২০১৬ সালে মাদক ব্যবসা ও অপরাধ কর্মকান্ডে বাধা দেয়ার জের ধরে আবু বকর ছিদ্দিক প্রকাশ রানা নামের এক যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকেরা। নিহত রানা চিওড়া ইউনিয়নের গুর্নিশকরা গ্রামের শহিদ উল্যাহর পুত্র। ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় পাতড্ডা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় বছির নামে তার এক বন্ধুও আহত হয়েছেন। পরদিন শনিবার রানার মা রেহানা বেগম বাদি হয়ে আ’লীগ নেতা আবদুল হাই কানু, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লবসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
চলতি ২০১৮ সালে জগন্নাথে মাদক ব্যবসা ও পাচারের বিরোধীতা করায় বদিউল আলম নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি ইউনিয়নের কেছকিমুড়া উত্তরপাড়ার মরহুম ইসমাইল মিয়ার পুত্র। গত ২৮ এপ্রিল শনিবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে দক্ষিণ ডিমাতলী মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরদিন ২৯ এপ্রিল রোববার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশটির ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ফেনী-কুমিল্লা যাত্রীবাহী বাস যমুনা পরিবহনের লাইনম্যান ছিলেন। এ ঘটনার মুলহোতা ফর্মা জাফরকে আটক শেষে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাবুল মিয়া প্রকাশ লম্বা বাবুল(৩৮) নামে চিহ্নিত এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। বাবুল পৌর এলাকার বৈদ্দেরখীল গ্রামের মরহুম হাফেজ আহমদের পুত্র। গত ২৩ মে বুধবার রাত একটায় ঘোলপাশা ইউনিয়নের আমানগন্ডা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি ও দুই’শ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের নিকট তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি আবুল ফয়সল। জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছে। এরই মধ্যে বুধবার রাতে বন্দুকযুদ্ধে বাবুল নিহত হওয়ার খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ঢাকা, চট্টগ্রামে পালিয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ ভারতে পালিয়ে গেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি আবুল ফয়সল সাংবাদিকদের বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ