দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িটা আরম্ভ হয় হজরত নুহ (আ.)-এর জমানায়। আকিদাবিশ্বাস ও ভালোবাসার ক্ষেত্রে তার উম্মতেরা সে সময়কার আউলিয়ায়ে কেরাম ও সৎলোকদেরকে মাথায় চড়িয়েছিলো। এরশাদ হচ্ছেÑ‘নুহসম্প্রদায় বললো, তোমরা নিজেদের উপাস্যদের ত্যাগ কোরো না। চাই সে অদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক, নাসর হোক।’ (সুরা নুহ : ২৩)। আয়াতটির ব্যাখ্যায় দুটো বক্তব্য রয়েছেÑ১. অদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক, নাসর নুহসম্প্রদায়ের দেবদেবতা তথা মূর্তির নাম। হজরত ইবনে জায়েদ (রহ.)-সূত্রে ব্যাখ্যাটি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.), হজরত কাতাদা (রহ.), হজরত জাহহাক (রহ.)-এর। (জামিউল বয়ান : ১২/২৫৩)। ২. নূহ সম্প্রদায়ের মাঝে কিছু সৎলোক ছিলেন। যাদের মৃত্যুর পর লোকেরা তাদের মূর্তি বানায়। এরপর পরবর্তীরা সেগুলির পূজো আরম্ভ করে। ইমাম বোখারি (রহ.) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-সূত্রে এ কথাই বর্ণনা করেন। তিনি বলেনÑ‘এই পাঁচটি (অদ, সুওয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক, নাসর) হজরত নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের পাঁচজন সৎলোকের নাম ছিলো। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান তার উম্মতের অন্তরে একটি দুষ্টু বুদ্ধি গেঁথে দিলো। বললো, তারা যেখানে বসেছিলেন, সেখানে তাদের প্রতিচ্ছবি তৈরি করা হোক। তাদের নামে প্রতিটার নাম করা হোক। লোকেরা তাই করলো। তাদের নামে মূর্তিগুলি তৈরি করে তাদের নামেই প্রতিটার নাম রেখে দিলো। কিন্তু সেগুলির উপাসনা করা হতো না তখনও। যখন এই মূর্তির কারিগরদের সময়ের সবাই মারা গেলো এবং আসল ইতিহাস ও রহস্য ধীরে ধীরে জনমন থেকে মুছে যেতে লাগলো, তখন উপাসনা আরম্ভ হলো। এমনকি লোকেরা এ নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ে পড়লো।’ (সহিহ বোখারি : ২/৭৩২)। হজরত উরওয়া ইবনে জুবায়ের (রা.) ও হজরত মুহাম্মদ ইবনে কাব কুরজি (রহ.) বর্ণনা করেনÑ‘এই পাঁচজন হজরত আদম (আ.)-এর আত্মজ সন্তানদের মধ্য থেকে ছিলেন। অদ সবচেয়ে বড় ও সর্বাধিক সৎলোক ছিলেন।’ হজরত মুহাম্মদ বিন কাব (রহ.) বলেন), যখন তাদের মধ্য থেকে একজনের মৃত্যু হলো, তখন লোকেরা বেশ শোকাহত ছিলো। মুহূর্তটাকে অভিশপ্ত শয়তান বেশ সুযোগ মনে করে কাজে লাগালো। পরামর্শক হিসেবে বলতে লাগলোÑ‘তোমরা যেনো হরহামেশা তাকে দেখতে ও মনে রাখতে পারো, সেজন্য আমি তার মতোই একটি মূর্তি বানিয়ে দেবার কথা ভাবছি।’ লোকেরা সম্মত হলো। বললোÑ‘ঠিক আছে, বানিয়ে দাও তাহলে।’ এরপর শয়তান তার একটি মূর্তি বানিয়ে দিলো। এভাবে ঐ পাঁচজনের প্রতিজনের মৃত্যুর পর তার মূর্তি বানিয়ে দিলো অভিশপ্ত ইবলিস। আর সেগুলি তার পরামর্শে মসজিদে গেঁথে রাখা হতো। দেখতে দেখতে একসময় সেই মূর্তিগুলিকেই উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে লোকেরা। শেষমেষ তাদের সংশোধনের জন্যই আল্লাহতায়ালা হজরত নুহ (আ.)-কে পাঠালেন।’ (কুরতুবি : ১৮/৩০৮, আদ্দুররুল মানসুর : ৮/২৯৪, ফাতহুল বারি [মুখতাসার] : ৮/৬৬৭)। এ সম্বন্ধে আরেকটি বর্ণনা রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ বিন কায়েস ও হজরত মুহাম্মদ বিন কাব (রহ.) বলেনÑ‘ইয়াউক, ইয়াগুসসহ অন্যরা হজরত আদম (আ.) ও হজরত নুহ (আ.)-এর সময়ের মধ্যবর্তী সময়কালে কিছু লোক মারা যান। তাদেরকে মানতো, এমন কিছু বিশ্বাসগত লোকও ছিলো। যারা ঐ পাঁচজনের ওপর ভরসা করতো। প্রতিটা কাজে তাদেরকে অনুসরণ করতো। যখন তারা মারা গেলেন, তখন শয়তান তাদের অন্তরে এ কথা বসিয়ে দিলোÑযদি এই বুজুর্গদের মূর্তি বানানো হয়, তাহলে আল্লাহর ইবাদতে এদের চেষ্টা-সাধনা মনে পড়বে, ইবাদত-বন্দেগিতে আরও বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হবার মাধ্যম তৈরি হবে। এরপর ঐ পাঁচজনের মূর্তি বানানো হলো। যখন এই বংশপরম্পরা শেষ হয়ে পরবর্তী পরম্পরা এলো, তখন শয়তান আগত পরম্পরাদের বোঝালোÑতোমাদের পূর্বপুরুষরা তো এই মূর্তিগুলির পূজো করতেন। এসবের কারণেই তো তাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতো। এ কথা শুনে পরবর্তীরা মূর্তিগুলির পূজো আরম্ভ করে দিলো।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৪/৪২৬, ইবনে জারির : ১২/২৫৩, কুরতুবি : ১৮/৩০৮, মাআলিমুত তানজিল : ১/২৩২)।
এটাই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার প্রাথমিক গল্প। যাতে সৎলোকদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও বিশ্বাসের নামে তাদেরকে আল্লাহর সমতূল্য সাব্যস্ত করা হয়েছিলো। এর দ্বারা বোঝা যায়, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার প্রারম্ভিকতা তো মূলত বহু আগে হজরত নুহ (আ.)-এর সময়ে হয়েছিলো; তাঁর পরেও বহু আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-এর সময়কালে লোকেরা করেছিলো; কিন্তু ধর্মে বাড়াবাড়ি করে সেগুলিকে হুবহু ধর্মের নামেই চালিয়ে দেবার কাজটি ইহুদি-খৃস্টানরাই সর্বপ্রথম করেছে ধর্মের ইতিহাসে। এই বাড়াবাড়ির ফলেই ইহুদি-খৃস্টানরা তাদের মূল ধর্ম থেকে বেরিয়ে নিজেদের মনগড়া ধর্ম আবিষ্কার করেছিলো। এই বাড়াবাড়ির কারণেই তারা তাদের ধর্মীয়গ্রন্থ তাওরাত, ইঞ্জিলসহ নিজেদের ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো। এমনকি আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরিক করতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করেনি। বৈধ-অবৈধের মাঝে পার্থক্যজ্ঞান ভুলে গিয়েছিলো। হজরত আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-কে মর্যাদায় আল্লাহর আসনে আসীন করেছিলো। কখনও তাদের নিয়ে উপহাস করা থেকেও বিরত থাকেনি। তাদেরকে তুচ্ছজ্ঞান পর্যন্ত করতো। তাদেরকে হত্যা অবধি করেছিলো। আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখায় কায়েম তো ছিলোই না, বরং নিজ হাতে সেটিকে বরবাদ করে দিয়েছিলো। এজন্যই আল্লাহতায়ালা এই উম্মতকে ইহুদি-খৃস্টানদের মতোন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থাকবার জন্য বিশেষভাবে আদেশ করেছেন; যা আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে।
ধর্ম নিয়ে ইহুদিসম্প্রদায়ের বাড়াবাড়ি: ইহুদিসম্প্রদায় ধর্ম নিয়ে দু’ধরনের বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়েছেÑ১. ধর্ম থেকে কিছু বাড়িয়ে, ২. ধর্ম থেকে কিছু কম করে। একদিকে তারা হজরত উজায়ের (আ.)-কে খোদাপুত্র সাব্যস্ত করেছিলো। হজরত আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-এর মাঝে কিছু নবীর কবরকে ইবাদতস্থল বানিয়ে নিয়েছিলো। যা শরিয়তের সীমা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নামান্তর। প্রথম বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোরআনে কারিমের এরশাদ হলোÑ‘ইহুদিরা বলে, উজায়ের আল্লাহর পুত্র। আর খৃস্টানরা বলে, মাসিহ আল্লাহর পুত্র। এসব কেবল তাদের মুখের বুলি। এগুলিও তাদের পূর্বেকার কাফেরদের মতো কথা। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছেন। তারা কোথায় ঘুরপাক খাচ্ছে?’ (সুরা তওবা : ৩০)। দ্বিতীয় কথার সম্বন্ধে রাসুল (সা.) বলেনÑ‘ইহুদি-খৃস্টানদেরকে আল্লাহতায়ালা ধ্বংস করেছেন। তারা নিজেদের নবীদের কবরসমূহকে সেজদাস্থল বানিয়ে নিয়েছিলো।’ (মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক রহ. : ১৫৮৩, সহিহ বোখারি : ৪৩৭, সহিহ মুসলিম : ১২১৪, মুসনাদে আহমদ : ৭৮১৮)।
অন্যদিকে তারা বিভিন্ন আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-কে কষ্ট দেয়া, তাদের ওপর মিথ্যে অপবাদ আরোপ করা, তাদেরকে হত্যা করে কাফের ও অপরাধীর পরিচয় দিয়েছে। এমনিভাবে তারা হজরত ঈসা (আ.)-এর ওপর মিথ্যারোপ করেছে। তাকে জারজ বলে অপবাদ দিয়েছে। তাঁর শ্রদ্ধেয়া মা হজরত মারইয়াম (আ.)-কে ব্যভিচারী বলে মিথ্যারোপ করেছে। এরশাদ হচ্ছেÑ‘এই শাস্তি তাদের ওপর এ কারণে যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো; হজরত আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-কে অন্যায়ভাবে হত্যা করতো; আল্লাহর সীমাহীন অবাধ্যতা করতো এবং ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে একপর্যায়ে সীমাতিক্রম করে ফেলেছিলো।’ (সুরা বাকারা : ৬১)।
আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে, ইহুদিসম্প্রদায় হজরত আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-কে অন্যায়ভাবে হত্যা করতো। এর দ্বারা বোঝা যায়, এসব নিজেদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবার ফলেই করেছিলো। কেননা আল্লাহতায়ালা শেষ বাক্যে এরশাদ করেনÑ‘তারা সীমালঙ্ঘন করতো।’ এর নামই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা। এর দ্বারা তাদের আরও একটি বাড়াবাড়ি সম্বন্ধে ধারণা মেলেÑশরিয়তের যেসব কানুন তাদের পছন্দ হতো, মনমতো হতো, সেসবই কেবল তারা গ্রহণ করে নিতো। আর যা মনমতো হতো না, সেসব অস্বীকার করে বসতো। আর সেসব ইস্যুর জের ধরেই হজরত আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-কে হত্যা করতো। অন্য আরেকটি আয়াতে ইহুদিদের বদঅভ্যেস ও খারাপ স্বভাব সম্বন্ধে এরশাদ হচ্ছেÑ‘শেষাবধি কী সমস্যা তোমাদের! যখনই কোনো নবী তোমাদের কাছে ঐ বিধিবিধানসমেত প্রেরিত হন, যা তোমাদের মনমতো হতো না, আর তোমরা তার বিরোধিতা করতে, নবীদের ওপর মিথ্যারোপ করতে, এমনকি অনেক নবীকে হত্যাও করতে!?’ (সুরা বাকারা : ৮৭)।
এসব হচ্ছে ধর্ম নিয়ে সেই বাড়াবাড়ির পর্যালোচনা, যা নিজেদের মনমতো করে বেড়াতো ইহুদিসম্প্রদায়। ফলে তাদের যা ভালো লাগতো, গ্রহণ করতো; যা ভালো লাগতো না, ছেড়ে দিতো। এ কারণেই সত্যের দাওয়াত ও জয়গান শোনাবার অপরাধে তারা হজরত আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-এর ওপর মিথ্যাচার করতো। এমনকি তাদেরকে হত্যা পর্যন্ত করবার দুঃসাহস দেখিয়েছিলো। এভাবে এই সম্প্রদায় কখনও ধর্মে বেশি কিছু করে বাড়াবাড়ির স্বীকার হয়েছে, কখনো বা আবার ধর্মীয় বিধান থেকে খানিকটা কম করে বা বিলকুল ছেড়ে দিয়েও বাড়াবাড়িতে শামিল হয়েছে।
ধর্ম নিয়ে খৃস্টানসম্প্রদায়ের বাড়াবাড়ি: ধর্মের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, খৃস্টানস¤প্রদায়ও ইহুদিস¤প্রদায়ের মতো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির শিকার হয়েছিলো। একদিকে তারা হজরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করেছিলো; এমনকি তাদের অনেকে তাঁকে খোদা সাব্যস্ত করেছিলো। এ সম্বন্ধে বেশ অবাক করা মতবাদের শামিল হয়েছিলো। কোরআনে কারিমে সেসব ধ্যানধারণা, মতবাদ প্রত্যাখ্যাত সাব্যস্ত করা হয়েছে। হজরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ সাব্যস্তকারীদের ব্যাপারে এরশাদ হচ্ছেÑ‘বাস্তবতা হলোÑযারা মাসিহ ইবনে মারইয়ামকে আল্লাহ সাব্যস্ত করেছে, তারা কুফুরি করেছে। বিপরীতে হজরত মাসিহ বলেছেন, হে বনীইসরাঈল! আল্লাহর ইবাদত করো। যিনি তোমার-আমার পালনকারী। নিঃসন্দেহে যে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করে, আল্লাহতায়ালা তার ওপর জান্নাতকে হারাম করে দেন। জাহান্নাম তার ঠিকানা হয়ে যায়। আর জালেমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়িদা : ৭২)।
হজরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি সাহেব ঝঃঁফরবং ওহ ঈযৎরংঃরধহ উড়পঃৎরহব-সূত্রে প্রসিদ্ধ খৃস্টান গধঁৎরপব জবষঃড়হ-এর বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, তাদের আকিদাবিশ্বাসের ব্যাখ্যা এমনÑ‘ক্যাথলক আকিদার বক্তব্য হলো, সেই সত্তা যা খোদা ছিলো, খোদায়ি গুণাবলি ছেড়ে মানবহীন বনে গেছে। অর্থাৎ সে আমাদের মতো অস্তিত্বের আকৃতি ধারণ করেছে। যে স্থান-কালের মাঝে সীমাবদ্ধ। সঙ্গে কিছু সময়কাল অবধি আমাদের মাঝে অবস্থানও করে।’ (বাইবেল সে কোরআন তক : মোকাদ্দিমা/ ১/ ৫৯)।
ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ ড়ভ জবষরমরড়হং ধহফ বঃযরপং-সূত্রেও আলফ্রেডায়গারোর বক্তব্য নকল করেছেন তিনি। আলফ্রেডায়গারোর দাবি হলোÑ‘হজরত ঈসা (আ.) বাস্তবেই খোদাও ছিলেন, মানুষও ছিলেন। তাঁর এই দ্বিমুখী বাস্তবতার মধ্য হতে কোনো একটাকে অস্বীকার করা কিংবা তাঁর অস্তিত্বের ব্যাপারে দুটোরই একসঙ্গে হবার অস্বীকৃতি থেকে ভিন্ন ভিন্ন নব উদ্ভাবিত ধ্যানধ্যারণার সৃষ্টি হয়েছে। তাই গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হলো, হজরত ঈসা (আ.)-এর একই ব্যক্তিত্বে দুটি ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতার সংমিশ্রণ ছিলো বলে মনে করা।’ (বাইবেল সে কোরআন তক : মোকাদ্দিমা/ ১/ ৬০)।
বক্তব্যটির মাধ্যমে বোঝা গেলো, উল্লিখিত লোকটির শিরকের ভিত্তিও ঐ আকিদাগত বাড়াবাড়ি ও সীমিতিরিক্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এরই ভিত্তিতে সে হজরত ঈসা (আ.)-কে বান্দার মর্যাদা থেকে তুলে আল্লাহর মর্যাদায় উন্নীত করেছে। এমনকি তাঁকে আল্লাহ মনে করে তাঁর ইবাদত করাকে বৈধ সাব্যস্ত করেছে।
অপরদিকে হজরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র দাবিদারদের সম্বন্ধে পূর্বের আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। এরাই হজরত ঈসা (আ.)-কে তিন খোদার মধ্য হতে একজন মনে করে একত্ববাদের বিশ্বাসের বদলে ত্রিত্ববাদের দাবিদার বনে গেছে। যাদের ব্যাপারে এরশাদ হচ্ছেÑ‘বাস্তবতা হলোÑযারা বলে, আল্লাহ হলেন তিন খোদার মধ্য হতে একজন খোদা, তারা কুফুরি করেছে। অথচ এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। আর যদি এরা যা বলে তা থেকে ফিরে না আসে, তাহলে অবশ্যই এই কাফেরদের ওপর কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসবে।’ (সুরা মায়িদা : ৭৩)।
এই শিরকধর্মী আকিদার ব্যাখ্যায় উল্লিখিত হয়েছেÑ‘ত্রিত্ববাদে খৃস্টানদের দৃষ্টিতে এসব শব্দের আরেকটুখানি খোলাসা করে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তা হলোÑপিতা খোদা, পুত্র খোদা, আত্মাও খোদা। কিন্তু এই তিনটে মিলে তিনটে খোদা নয়; বরং একটাই খোদা। খৃস্টানদের মধ্য হতে আমাদের গোষ্ঠী বা দল যেভাবে ঐ তিনটের মধ্য হতে প্রতিটা জিনিসকে ভিন্ন ভিন্ন খোদা ও মনিব বুঝতে বাধ্য হয়, ঠিক তেমনিভাবে ক্যাথলক গোষ্ঠীও আমাদেরকে এ কথার নিষিদ্ধতাও করে, আমরা যেনো এসবকে তিন খোদা বা মনিব বুঝতে সক্ষম হই।’ (বাইবেল সে কোরআন তক : মোকাদ্দিমা/ ১/ ৪৫)। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।