Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী গ্রেফতার সউদী সংস্কারের সীমাবদ্ধতার ইঙ্গিত

| প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আরব নিউজ : সউদী আরবে গত সপ্তাহে ১০ জন অধিকার আন্দোলন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই নারী অধিকারের জন্য আন্দোলন করছেন। সউদী মাধ্যমে তাদের বিশ^াসঘাতক বলে অভিহিত করা হয়েছে। আগামী ২৪ জুন সউদী মহিলাদের উপর থেকে গাড়ি চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে বলে জোরেশোরে প্রচারণা চলছে। তার কয়েক সপ্তাহ আগে এ গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সউদী আরবের সংস্কার প্রচেষ্টার সীমাবদ্ধতার দিকটিই উঠে এসেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
পাশ্চাত্যের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ গ্রেফতারের ব্যাপক নিন্দা করেছে। সউদী সমর্থনকারীরাও এ গ্রেফতারের ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন। সউদী নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ ওয়াশিংটনের থিংকট্যাংক আরাবিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আলি শিহাবি বলেন, এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। ভুল অনিবার্য, এটা নিশ্চিতই তেমন কিছু।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এ পর্যন্ত নারী আন্দোলন কর্মীদের গ্রেফতার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
তিন প্রজন্মের অধিকার কর্মীরা সউদী কর্তৃপক্ষের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। এরা হলেনঃ ২৮ বছর বয়স্কা সামাজিক মাধ্যমের বিশিষ্ট নারী ব্যক্তিত্ব লুজাইন আল হাছুল, ৬০ বছর বয়স্কা ৫ সন্তানের মা আজিজা আল ইউসেফ এবং বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাপক ও জনপ্রিয় বøগার ইমান আল নাফজান।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আরো আছেন মধ্য ষাট বয়সিনী মাদেহা আলজরুশ। ১৯৯০ সালে রিয়াদের এক পার্কিং-এ নারীদের গাড়ি চালনা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে প্রথম প্রতিবাদ প্রকাশে অংশ নেয়া ৪০ জন নারীর মধ্যে তিনিও একজন।
ওয়াশিংটনে আরব উপসাগরীয় রাষ্ট্র ইনস্টিটিউটের স্কলার ক্রিস্টিন স্মিথদিওয়ান বলেন, এ অস্বাভাবিক গ্রেফতার থেকে মনে হচ্ছে যে সউদী কর্তৃপক্ষ নারী অধিকার আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করতে তাদের বিচার ও আরো গ্রেফতারের পরিকল্পনা করছে। সাধারণ ভাবে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার জন্য তাদের ডেকে পাঠানো হত।
তিনি বলেন, তাদের বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। এটা সউদী আরবে শৃঙ্খলা আরোপের তুলনামূলক ভাবে নতুন পন্থা , সে সাথে দ্রæত তাদের নাম প্রচারের উদ্দেশ্যও আছে। আমি মনে করি, নতুন আরবের জন্য কথা বলায় এটা প্রকাশ্যে তাদের অপদস্থ করার ঘটনা।
সউদী আরবের ক্ষমতাশালী যুবরাজ এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমান যখন নিজেকে একজন বিপ্লবী নেতা হিসেবে প্রদর্শন করে তার দেশকে আধুনিকতার দিকে টেনে নিতে দৃঢ়সংকল্প তখনি নারীদের বিরুদ্ধে এ দমন অভিযান চালানো হল। ৩২ বছর বয়স্ক তরুণ যুবরাজ গত বছর মহিলাদের অধিকার বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়ার পর সউদী নারীরা তার প্রশংসা করেন। যুবরাজ প্রথমবারের মত সউদী সামরিক বাহিনীতে নারীদের প্রবেশের ব্যবস্থা , নারীদের জন্য কিছু সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণ উন্মুক্ত করেন। তিনি দেশের ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন যারা নারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সক্রিয় ছিল।
টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর গ্রেগরি গজ বলেন, দমনের এ ঘটনা সউদী সমাজে নারীদের অবস্থা উন্নয়নে যুবরাজের চেষ্টাকে ব্যাহত করবে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা প্রখ্যাত সউদী লেখক জামাল খাশোগী বলেন, এ গ্রেফতার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিকল্পনাকেই প্রকাশ করেছে। এটা অধিকারবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। তিনি চান যে মানুষজন দূরে থাকুক এবং তিনি যা দিচ্ছেন তা ও ভবিষ্যতে তার নেতৃত্ব গ্রহণ করুক।
গত সেপ্টেম্বরে সরকার যখন নারীদের গাড়ি চালনার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে তখন নারী অধিকার কর্মী ও বøগারদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। যদিও তা জনগণের কাছ থেকেই এসেছিল কিন্তু ধারণা করা হয় যে সরকারের লোকজনই তা করেছিল যাতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমে কেউ কিছু না বলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সউদী নাগরিকরা বলেন, এসব হুঁশিয়ারির পর তাদের নিজেদের ও পরিবারের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও তারা শাস্তির শিকার হতে পারে এ ভয়ে অনেকেই নীরবতা পালন করে।
গত সপ্তাহে গাড়ি চালানোর অধিকার বিষয়ে নারী আন্দোলনকারীদের আটকের ঘটনায় এক সরকারী বিবৃতিতে বলা হয় যে বিদেশী শত্রæদের সাথে সন্দেহজনক যোগাযোগ এবং বিদেশী শত্রæদের আর্থিক সমর্থন দেয়ার প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
সরকারী নীতি বিষয়ে রাইস বিশ^বিদ্যালয়ের বেকার ইনস্টিটিউটের ক্রিস্টিয়ান উলরিকসেন বলেন, এ দমনের কোনো মানে হয় না যেহেতু জনগণের বেশির ভাগই গত বছর একেবারে নীরব ছিল। তারা সউদী আরবের জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্রদূত হতে পারত। তার পরিবর্তে তাদের বিশ^াসঘাতক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। আমি মনে করি এটা সউদী আরবের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্বকে চাপা দেয়ার চেষ্টা।
গ্রেফতারের পন্থাটা যদিও অস্বাভাবিক, তবে সউদী আরবে ভিন্ন মতাবলম্বীদের গ্রেফতারের ঘটনা এই প্রথম নয়। গত বছর শাহজাদা, উ্চ্চ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগে এক দমন অভিযানে ভিন্নমতাবলম্বী আলেম ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনা গটে।
তবে সর্বশেষ গ্রেফতারের ঘটনা ও সময় সউদী পর্যবেক্ষকদের মনে অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। উলরিকসেন বলেন, সউদী যুবরাজ কি অনুধাবন করেছিলেন যে তিনি এত দ্রæত খুব বেশি দূর যেতে পারবেন না? এ সব গ্রেফতার কি অনেক বিরাট হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র? ৯৫ শতাংশই কি এখনো নিচে রয়ে গেছে? এটা পরিবর্তনের বা সংস্কারের সীমাবদ্ধতাকে নির্দেশ করে।
প্রিন্সটন বিশ^বিদ্যালয়ের নিকট প্রাচ্য স্টাডিজের প্রফেসর বার্নার্ড হেইকেল বলেন, এই মহিলাদের গ্রেফতার করাটা ভুল। এটা নারীদের গাড়ি চালনার সময় নিকটবর্তী হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রচলিত ধারার লোকদের খুশি করার এক অতিরঞ্জিত ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, এসব মহিলাদের বিরুদ্ধে নিñিদ্র প্রমাণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই গ্রেফতার ও তাদের বিচার সউদী আরব সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে পাশ্চাত্যের আস্থা অর্জন করতে পারবে না।

 



 

Show all comments
  • পাবেল ২৪ মে, ২০১৮, ২:৫৮ এএম says : 3
    সংস্কারের নামে ইসলাম বিরোধী কাজ করা উচিত নয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারী

১৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ