Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে ভয়াবহ পানিবদ্ধতার আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গত বছরের ২৬ জুলাই কয়েক ঘন্টার বৃষ্টির ফলে ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যেদিকে দুচোখ যায় কেবল পানি আর পানি। যানবাহন পানিতে আটকে স্থবির হয়ে পড়ে। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে ঐ দিনই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ওয়াদা করেছিলেন, আগামী বছর (২০১৮) এই অবস্থা থাকবে না। মন্ত্রীর এই ওয়াদা অনুসারে ঢাকা ওয়াসা খাল পরিস্কার করার জন্য ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ চায়। পরবর্তীতে কাটছাঁট করে বরাদ্দ কমিয়ে ৪০ কোটি টাকা করা হলেও তা এখনো পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ওয়াসা কিছুটা তৎপর হয়ে বিভিন্ন ড্রেন পরিস্কারের উদ্যোগ নেয়। তারপর তা ঝিমিয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এলজিআরডি মন্ত্রী নগরবাসীকে যে ওয়াদা করেছিলেন, তা পূরণ হবে বলে মনে করছেন না পর্যবেক্ষকরা। কারণ পানিবদ্ধতা দূর করার জন্য যে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল, তার কোনো আলামত এখন পর্যন্ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, নগরবাসীকে এবছর আরও বড় ধরনের পানিবদ্ধতার দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হবে।
সরকার উন্নয়ন নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলছে। উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিচ্ছে। রাজধানীতে যে বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে নদ-নদীর জোয়ার বয়ে যায়, নগরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ে এবং ঢাকা ডুবন্ত নগরীতে পরিণত হয়Ñএ বিষয়টি নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। ঢাকা যে একটি উন্নয়নশীল দেশের রাজধানী, পানিবদ্ধ অবস্থায় এর দৃশ্য দেখলে তা বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। কোনো উন্নয়নশীল দেশের রাজধানী বর্ষায় পানিতে ডুবে থাকবে, পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে, বসবাসের অযোগ্য হবে, অসভ্য নগরী হিসেবে খ্যাত হবেÑতা তার স্ট্যাটাসের সাথে যায় না। উন্নয়নশীল দেশের রাজধানীর চেহারাও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে এবং তা বাসযোগ্য হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ কী শুকনো মৌসুম, কী বর্ষা মৌসুমÑ কোনো সময়েই ঢাকাকে সভ্য নগরী বলে মনে হয় না। আসন্ন বর্ষায় কী ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে, তা এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে। যখন একনাগাড়ে তিন-চার ঘন্টা বা দিনব্যাপী বৃষ্টি শুরু হয়, তখন ঢাকার অবস্থা কী হবে, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। কেন ও কী কারণে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে, তা সকলেরই জানা। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। ঢাকার হারিয়ে যাওয়া খাল ও বর্তমান খাল নিয়ে ইনকিলাবে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য পত্র-পত্রিকায় বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো বিচলন নেই। উল্টো একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছে। ওয়াসা বলে এ কাজ সিটি করপোরেশনের, সিটি করপোরেশন বলে এ কাজ ওয়াসার। দায়িত্ব নিয়ে এ ধরনের পারস্পরিক দোষারোপের কারণে বছরের পর বছর ধরে পানিবদ্ধতা সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। ঢাকার হারিয়ে যাওয়া খাল উদ্ধার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বারবার তাকিদ দিয়েছেন। তাঁর এ তাকিদেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাহলে কার কথায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে? ওয়াসা পানিবদ্ধতা নিরসনে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতেই আগ্রহী বেশি। এর কারণ এতে একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া সহজ হয়। বর্ষার কারণে সময় বেশি লাগছে, সময় বাড়াতে হবেÑএ ধরনের উসিলা দিয়ে দুর্নীতির পথ উন্মুক্ত করা হয়। ফলে ঠিক বর্ষা শুরুর আগে আগে গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ অলিগলি খুঁড়ে একাকার করে ফেলা হয়। ওয়াসার এ খোঁড়াখুঁড়ি দেখলে মনে হবে এবার আর পানিবদ্ধতা থাকবে না। অথচবর্ষা শুরু হলে যেই সেই অবস্থা দেখা যায়। উল্টো রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রেখে দেয়ায় তাতে বৃষ্টির পানি জমে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়। যানবাহন, পথচারী এসব গর্তে পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়।
রাজধানীর পুরো ড্রেনেজ সিস্টেম যে অচল হয়ে পড়েছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ওয়াসার ৪০০ বর্গকিলোমিটার সার্ভিস এরিয়ার মধ্যে ড্রেনেজ সিস্টেম রয়েছে ৩৭০ কিলোমিটার। এর মধ্যে যেটুকু ড্রেনেজ সিস্টেম রয়েছে তা দিয়ে পুরো আয়তনের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ এলাকা নিষ্কাশন করা যায়। এ চিত্র থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ওয়াসার ড্রেনেজ সিস্টেম কতটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ থেকে উত্তরণের তেমন কোনো উদ্যোগও নেই। রাজধানীতে বর্তমানে যে ২৬টি খাল বিভিন্নভাবে দখল হয়ে আছে, সেগুলো উদ্ধারেও কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এর মধ্যে পাঁচটি খাল যেমন হাজারিবাগ, বাইশটেকি, সাংবাদিক কলোনি, বেগুনবাড়ি এবং মান্ডা খাল খননের জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা জানা যায়। তবে এসব খাল কবে খনন হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা জানা যায়নি। রাজধানীর সার্বিক চিত্র পর্যালোচনায় বোঝা যাচ্ছে, এলজিআরডি মন্ত্রী এক বছরের মধ্যে পানিবদ্ধতা নিরসনের যে ওয়াদা করেছিলেন তা তো বাস্তবায়ন হবেই না, বরং আরও কত বছর লাগবে তার নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে সরকারেরও যেন এ নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। রাজধানী যে দিন দিন অচল ও পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে, সেটি আমলেই নিচ্ছে না। এই অবাসযোগ্য রাজধানীতে বসেই সরকার দেশ পরিচালনা করছে, উন্নয়নের কথা বলছে। এ নিয়ে জনসাধারণ সরকারের সমালোচনাও করছে। আমরা মনে করি, রাজধানীর পানিবদ্ধতাসহ সার্বিক সমস্যা নিরসনে সরকারকে ড্রাস্টিক অ্যাকশন নিতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে রাজধানীকে বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। কেবল প্রকল্প নিলেই হবে না, নির্দিষ্ট সময়ে তা বাস্তবায়নে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন