Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নীরব থাকলেও যে কোনও সময় আরসা ফিরে আসবে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ৮:১৮ পিএম

হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এশিয়া টাইমস’র প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপন সশস্ত্র সংগঠন হলেও আরসা’র সামাজিক মাধ্যমে উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে টুইটারে সংগঠনটি নিয়মিত পোস্ট করত। ২০১৭ সালেও টুইটারে তারা বেশ সক্রিয় ছিল। কিন্তু গত তিন মাস ধরে তারা একেবারে নীরব রয়েছে। জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের বিবৃতিতে ২৫ আগস্টের হামলায় আরসাকে ‘কথিত’ বলে উল্লেখ করা শুরু করেছে। এতে করে সহিংসতা নিয়ে মিয়ানমার সরকারের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। অপরদিকে, মিয়ানমারের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সদস্য দাউ পিওন কাথি নায়েঙ্গ সতর্ক করে বলেছেন, এখন নীরব থাকলেও যে কোনও সময় আরসা ফিরে আসবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরসার গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে। তাদের নীরবতা রহস্যজনক। মিয়ানমার ও অন্যান্য আঞ্চলিক দেশের উচিত হবে না তাদের নজরদারির বাইরে রাখা। প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিগত ১৪ মে। মিয়ানমারের মন্ত্রী ও দেশটির সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, আরসা সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ফিরতে বাধা দিচ্ছে, ফিরলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। যদিও ৩১ জানুয়ারির পর থেকে আরসা কোনও বিবৃতি দিচ্ছে না। এমনকি তাদের টুইটারেও কোন পোস্ট পাওয়া যাচ্ছে না। সংগঠনটির এমন নীরবতাকে রহস্যজনক মনে করা হচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী এই সংগঠনের অস্তিত্বও হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে সশস্ত্র হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওই হামলায় দায় স্বীকার করে আরসা। খুন, ধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগের মুখে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর। এশিয়া টাইমস আরও জানায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে হারকাহ আল-ইয়াকিন (ফেইথ মুভমেন্ট) থেকে নিজেদের রোহিঙ্গা প্রতিরোধের সংগঠন হিসেবে রূপান্তর ঘটায় আরসা। এদের প্রাথমিক বিবৃতিতে জিহাদি জোশ থাকলেও ইংরেজিতে দেওয়া তাদের বক্তব্যে সন্ত্রাসবাদের চেয়ে স্বাধিকারের প্রতিরোধ চেতনা স্থান পায়। ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আরসা ২৭টি বিবৃতি দিয়েছে। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী এক প্রতিবেদনে জানায়, ৩১ জানুয়ারি আরসা’র সর্বশেষ টুইট ছিল অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী, ডাকাত, মানবপাচার চক্র, মাদকপাচার চক্র ও মিয়ানমার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতি যারা আরসা নাম নিয়ে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ওই টুইটে তারা আরসা’র ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন না করার আহ্বান জানায়। ইয়াঙ্গুনভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইউ মাউং মাউং সোয়ে জানান, আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গা ইস্যু ভালো অবস্থান অর্জন করারই প্রতিফলন হতে পারে আরসার নীরবতা। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, রোহিঙ্গা লবিস্টদের জন্য আরসা ছিল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মনোযোগ আকর্ষণের একটি হাতিয়ার। কিন্তু এখন ইস্যুটি যখন জাতিসংঘ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তাই ব্যাপক মানুষের পালিয়ে যাওয়া যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে তখন আরসা নিজেদের আড়াল করে নিচ্ছে। তারা যদি সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে প্রচারণা অব্যাহত রাখে তাহলে আরসা সমালোচনার মুখে পড়তে পারে। এই বিশ্লেষক মনে করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বিগ্ন কমে আসলে আবারও সক্রিয় হবে আরসা। আরসার নীরবতার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরসা’র অস্তিত্ব নেই বলে যে কথা প্রচলিত সেটাকে উসকে দিচ্ছে তাদের এই নীরবতা। রোহিঙ্গা ও পশ্চিমা মানবাধিকারকর্মীরা ২৫ আগস্টের হামলাকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পরিচালিত ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ হিসেবে বলা শুরু করেছেন। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ক্লিয়ারেন্স অভিযানকে বৈধতা দিতে চেয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বিদ্রোহীদের সংগঠনটি হয়ত নিজেদের পুনরায় সংগঠিত করছে এবং নতুন হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সময় তারা প্রকাশ্য যোগাযোগ রাখতে চায় না। এশিয়া টাইমস, ইরাবতী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ