Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অন্ধ দম্পতির দুর্বিষহ জীবন একটি চাকরির আকুতি

| প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : পৃথীবির রঙ-রূপ দেখা ও বুঝার আগেই দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছি। তবুও জীবন যুদ্ধে থেমে থাকিনি। দেশের সর্বচ্চো বিদ্যাপিঠ থেকে সর্বচ্চো ডিগ্রি অর্জন করেছি। হাজার প্রতিকুলতার মধ্যেও হায়ি যাইনি কিংবা হেরে যাইনি। তবে এখন মনে হচ্ছে হেরে যাচ্ছি, হারিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট’ (আইইআর) বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছি ২০১১ সালে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও একটি চাকরির ব্যবস্থা করতে পারিনি। আলোহীন চোখের উচ্চ শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীর একটি পুত্র সন্তানসহ তিনজনের পরিবার আজ কখনো অনাহারে আবার কখনো অর্ধাহরে বেঁচে থাকতে হচ্ছে এই নিষ্ঠুর সমাজে। শত দুয়ারে ধর্ণা দিয়েও আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজন কোন চাকরি দাতার (সরকারি কিংবা বেসরকারি) একটু দয়ার দৃষ্টিতে পড়তে পারিনি। বরং চোখের আলো না থাকায় কোথাও অবহেলিত আবার কোথাও নিগ্রিহীত হতে হয়েছে। কোথাও বড় অংঙ্কের ঘুষ দিতে পারলে চাকরি দেয়ার আশ্বাস পেয়েছি। যা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যোগ্যতা থাকা সত্বেও কেউ আমাদেরকে একটি চাকরি দেয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করা শাহেদা আফরোজ মিম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাশ করা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম নামের অন্ধ দম্পতি অশ্রæসিক্ত চোখে ও কান্নার সুরে এই প্রতিবেদকের কাছে উপরোক্ত কথাগুলো বললেন।
সরেজমিন রাজধানীর মিরপুর-১২ এর ডি-বøকের বাসায় গিয়ে এই অন্ধ দম্পতির সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, বর্তমানে তাদের উচ্চ শিক্ষা থাকা সত্বেও চাকরিহীণ, আভাব অনটনের মধ্যে মানবেতর জীবন কাটছে। তারা বলেন, হতাশার মধ্যে কখনো কখনো জীবনের উপর আস্থাহীন হয়ে খারাপ চিন্তা মাথায় এসে যায়। কিন্তু একটি ফুটফুটে চেলের মুখ যখন হৃদয়পটে ভেসে উঠে তখন কন্নায় বুক ফেটে যায়। হতাশাগ্রস্থ হয়ে কিছু হয়ে গেলে কিংবা করে ফেললে আমাদের সন্তান কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। সে চিন্তায় ঘুম আসে না।
তারা বলেন, সমাজের এমন কেউ কি নেই, আমাদের এই অসহায় উচ্চ শিক্ষিত অন্ধ দম্পতিকে একটি চাকরি দিয়ে একটি আসহায় পরিবারকে রক্ষা করতে পারে? দেশের সর্বচ্চো বিদ্যাপিঠ থেকে লেখা পড়া করা এই অন্ধ দম্পতির জন্য কি আমাদের সরকারের কিছুই করার নেই? তাহলে আমরা দৃষ্টিশক্তিহীন এই অসহায় পরিবারটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? কার কাছে সাহার্য কামনা করবো?
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও শাহেদা আফরোজ মিম’র সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা দু’জন জন্মগত অন্ধ ছিলেন না। রফিকুল ইসলাম তিন বছর বয়সে টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে এবং শাহেদা আফরোজ মিম একই বয়সে হামে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হরান। দুইজনেরই অভিযোগ তাদের পরিবারের অবহেলা, অজ্ঞতা ও ভুল চিকিৎসার কারণে তাদেরকে এই করুণ পরিণতির শিকার হতে হয়েছে। রফিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স ও মম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে আইইআর বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাশ করেন। এরপর ২০১১ সালে পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্ত জীবনে মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম সিয়াম নামে তাদের সাড়ে তিন বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
শাহেদা আফরোজা মিম ইনকিলাবকে বলেন, অভাব যেখানে ভর করে ভালবাসা সেখানে সুখিয়ে যায়। আমাদের অভাব আছে ঠিক, কিন্তু আপনাদের তো কলেমের কালি অফুরন্ত। আপনাদের কলমের কালি আমাদের মতো অভাগার জন্য কিছু লেখলে ক্ষতি কি?
তিনি বলেন, বর্তমানে অভাব অনটনের কারণে আমার সংসার চালানো কষ্টের হয়ে গেছে। বিয়ের আগের জমানো টাকা খরচ করে এতোদিন চলেছি। এখন আমার বাচ্চাকে তার মামা ও খালামনিরা আদর করে যে টাকা খেতে দেয় সেটি দিয়েই সংসার চলছে। গত মাসের বাসা ভাড়া দিয়েছি সর্বশেষ সম্ভল আমার গলার যে স্বর্ণের চেইন ছিল সেটি বিক্রি করে।
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ সোনালি ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার পদে লিখিত পরীক্ষায় প্রিলিতে পাস করি। এরপর পরিচিত প্রভাবশালী লোকজনের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা করি। চাকরি পেতে হলে অনেকে টাকার লাগবে বলেছেন তারা। আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আমার কোটা রয়েছে সেখানে কেন টাকা দিবো। টাকা তো আমার নেই।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী মিম যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল তখন স্কলারশিপের কিছু টাকা পেত। সে ঐ টাকা থেকে একটা অংশ জমিয়ে রেখেছিল। এটা প্রায় দুই-আড়াই লাখ টাকার মত হয়েছিল। সেই টাকা খরচ করে এখন চলছি। আমার বড় ভাইও মাসে ১ হাজার টাকাকরে দেয়। মিমের বোনরা পারলে ৫শ, এক হাজার টাকা দেয়। সেগুলো দিয়েই পরিবার চলছে। তারা এভাবেআর কতদিন দিবে, আর আমরাইবা এভাবে আর কতদিন চলবো।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জীবন

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ