পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন এক হাজার ৩৬৫ একর জমি। এখন পর্যন্ত অধিগ্রহণ হয়েছে মাত্র ২৪৭ একর। আবার যেটুকু জমি অধিগ্রহণ হয়েছে তার বেশিরভাগ মালিক পাননি ক্ষতিপূরণের টাকা। ফলে ক্ষতিপূরণ পাননি এমন জমিতে কাজ করা যাচ্ছে না। যে পরিমাণ জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কেবল সে জমিতেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সরকারের অন্যতম মেগাপ্রকল্প ‘দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত’ রেল লাইন প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা এমন। মূলত ভূমি অধিগ্রহণেই আটকে আছে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের পর্যটন ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের অফুরান সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপনের এ প্রকল্পে সাত বছরেও কোন গতি আসেনি। অবকাঠামো নির্মাণ কাজেও উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই।
প্রকল্পের মূল কাজ বলতে কিছু এলাকায় মাটি ভরাট করে রাস্তা তৈরীর কাজ চলছে। এই রাস্তায় স্থাপন করা হবে রেল লাইন। দফায় দফায় সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় চারগুণের বেশি বেড়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। কাজের যে গতি তাতে নির্ধারিত সময় আগামী ২০২২ সালের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ক’টি নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি দেন তার অন্যতম ছিল কক্সবাজারমুখি এই রেল লাইন প্রকল্প। বিগত ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এ মেগাপ্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেল লাইন নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মোঃ মফিজুর রহমান গতকাল (রোববার) দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন কোন সমস্যা নেই। তবে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে কাজে তেমন গতি আসছে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলার ৩৬৫ একর জমির মধ্যে অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে ৩৭ একরের। এরমধ্যে দোহাজারীতে ১০ একর এবং সাতকানিয়ায় ২৭ একর। কক্সবাজার জেলার এক হাজার একরের মধ্যে অধিগ্রহণ হয়েছে ২১০ একর। আবার এসব জমির মালিকদের অনেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। যারা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন তাদের জমিতে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের দোহাজারী ও সাতকানিয়া এবং কক্সবাজার শহরের ঝিলংজাতে কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমে মাটি ভরাট করে রাস্তা তৈরী করা হচ্ছে, এই রাস্তায় রেল লাইন স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের অগ্রগতি কত শতাংশ তা এখনও উল্লেখ করার মতো নয় জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী আগস্টের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলে কাজের গতি আসবে। জমি অধিগ্রহণের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে ৭৫৪ কোটি টাকা এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে ১৫৩২ কোটি টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণে ধীরগতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মোঃ মোমিনুর রশিদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে এই ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য দোহাজারী থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত প্রায় ৩৬৫ একর জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। যেসব জমির মালিক তাদের কাজগ-পত্র নিয়ে আসছেন তাদের ক্ষতিপূরণের টাকাও বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাদের কাগজপত্র নিয়ে জটিলতা বা সমস্যা আছে তারা ক্ষতিপূরণ নিতে আসছেন না। আগামীকাল মঙ্গলবার সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ৩৩টি মৌজার প্রায় ৭২ কিমি দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণের জন্য চকরিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় তিনটি এলএ কেসের মাধ্যমে অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ তিনটি এলএ কেসে মোট জমির পরিমাণ ১০৭৩ একর। এরমধ্যে ৬টি সংস্থার মোট ১৮৯.৮৮ একর জমি রয়েছে। ইতোমধ্যে ভূমি অধিগগ্রণের জন্য মোট ৯৩১ কোটি টাকা নথিখাতে জমা করা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে ভুমি অধিগ্রহণ শেষ করা যাবে। লোকবল সংকটের কারণে প্রক্রিয়ায় সময় ক্ষেপন হচ্ছে জানিয়ে একজন কর্মকর্তা জানান, একই সাথে কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। এসব প্রকল্পের জন্য প্রায় তিন হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক মোঃ মফিজুর রহমান বলেন, রেল লাইন প্রকল্পে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সাবজার পর্যন্ত একশ এক কিলোমটিার এলাকায় স্টেশন থাকছে দশটি। এগুলো হলো, চট্টগ্রামের দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজারের হারবাং, চকোরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার সদর। সদরের স্টেশনটি হবে দৃষ্টিনন্দন। পর্যটক আকর্ষণের উযোগী করে সব স্টেশন সাজানো হবে। সবগুলো রেল স্টেশনের ডিজাইন করা হয়েছে সেখানকার প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের উপর ভিত্তি করে। এরমধ্যে কক্সবাজার রেল স্টেশনের ডিজাইন করা হয়েছে সামুদ্রিক ঝিনুকের আদলে।
প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার এবং পরবর্তিতে রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপন করা হবে। সাথে থাকছে ২৬ কিলোমিটার লুপ লাইন। এছাড়া ৪৭টি ব্রিজ, ১৪৯টি কংক্রিট বক্স কালভার্ট ও ৫২টি কংক্রিট পাইপ কালভার্ট নির্মিত হবে অনেক আগে প্রকল্প বায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও দাতা সংস্থা না পাওয়ায় কাজ আটকে ছিল। এরমধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়নে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের আওতায় এই রেলপথ সিঙ্গাপুর, চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও কোরিয়া হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। পর্যটন শহর কক্সবাজারের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ হবে। পর্যটনশিল্পের বিকাশের পাশাপাশি বিস্তৃত হবে ব্যবসা বাণিজ্য, নিশ্চিত হবে প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ ও ব্যবহার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।