Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উদারতা

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বেশ কিছুদিন থেকে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে নজিরবিহীন অর্থসংকট চলছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে, বড় কোনো চেক এলে কোনো কোনো ব্যাংক টাকা দিতে পারছে না। ক্ষেত্রবিশেষে এমনও হচ্ছে- ৫ লাখ টাকার চেক রিলিজ করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বড় কোনো খাতে অনেক ব্যাংক ঋণ দেয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। কোনো কোনো ব্যাংক অনুমোদিত ঋণের অর্থও দিতে পারছে না। বেসরকারি ব্যাংক ও ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর এই চলমান তারল্য সঙ্কট অভিশাপ হলেও সরকারি ব্যাংকের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য একদিকে যেমন নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে অপরদিকে সঙ্কটে থাকা আর্থিকখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি ব্যাংকগুলো ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংককে। যা সরকারি ব্যাংকের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অথচ একবছর আগেও এ রকম বিনিয়োগের সুযোগ ছিল না তাদের জন্য। আর বেসরকারি ব্যাংকের জন্যও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এ ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা মনে করছেনÑ নির্বাচনের বছর কোনভাবেই ব্যাংকের প্রতি মানুষের যাতে আস্থার সঙ্কট তৈরি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। সরকারি ব্যাংকের এভাবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পাশে দাঁড়ানোতে তারল্য সঙ্কট কাটাতে যেমন সহায়তা হবে, তেমিন ব্যাংকের প্রতিও মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ইনকিলাবকে বলেন, বেসরকারি কিছু ব্যাংকের তহবিল সঙ্কট থাকায় দায়বদ্ধতা থেকেই তাদের সাহায্য করা হচ্ছে। যাতে করে ব্যাংকিং খাত স্বাভাবিক থাকে। আশাকারি খুব শিগগিরই বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাড়াবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ শতাংশ গড় সুদে ১৫শ’ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণ-আমানত অনুপাত ছিল সর্বনি¤œ ৩৯ শতাংশ।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেছেন, চলমান তারল্য সংকট এড়াতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো ৮ থেকে ১০ শতাংশ সুদের জন্য স্বল্প মেয়াদে প্রাইভেট ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিচ্ছে। এ ফান্ড সংকট কাটাতে সাহায্য করবে। এই ঋণ আমাদের আরও বেশি আয় করতে সাহায্য করবে, তবে সংকট কাটাতে এটা সাময়িক পদক্ষেপ বলে মনে করেন তিনি। শামস-উল ইসলাম বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক ৯ থেকে ১০ শতাংশ সুদে স্বল্পমেয়াদি ভিত্তিতে চার হাজার কোটি টাকা লেনদেন করে। গত বছরের ডিসেম্বরে অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত ছিল ৫৭ শতাংশ এবং মোট আমানতের পরিমাণ ৫৪ হাজার কোটি টাকা।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান ইনকিলাবকে বলেন, একটি ব্যাংকের বিপর্যয় মানুষের মধ্যে আর্থিক খাতের উপর আস্থাহীনতার সৃষ্টি করবে। তাই বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পাশে দাড়িয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এতে বিনিয়োগের পাশাপাশি তারল্য সঙ্কটের সমাধান হবে। মানুষের মধ্যে আর্থিকখাত নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দূরীভূত হবে।
রূপালী ব্যাংকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা শওকত জাহান খান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য ঝুঁকি-মুক্ত বিনিয়োগ শ্রেণিবদ্ধ করা হয় না, তবে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের সাথে তিন হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত আমানত নবায়ন করেছে। তিনি জানান, ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত ৫৭ শতাংশ এবং মোট আমানতের পরিমাণ ৩২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে জনতা ব্যাংক সঙ্কটের সময় বাজারে নগদ সহায়তা সরবরাহ করতে পারেনি, কারণ ব্যাংকটির উচ্চ ঋণ-আমানত অনুপাত ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ফেব্রæয়ারি ও মার্চে ৪০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। ব্যাংকের গত ডিসেম্বরে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী বলেন, ৩ এপ্রিল পর্যন্ত পূবালী ব্যাংকের নগদ সংরক্ষিত অনুপাত ৬ দশািমক ৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমেছে। তবে তহবিল সঙ্কট আরও কিছুদিন থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকিং সেক্টরে মোট অতিরিক্ত তারল্য ছিল ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, এর মধ্যে ৪৩ শতাংশ ছিল রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংক গত মাসে আরো ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিংখাতে দিয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ