Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেষ মুহূর্তে টান টান উত্তেজনা দু’দলে

ইসিতে সংশয় আ.লীগের, বিএনপির ভয় পুলিশে

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি : প্রচারণার শেষ দিন আজ। খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে পুলিশী গ্রেফতার, নির্বাচন পরিচালনায় সমন্বয়ক কমিটি ও দু’দলের টানা বিতর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আ’লীগ বিএনপি তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। বৃহত্তর খুলনাঞ্চল তথা দক্ষিণাঞ্চলের জেলা উপজেলা পরষদের চেয়রম্যান এমনকি ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের স্ব স্ব প্রার্থীর পক্ষে খুলনায় এসে শেষ মুহুর্তে প্রচারণায় নেমেছে। গত ৩ দিন যাবত প্রায় দু’ডজন জেলার অধিবাসীদের বসবাসকারী এই শহরের ভোটারদের মন জয় করতে এসব নেতারা এখন মাঠে। আর যে কারণে ভোট রাজনীতির মাঠ এখন উত্তাপ্ত। যে কোন মুহূর্তে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন সাধারণ ভোটাররা। আর নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের আরো সহনশীল আচরণ করতে হবে।

এদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিরামহীন প্রচারণায় রয়েছেন মেয়র প্রার্থীরা। নগরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটছেন তারা। লক্ষ্য নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ভোটারদের কাছে পৌঁছানো। তবে, প্রতিটি ঘরে প্রার্থী নিজে পৌঁছাতে না পারলেও তাদের লোকজন ও কর্মী বাহিনী পৌঁছে দিচ্ছেন প্রার্থীর প্রতীক সম্বলিত লিফলেট, হ্যান্ডবিল। অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। তবে প্রচার প্রচারণার মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ রয়েছে সরব। আর বিএনপি’র নেতাকর্মীরা রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চাপে কোনঠাসা। তাই বুথের মধ্যে সাধারণ আমজনতার ফলাফল কি হবে তা বোঝার উপায় নেই। অপরদিকে খুলনা সিটি নির্বাচনে (কেসিসি) বড় দুই দলের বিতর্কে নতুন টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। প্রচার-প্রচারণার মধ্যে হঠাৎ করেই খুলনার রিটার্নিং অফিসারের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, সাবেক ছাত্রদল রাজনীতির সাথে জড়িত এই রিটার্নিং অফিসার প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনদের নিয়োগ দিয়েছেন। একই দিন ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
জানা যায়, আজ রোববার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। তবে শেষ মুহূর্তে এসে দু’দলের মেয়র প্রার্থী ও সমর্থকরা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের পাশাপাশি একজন যুুগ্মসচিবকে নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়ায় শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।
বিএনপি মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, রিটার্নিং অফিসারের বাইরে নির্বাচন পরিচালনায় একজন যুগ্ম-সচিবকে নির্বাচনে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠছাড়া করতে গ্রেফতার ও হয়রানি করছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশ রিটার্নিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তাদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে এর পাল্টা জবাবে ১৪ দল নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী সমন্বয়কারী এসএম কামাল হোসেন জানিয়েছেন, বিএনপি যে কোন উপায়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার অজুহাত খুঁজছে। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করতে কমিশন খুলনায় একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে নির্বাচনী সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে। এ নিয়েও মিথ্যাচার করছে বিএনপি
জানা যায়, খুলনা সিটি নির্বাচনে শুরু থেকেই বিএনপি নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে। এরমধ্যে দু’দফায় পুলিশ গ্রেফতার অভিযান চালালে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। খুলনার রিটার্নিং অফিসারকে নিয়ে আওয়ামী লীগের আপত্তির পর কমিশন ২৯ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি গঠন করেছে। কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন এই টিমের প্রধান সমন্বয়ক ও ডিএম শাহাদাৎ উদ্দিন উপ-প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবেন। রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি একান্ত পর্যবেক্ষক টিম গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ রোববার থেকে এই টিম খুলনায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে। তারা নির্বাচনকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন করবেন। তবে এ ধরনের ঘটনা রংপুর ও গাইবান্ধার নির্বাচনে আগেও ঘটেছে বলে জানান তিনি।
সূত্রমতে, নির্বাচনে জয়লাভের টার্গেট নিয়ে সকাল থেকেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে প্রধান দুই প্রতিদ্ব›িদ্ব আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু গণসংযোগ করছেন সমান তালে। এবারের নির্বাচন অত্যন্ত মর্যাদাকর। বিশেষ করে দুই প্রার্থীই দু’দলের মহানগর সভাপতি। যে কোন একজন পরাজিত হবে এটাই বাস্তবতা। সেক্ষেত্রে বিশ্লেষকদের ধারণা তালুকদার আব্দুল খালেক পরাজিত হওয়া মানে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ফের বড় ধরণের হোচট খাওয়া। পাশাপাশি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায়। যা জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। আবার বিএনপি প্রার্থী মঞ্জু পরাজিত হওয়া মানে নগরীতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ায়। নিজ দলের কোন্দলে থাকা অপর পক্ষের নীরব বিজয় বটে। ইতোমধ্যে মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি মনোনয়ন না পাওয়ায় তাকে সাময়িকভাবে বেশ হোচট খেতে হয়েছে। এ কারণে এবারের নির্বাচনকে ঘিরে চলছে জটিল সমীকরণ।
এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের প্রচারের শুরু থেকেই প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীর আশ্বাস ও অভিযোগের প্রতিযোগিতা চলছে। যা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভোটারদের মন ছুঁতে আশ্বাস আর একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরার বিষয়টি শেষ সময় এসে আরও চাঙা হয়ে উঠেছে। ফলে আশ্বাস ও অভিযোগ এখন প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রূপ নিয়েছে।
এ কারণে উভয় দলের কাছে নির্বাচনি প্রচারণা এখন সিটির উন্নয়নের ইস্যু হিসেবে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তার সমর্থকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশব্যাপী উন্নয়নের জোয়ার চলছে। খুলনার উন্নয়নে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত মেয়র প্রার্থী খালেককে বিজয়ী করার জন্য জোর আবেদন নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন তিনি। অপর দিকে বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার অনুসারীরা বলছেন, খুলনার উন্নয়নের চাকা বিএনপিই সক্রিয় করেছিল। আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, তাই মেয়র হিসেবে ধানের শিষের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আহŸান জানান। এছাড়া বিএনপি তার প্রচারণায় বলছে, আকাশ কুসুম কল্পনা না করে বিএনপি প্রকৃত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। পাশাপাশি উন্নয়নের নামে সরকারি দলের নেতারা মিথ্যা আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে তারা অভিযোগ করেছে। একই সঙ্গে অভিযোগ করা হচ্ছে, মিথ্যা আশ্বাসের ফুল ঝুড়িতে জনতার মন ভোলাতে না পেরে এখন পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশ দিয়ে ধর পাকড়ের করে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচনি কর্মকাÐ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রের করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দলীয় প্রতীকের এ নির্বানের মেয়র প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) ও সিপিবি মনোনীত মো. মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)। এছাড়া ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
এবারের নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ ও নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। ২৮৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৫৬১টি ভোট কক্ষ ও ৫৫টি অস্থায়ী ভোট কক্ষ রয়েছে ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ