পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে/ কেমন করে ঘুরছে মানুষ, যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে/ দেশ হতে দে দেশান্তরে/ ছুটছে তারা কেমন করে/ কিসের নেশায় ---’ (কাজী নজরুল ইসলাম) সত্যিই আমরা এখন বন্ধ ঘরে থাকিনি। বিজ্ঞানের বদৌলতে উন্নত দেশগুলোর মতোই যুগান্তরের ঘুর্ণিপাক পেরিয়ে ছুটছি মহাকাশের দিকে। বিশ্বের যে ৫৭ দেশ মহাকাশে মালিকানায়; বাংলাদেশ তার অন্যতম। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যে অর্জন; তা বিশ্বদরবারে এ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
বিজ্ঞানের সফল্যের খেলায় মানুষের মহাকাশ যাত্রা শুরু হয়েছিল ৬০ বছর আগে। ১৯৫৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক-১ মহাকাশে পাঠিয়ে নতুন যুগের সুচনা করেছিল। অথচ মহাকাশ জয়েই সেই স্বপ্ন অনেক আগেই দেখেছিলেন বাঙালিরা। ১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে পড়ার আগে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘সংকল্প’ কবিতায় লিখেছিলেন- ‘রইব না কো বদ্ধ খাঁচায়, দেখব এ-সব ভুবন ঘুরে/ আকাশ বাতাস চন্দ্র-তারায় সাগর-জলে পাহাড়-চুঁড়ে। পাতাল ফেড়ে নামব নীচে, উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে/ বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতে মুঠোয় পুরে।’ প্রায় ৮০ বছর আগে জাতীয় কবি যে সংকল্প করেছিলেন; সেই বিশ্ব-জগৎকে হাতে মুঠোয় এনে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ১১ মে শুক্রবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মহাকাশ যুগের সূচনা হয়। নতুন পরিচয় পায় ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ। যুক্ত হয়ে যায় উপগ্রহধারী এলিট ক্লাবের সদস্য রাষ্ট্রে। বাংলাদেশ এখন ৫৭তম স্যাটেলাইটধারী রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ প্যাড ৩৯-এ থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাংলাদেশের মহাকাশ জয়যাত্রা শুরুর মাধ্যমে দেশের অন্যতম এই গৌরব অর্জিত হয়েছে। যে লঞ্চ প্যাড থেকে ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল অ্যাপোলো-১১ সেই একই জায়গা থেকে তিন হাজার ৫০০ কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ শুরু করে মহাকাশে পৌঁছানোর মহাযাত্রা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে।
এর আগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে স্পেসএক্সের ফ্যালকন নাইন বøক ফাইভ উৎক্ষেপণের ব্যাকআপ উইন্ডো বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিট ধরে নিয়ে দ্বিতীয় প্রত্যাশিত উৎক্ষেপণের ক্ষণগণনা শুরু হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শুরু হয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাউন্ট-ডাউন। গোটা বাঙালি জাতির জন্য গৌরবের এই অর্জন এবং ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকতে দেশে এবং দেশের বাইরে কোটি কোটি মানুষের চোখ ছিল টেলিভিশন ও অনলাইনে। সকলেই সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণের মহেন্দ্রক্ষণটি। যে দৃশ্যটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন সকলে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রাত ২টা ১৪ মিনিটে মহাকাশের দিকে উৎক্ষেপণ করা হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। মোটামুটি আধা ঘণ্টার মাথায় বঙ্গবন্ধু-১ পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে। অরবিটে পৌঁছালেও এর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আসতে প্রায় দুই মাস সময় লেগে যাবে। বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, স্যাটেলাইটটি তার নিজস্ব কক্ষপথে স্থাপিত করতে একমাস সময় লাগবে এবং পরবর্তীতে কারিগরি বিভিন্ন বিষয় শেষ করে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগবে আরও এক মাস।
যদিও এর আগে কারিগরি ত্রুটির কারণে বৃহস্পতিবার স্থগিত হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ। সব প্রক্রিয়া শেষে, শেষ মিনিটের ৪২ সেকেন্ড বাকি থাকার সময় স্পেসএক্সের ক্ষণগননার মেশিন থমকে যায়। অর্থাৎ, রকেটের যাত্রা (স্টার্টআপ মোড) শুরু হওয়ার সময়েই তা বন্ধ হয়ে যায়। স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে সেদিন জানানো হয়, বৃহস্পতিবার রাতে আর উড়ছে না বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। সাধারণত স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সব সময়ই একটি অতিরিক্ত দিন হাতে রাখা হয়। কারণ, প্রথম দিন কোনো সমস্যা হলে যাতে দ্বিতীয় দিনটি কাজে লাগানো যায়। আগে থেকেই স্পেসএক্স জানিয়ে রেখেছিল, দ্বিতীয় দিনটি (ব্যাকআপ ডে) শুক্রবার।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময় স্পেসএক্সের লাইভ ওয়েবকাস্টের মধ্যেই ধারণ করা এক ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলাম। প্রবেশ করলাম নতুন যুগে। বাংলাদেশ এতদিন বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করে সম্প্রচার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে আসছিল; বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে গুণতে হয় বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার (১১৮ কোটি টাকা)। অর্থনীতির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তাই ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। উপগ্রহটি ১৫ বছরের জন্য মহাকাশে থাকবে।
যেভাবে কাজ করবে স্যাটেলাইট: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দেড় মিনিটের মাথায় ফ্যালকন-৯ ম্যাক্স কিউ অতিক্রম করে। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেটের স্টেজ-১ খুলে যাওয়ার পর স্টেজ-২ কাজ শুরু করে। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ এরপর সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং অবতরণ করে আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে। উৎক্ষেপণের সাড়ে ৩৩ মিনিটের মাথায় বঙ্গবন্ধু-১ পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে। রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাশূন্যে গা ভাসায় বাংলাদেশের প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। রকেট থেকে উন্মুক্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু-১ এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা। সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মহাকাশের ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নিজস্ব অরবিটাল ¯øটে স্থাপিত হবে এই কৃত্রিম উপগ্রহ। তবে অরবিটাল ¯øটে স্যাটেলাইটকে বসিয়ে কাজ শুরু করতে সময় লাগবে প্রায় দুই মাস। তখন গাজীপুরের জয়দেবপুর আর রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন থেকেই এর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে কক্ষপথকে চিহ্নিত করা হয় তিনভাবে। এগুলো হল লো আর্থ অরবিট (এলইও), জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (জিইও) এবং মিডিয়াম আর্থ অরবিট (এমইও)। সব কাজ শেষে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হবে ‘জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিটের’ একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট হল এমন একটি কৃত্রিম উপগ্রহ যেটি নিরক্ষ রেখা বরাবর ওই কক্ষপথে থেকে পৃথিবীকে ২৪ ঘণ্টায় একবার প্রদক্ষিণ করবে। এই প্রদক্ষিণ হবে পৃথিবীর আবর্তনের দিকে, অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্বে। ফলে গ্রাউন্ড স্টেশনের সাপেক্ষে উপগ্রহটি থাকবে প্রায় স্থির। স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ অথবা মাইক্রোওয়েভ সংকেত আকারে গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে পাঠানো তথ্য (আপ-লিংক) গ্রহণ করবে। ওই সংকেতকে কয়েকগুণ ‘অ্যামপ্লিফাই’ করে আবার তা ফেরত পাঠাবে (ডাউন-লিংক) পৃথিবীতে।
স্বপ্ন পূরণের পথে: এই স্বপ্নযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল এক দশক আগে। বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ২০০৮ সালে এ বিষয়ে একটি কমিটি করে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ২০০৯ সালে জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় রাষ্ট্রীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। এরপর নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিটের (আইটিইউ) কাছে আবেদন করে বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় রাশিয়ার কাছ থেকে ‘অরবিটাল ¯øট’ ইজারা নেওয়ার প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় সরকার। ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। একই বছরের ১১ নভেম্বর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কিনতে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান থ্যালাস এলিনিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি। এই প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সঙ্গে বিটিআরসি প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে। নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের প্রথম তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’র ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে গত ১৬ ডিসেম্বরে ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু হারিকেন আরমায় ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ওই লঞ্চ প্যাড থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বন্ধ থাকে। ফলে বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যায় এবং বাংলাদেশ সূচির জটে পড়ে।
থ্যালাস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে নির্মাণ, পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তর শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয় এ বছরের শুরুতে। সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছর ২৬ মার্চ এবং পরবর্তীতে এপ্রিলে উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য সময় জানানো হয়। গত ১২ এপ্রিল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রধান শাহজাহান মাহমুদ ৪ মে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা জানালেও পরে এ সময়ও পরিবর্তন হয়ে চলে যায় প্রথমে ৫ মে, এরপর ৭ মে এবং চূড়ান্ত সময় জানানো হয় ১০ মে। ওই দিন যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে অবশেষে ১১ মে ফ্লোরিডার কেনেডি সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকৈ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়।
দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায়। গাজীপুরের নলজানি বিটিসিএল কার্যালয়ের পাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রাউন্ড স্টেশনে ১০ টন ওজনের দুটি এন্টেনা বসানো হয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ আসবে দুই মাসে: দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পৌঁছালেও এর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আসতে প্রায় দুই মাস সময় লেগে যাবে। বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, স্যাটেলাইটটি তার নিজস্ব কক্ষপথে স্থাপিত করতে একমাস সময় লাগবে এবং পরবর্তীতে কারিগরি বিভিন্ন বিষয় শেষ করে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগবে আরও এক মাস। এ সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক মো. মেজবাহুজ্জামান জানিয়েছিলেন, উৎক্ষেপণের দুটি ধাপ রয়েছে, প্রথম ধাপটি হল লঞ্চ অ্যান্ড আরলি অরবিট ফেইজ (এলইওপি) এবং দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে স্যাটেলাইট ইন অরবিট। এলইওপি ধাপে ১০ দিন এবং পরের ধাপে ২০ দিন লাগবে। এ হিসেবে নিয়ন্ত্রণে আসতে লাগবে প্রায় এক মাস। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। এই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এর নিজস্ব কক্ষপথে ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল ¯øট স্থাপন করা হবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর হতে প্রায় দুই মাস লেগে যাবে।
বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে জলবায়ু, সম্প্রচার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে দেশের তথ্য-প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশ নিরবিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করতে পারবে, তেমনি সম্প্রচার সেবা, টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিটিএইচ সেবা প্রদান করতে পারবে। এছাড়া ট্রান্সপন্ডার লীজের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। পরীক্ষামূলকভাবে পর্যবেক্ষণ শেষে তিন মাস পর বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের। স্যাটেলাইটে থাকা ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি বাংলাদেশে নিজেদের ব্যাবহারের জন্য রাখা হবে। বাকী ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া কিংবা বিক্রি করা হবে বিদেশের কাছে। ২০টি ট্রান্সপন্ডার থেকেই দেশের টেলিভিশন চ্যানেল থেকে শুরু করে ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) পরিচালনাকরী প্রতিষ্ঠানগুলো ভাড়া নিতে পারবেন।
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ স্থাপনের লক্ষ্যে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল ¯øটের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনসকে ১৫ বছরের জন্য দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার দিতে হবে। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল, টেলিফোন, রেডিওসহ অন্যান্য যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এতে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে ১৪ মিলিয়ন ডলার গুণতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রম শুরু হলে দেশে শুধু বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয়ই হবে না, স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ আয় করা যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে এ স্যাটেলাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।