Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্যসেবায় পিছিয়ে কুমিল্লা

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক না থাকায় কুমিল্লার গ্রামের লোকজন যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। অথচ শহরের কিছু সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চিকিৎসক থাকলেও গ্রামের প্রায় সরকারি হসপিটাল বা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রেগুলোতে পদ শূন্য থাকছে বছরের পর বছর। চিকিৎসকরা শহরে উন্নত জীবনযাবন করার কারণে গ্রামে চিকিৎসক থাকছেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের গ্রামের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন, নির্দেশও দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে গ্রামের লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেকে হাতুড়ে ডাক্তার ও কবিরাজারে দ্বারস্থ হচ্ছেন। এদিকে কুমিল্লায় ডাক্তার সংকটের কারনে যেখানে জেলা সিভিল সার্জন কার্যলয় হিমশিম খাচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে গত ২৪ মে ৫৫ জন চিকিৎসকে কুমিল্লা থেকে অন্য বিভাগে বদলির আদেশ করা হয়েছে। আমেনা বেগম, তাসলিমা বেগম, ফয়জুনন্নেসা, ইয়াছমিন আক্তার ও আব্দুল কাইয়ুম সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও চিকিৎসক তো দূরের কথা হাসপাতালের দরজাও খোলা হয়নি। এমন দৃশ্য প্রায় প্রতিদিনের। গত রোববার দুপুরে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।
জানা যায়, ওই হাসপাতালটিতে একজন ভিজিটর, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার (সেকমো) একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক ও একজন আয়ার পদ রয়েছে। এর মধ্যে কেউই কর্মরত নেই। ফলে এক ধরনের অচলাবস্থায় চলছে হাসপাতালটিতে। এ অবস্থায় গত রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত রোগীরা চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে ক্ষোভ ঝেড়ে চলে যায়। বৃদ্ধা আমেনা বেগম জানান, তিনি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছেন জ্বর সর্দি ও শরীর ব্যথার ওষুধ নিতে। ইয়াছমিন আক্তার তার শিশুসন্তানকে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসা করাতে। দিনমজুর কাইয়ুম স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে নিয়ে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকের জন্য। তার স্ত্রী অন্তঃসত্তা। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছিলেন। এ অবস্থায় তাদের কেউই রবিবার চিকিৎসকের দেখা পাননি।
এ ব্যাপারে উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পা কর্মকর্তা ডাক্তার আলী নূর বশির দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পাহাড়পুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঁচটি পদ থাকলেও জনবলের অভাবে কাউকে পোস্টিং দেওয়া যাচ্ছে না। তাই বর্তমানে কমিউনিটি মেডিকেল অ্যাসিষ্টান্টে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়োজিত আছেন বললেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসকের অভাবে এ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি মাসের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
এদিকে রামচন্দ্রপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশেই হাবিল মিয়ার (৩৮) বাড়ি। তিনি বলেন মাসের বেশির ভাগ সময়ে স্বস্থ্যকেন্দ্রেটি বন্ধ থাকে। ভবনের দোতলায় চিকিৎসকের জন্য নির্ধারিত বাসায় বসবাস করেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আয়া।
গত ২৩ মে দুপুর বারটার দিকে সরোজমিনে গিয়ে নবীপুর পশ্চিম ইউপির স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি খোলা পাওয়া যায়। চিকিৎসকের সহকারী জালাল উদ্দিনকে ঔষধপত্র বিতরণ করতে দেখা যায়। জানতে চাইলে জালাল ইনকিলাবকে বলেন, তিনি এখানে উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অ্যাসিষ্ট্যান্ট পদে কর্মরত। ঔষধপত্র বিতরণ করলেও রোগীর ব্যবস্থা পত্র দেন না তিনি। একই দিন কামাল্লা ইউপির উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গিয়ে দেখা যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ। উপকেন্দ্রটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় পরিমল শীলকে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালটি বেশির ভাগ সময়ে বন্ধ থাকতে দেখি। আন্দিকোট এলাকার ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, চিকিৎসক হচ্ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রাণ। চিকিৎসক যদি না থাকেন তা হলে অসুক-বিসুক হলে মানুষ কোথায় যাবে। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে জানা যায় আরো ভয়াল তথ্য, শিশু, গাইনী ও কনসাল্ট্রেন ডাক্তার নেই দীর্ঘদিন। এক্স-রে মেশিন বিকল। ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই। চর্ম রোগের ডাক্তার সপ্তাহে দুদিন আসেন। হাসপাতালের তিন ডাক্তার মামুন, মানিক ও পাপিয়া মুরাদনগর উপজেলার ৬ লক্ষ লোকের চিকিৎসা দিচ্ছেন। ডাক্তার মামুন ও মানিক জেলার কোন মিটিং’এ গেলে ওই দিন হাসপাতাল রোগির আর্তনাদও বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএসও) ষ্টেশনে থাকেন না। এ বিষয়ে উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পা কর্মকর্তা ডাক্তার আলী নূর বশির দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগি দেখি না। মাঝে মাঝে এ স্টেশনে থাকি। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলোতে অনেক চিকিৎসকের পদ শূন্য। এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মজিবুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ডাক্তারের অনেক পদ শূন্য রয়েছে এই বিষয় সম্পর্কে আমি অবগত। কুমিল্লায় ডাক্তার সঙ্কট এর কারণে ইউনিয়ন কিংবা উপজেলা সদরে ডাক্তার দেত্তয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়ি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবগত করা হয়েছে। তবে স্বয়ং স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্টেশনে না থাকাটা দু:খজনক। আমি বিষয়টি দেখব। উপস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও মুরাদনগর উপজেলার সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়কে অবহিত করেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্যসেবা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ