Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গডফাদাররা অধরা

মাদকবিরোধী অভিযান : তালিকায় দেড় শতাধিক রাজনীতিক ও পুলিশ সদস্যের নাম : রাজধানীতে এখনও সচল বহু স্পট

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সারাদেশের ৩১০০ মাদক ব্যবসায়ীর রয়েছে। এর মধ্যে ডিলার রয়েছে ৭০০ আর গডফাদার প্রায় দেড়শ›। গডফাদারদের মধ্যে প্রভাবশালী রাজনীতিকের নামও রয়েছে। তালিকায় গডফাাদারদের স্বজনদেরও নাম রয়েছে। এটি হলো মাদকদ্রব্যনিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাথে পুলিশের সমন্বিত তালিকায় শুধু রাজধানীতে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৩৮৪ জন। যার মধ্যে গডফাদার আছে ১০১ জন। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গতকাল সোমবার পর্যন্ত রাজধানীর কোনো গডফাদার ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে টেকনাফ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এলাকার গডফাদারদের কেউ কেউ মিয়ানমারে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে পালিয়ে এসেছে ঢাকায়। আর ঢাকার গডফাদাররা সীমান্তবর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। কুমিল্লা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, যশোর, জয়পুরহাট, হিলি, দিনাজপুর এলাকার গডফাদারদের অনেকেই ভারতে আশ্রয়ের আশায় সুযোগ খুঁজছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, শুরুতে গডফাদাররা ধরা না পরায় এ অভিযান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু গত কয়েক দিনে কক্সবাজারের এমপি আবদুর রহমান বদির বেয়াই আকতার কামাল এবং টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরাম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর মানুষের ধারণা পাল্টাতে শুরু করেছে। শিগগিরই শুরু হচ্ছে গডফাদারদের বিরুদ্ধে অভিযান। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, শুরুতে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান হওয়ায় গডফাদারদের ডালপালা কেটে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে তারা অসহায় হয়ে পড়বে। গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ধলপুরে মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশ তিন নারীসহ ৫৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। ডেমরা জোনের সিনিয়র এসি ইফতেখারুল ইসলাম জানান, ধলপুরের ১৪ নম্বর আউটফল সিটি বস্তি এলাকায় এই অভিযানে সাড়ে ৬ হাজার ইয়াবা, ১০ কেজি গাঁজা এবং ফেনসিডিল ও হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশের তিন হাজারেরও বেশি মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এতে সারাদেশে মাদক ব্যবসায় জড়িত গডফাদার, ডিলার ও ব্যবসায়ীদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। তাদের সহায়তাকারী হিসেবে দেড় শতাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তি ও পুলিশ সদস্যের নামও তালিকায় এসেছে। চলতি বছরের শুরুতে তালিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। তালিকায় থাকা মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের সহায়তাকারীরা এখনও রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশের সাথে সমন্বয় করে একটি সমন্বিত তালিকা ধরে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। সব মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হবে। তালিকা থেকে কেউ বাদ যাবে না। ওই কর্মকর্তা জানান, তিন ক্যাটাগরিতে সারাদেশের ৩১০০ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় ডিলার রয়েছে ৭০০ ও গডফাদার প্রায় দেড়শ। গডফাদারদের মধ্যে প্রভাবশালী রাজনীতিকের নামও রয়েছে। তালিকায় তাদের স্বজনদেরও নাম রয়েছে। তারা মূলত আড়ালে থেকে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এ কারণে পুলিশ ও মাদকের কর্মকর্তারা সহজে তাদের ধরতে পারতো না। এটা জেনেই এবার ভিন্নভাবে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা দাবি করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযান শুরুর পর মাদকের বেশিরভাগ গডফাদাররাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। কক্সবাজার, টেকনাফ এলাকার বেশ কয়েকজন গডফাদার ইতোমধ্যে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারে চলে গেছে। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা অঞ্চলের গডফাদারদের কেউ কেউ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ কেউ ঢাকায় এসে বড় বড় রাজনীতিকের কাছে আশ্রয় চাচ্ছে। যদিও নেতারা এখন আর তাদের দায়-দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। অন্যদিকে, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যশোর অঞ্চলে মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় রয়েছে ২৯ জনের নাম। তার মধ্যে বেনাপোলের বাদশা, সেলিম, মোহাম্মদ আলী, আলিমুর, বাবু, মুকুল, কোরবা, শরিফুলসহ অনেকেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। কেউবা সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সুযোগ খুঁজছে।
এদিকে, রাজধানীতে মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চললেও এখনও বেশিরভাগ স্পট বন্ধ হয়নি বলে জানা গেছে। বরং ভিন্ন কৌশলে মাদক বেচাকেনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীতে চার শতাধিক স্পটের মধ্যে এখনও বেশিরভাগ স্পট সচল রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরা অভিযানের ভয়ে ব্যবসার ধরণ পাল্টে ফেলেছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা সেভাবেই অনেককে ম্যানেজ করে চিহ্নিত স্পটে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে- তেজগাঁও, কাওরাান বাজার রেল বস্তি, মালিবাগ রেলক্রসিং, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর বালুর মাঠ, গেন্ডারিয়ার বস্তি, কদমতলীর ওয়াসা পুকুরপাড়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, আনন্দবাজার বস্তি, ওসমানী উদ্যান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশ এলাকা, কাঁটাবন, মোহাম্মপুরের বিজলী মহল্লা, মিরপুর, পল্লবীর স্পট, শেরেবাংলানগর, মহাখালী সাততলা বস্তি, আজিমপুর কবরস্থানের আশপাশ এলাকা, আজিমপুর মেটার্নিটি হাসপাতাল-সংলগ্ন এলাকা, মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে, বাবুবাজার ব্রিজের ঢাল, আরমানিটোলা স্কুলের আশপাশ ও কামরাঙ্গীরচর।
ঢাকার কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাদকের টাকা থানার কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নিয়মিত পান। থানার দারোগারা সোর্স নিয়ন্ত্রণের কথা বলে মূলত তাদের গাড়িতেই মাদক ব্যবসায়ীদের বহন করে থাকে। কারন ঢাকার বেশিরভাগ সোর্স পরিচয়দানকারী মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত। তালিকা থেকে তাদেরও নাম বাদ যায়নি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, রাজধানীতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এবং তালিকা ধরে মাদক নির্মূল অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এ জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।



 

Show all comments
  • মারুফ ২৯ মে, ২০১৮, ২:৩৯ এএম says : 0
    চুনোপুটি ধরে কোন লাভ নাই
    Total Reply(0) Reply
  • নাহিদ ২৯ মে, ২০১৮, ২:৪০ এএম says : 0
    গডফাদাররা অধরা থাকলে এই অভিযান মূল্যহীন হয়ে পরবে
    Total Reply(0) Reply
  • সাজ্জাদ ২৯ মে, ২০১৮, ২:৪১ এএম says : 0
    এই নিউজটি করার জন্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Mizanur Rahman ২৯ মে, ২০১৮, ২:৫৬ পিএম says : 0
    গাছের গোড়া রেখে ডালপালা কাটলে কোনো লাভ হবে না। দুই দিন পর আবার ডালপালা চড়াবে। আর যদি প্রথমেই গোড়া কেটে দেওয়া হয় তাহলে ডালপালা এমনেতেই নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে। কারন গোড়া থেকেই ডালপালা চড়ায়, ডালপালা থেকে গোড়া চরায় না।
    Total Reply(0) Reply
  • Al Mamun ২৯ মে, ২০১৮, ২:৫৯ পিএম says : 0
    আইনের উর্দ্ধে কেও নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Munna Jamal ২৯ মে, ২০১৮, ৩:০৯ পিএম says : 0
    All right
    Total Reply(0) Reply
  • Saju ২৯ মে, ২০১৮, ৩:৫২ পিএম says : 0
    পাঁচ স্তরের শ্রেনীবিন্যাসে ভাগ করে মাদক।নির্মুল করার মত কথা বলে নিজের ব্যার্থতার বহিপ্রকাশ। প্রঘম ছিচকা মাদকসেবী আর ব্যবসায়ী ধরতে গিয়েই, শত শত ক্রস ফায়ার দিতে হচ্ছে, আবার বলছেন বন্দুকযুদ্ধে মারা যাচ্ছে। একজন ছিচকা মাদকসেবী ধরতেই বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলতে পারেন তাহলে, পাঁচ স্তরে যেতে যেতে। ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে বারোটা বাজাই দিলেন। ভালো যে হচ্ছে, কেমন ভালো সোটা বুজবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ২৯ মে, ২০১৮, ৭:২৭ পিএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন।ভাইকি লিকব বুঝি বলতে পারিনা।
    Total Reply(0) Reply
  • রানা আমার নাম ১ জুন, ২০১৮, ২:৫২ পিএম says : 0
    ভাই পুলিস পারেনা এমন কনোকাজ, পুলিস চাইলে পারে সব, কিনতু পুলিস এরজে সোরছ আছে তারা বেভসা কেরে এবং তাদেরকে দিয়ে করায় পুলিস আরবলছেন গটফাদারা, গাডাকা দিয়েছে না তাদেরকে সুজক করেদেয়া হএছে জাদের কেদিয়ে সোরছ তালিকায় তারাহলো ভরো মাদক বেভসাহি
    Total Reply(0) Reply
  • Siniyaziarul ২ জুন, ২০১৮, ১০:০৪ পিএম says : 0
    মাদক মুক্ত দেশ চাই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ