Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে মাদক অভিযান

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৮, ৮:৫৫ পিএম

মাদক বিরোধি অভিযান সারাদেশে এক ধরনের ভীতিকর অবস্থা তৈরী করেছে। প্রায় প্রতিদিনই কথিত বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারা যাচ্ছে। অভিযানে প্রতিদিন শত শত মানুষ আটক হচ্ছে। গত তিন সপ্তাহে মাদক বিরোধি অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত বন্দুকযুযদ্ধে শতাধিক নিহত এবং ১২ হাজারের বেশী কথিত মাদক ব্যবসায়ী আটক হয়েছে বলে জানা যায়। শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী নিহত এবং হাজার হাজার আটক হওয়ার পর দেশের মাদক সা¤্রাজ্য এরই মধ্যে ভেঙ্গে পড়ার কথা। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তেমন নয়। মাদক বিরোধি অভিযানের নামে শতাধিক মানুষের মৃত্যু ও হাজার হাজার আটক হওয়ার পর এখন এমন প্রশ্ন উঠে আসছে এদের সকলেই মাদক ব্যবসায়ী কিনা। গত কয়েকদিনে পত্রিকায় প্রকাশিত রির্পোট থেকে বোঝা যাচ্ছে, মাদকের প্রকৃত গড ফাদাররা এখনো অধরা। দীর্ঘদিন ধরে বিস্তৃত হওয়া মাদক সা¤্রাজ্যে দেড়শতাধিক প্রভাবশালী রাজনীতিক,এমপি ও পুলিশ সদস্যের নাম রয়েছে বলে জানা যায়। ইয়াবা পাচারের মূল রুট কক্সবাজারের একজন এমপির মাদক ব্যবসা নিয়ে যখন সারাদেশে একটি পাবলিক পারসেপশন গড়ে উঠেছে, তখন মাদক বিরোধি অভিযানের সময় সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা প্রমান না থাকার কথা বলে প্রকারান্তরে অভিযুক্ত এমপি’র সাফাই গাইলেও অভিযানের নামে শতাধিক ব্যক্তিকে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে তালিকাভুক্ত প্রভাবশালী রাজনীতিক বা পুলিশ কর্মকর্তা নেই।
চলমান মাদক বিরোধি অভিযানে দেশের মাদক সা¤্রাজ্যের ঠিক কতটা নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয়েছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ মাদকের প্রকৃত গডফাদাররা এখনো অধরা। সেই সাথে সারাদেশে খুচরা মাদক ব্যবসায়ীরাও পুলিশের সহায়তায় ইতিমধ্যে নিরপদ দূরত্বে চলে যেতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা যায়। ঢাকার বস্তিগুলো মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবিদের অন্যতম আশ্রয়স্থল ও আভ্যন্তরীণ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত। গত সপ্তাহে ঢাকা বেশ কয়েকটি বস্তিতে মাদক বিরোধি অভিযানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাফল্যের হার খুবই কম। পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই অভিযানের তথ্য জানিয়ে দেয়ায় অভিযানের আগে মাদক ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দিতে সক্ষম হচ্ছে। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে পুলিশের সহায়তা নিয়ে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা অভিযানের আওতার বাইরে থাকতে সক্ষম হচ্ছে। একশ্রেনীর পুলিশ সদস্য নিজেরাই সরাসরি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, এবং আরেক শ্রেনীর পুলিশসদস্য ও সোর্স মাসোহারা ও গোপন বোঝাপড়ার বিনিময়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। মাদক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা পরস্পরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকের সামান্য একটি অংশ অভিযানে আটক হলেও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের সংখ্যা খুবই নগন্য।
ইয়াবা ও মাদক ব্যবসার সাথে বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালী রাজনীতিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও এসব অভিযুক্তদের ধরা হচ্ছেনা। তবে মাদক অভিযানের নামে বিচার বর্হিভুত হত্যাকান্ড সমর্থনযোগ্য নয়। আবার ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নিরপরাধ ও মাদক ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট নন এমন লোকও বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে কক্সবাজারে মাদক অভিযানে নিহত ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হকের ব্যাপারে পরস্পর বিরোধি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামীলীগ নেতা একরামের মৃত্যুতে মাদক অভিযান নিয়ে খোদ সরকারী দলের তরফ থেকেই প্রশ্ন উঠল।মাদক বিরোধি অভিযানের নামে বিরোধি দলের নেতাকর্মীদের হত্যা ও ভয়ে সন্ত্রস্ত করে রাখতে চাচ্ছে বলে ইতিপূর্বে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাসা থেকে ডেকে নেয়ার পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার তথ্য জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করছে। চিহ্নিত গডফাদার মাদক ব্যবসায়ীরা কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলে প্রশ্ন তোলার সুযোগ না থ্কালেও আইনগত প্রক্রিয়ায় তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসাই মানবাধিকারের দাবী। সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সত্যমিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচারের শিকার হওয়া সন্দেহভাজনদের কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে নির্বিচার হত্যার ঘটনাগুলো দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই মাদকের গড ফাদাররা নিজস্ব মাদক সা¤্রাজ্য ও অবৈধ অস্ত্রের বাহিনী গড়ে তোলতে দেখা যায়। বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ব্যবস্থা নিতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পাল্টা আক্রমন ও প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে যে মানুষ কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যাচ্ছে তাদের বেশীরভাগই হয় মাদকের সাধারণ ব্যবসায়ী না হয় সাধারণ মানুষ। নেত্রকোনার ছাত্রদল নেতা আমজাদ হোসেন, যশোরের ইউনুস আলী বা কক্সবাজারের একরামুল হকের সামাজিক-পারিবারিক জীবনের চিত্র এবং বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর হিসাব মেলানো যাচ্ছেনা। এদেরকে ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং তথ্যপ্রমানের ভিত্তিতে শাস্তির ব্যবস্থা করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য খুব কঠিন কাজ ছিলনা। মূলত এটাই তাদের দায়িত্ব। প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে এবং কথিত সন্দেহভাজনদের আটক ও বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার যে সব অভিযোগ উঠছে তা এই অভিযানের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অন্যদিকে মাদক বিরোধি অভিযানের সুযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেনীর সদস্য গ্রেফতার বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে পুরো অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন