বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
জাবি সংবাদদাতা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিরোধী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ কয়েকটি দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের পাদদেশে এই মানবন্ধন করে। এছাড়া তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্ছে এক সাধারণ সভা করে ১২৩ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ভিসি সমর্থক শিক্ষকরা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক সমাজ’ এই নামে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন সংগঠনের যাত্রা শুরু করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে এক শুভারম্ভ অনুষ্ঠান করে তারা। এর মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিভক্তি প্রকাশ্যে পূর্ণাঙ্গরূপ লাভ করলো। বিশ্ববিদ্যালয়টির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও সাবেক ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের মধ্যকার দ্ব›েদ্বর কারণে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। পূর্বে ভিসি ফারজানা ইসলাম সাবেক ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের আস্থাশীল ব্যাক্তি ছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় অধ্যাপক শরীফ এর প্যানেল থেকেই তিনি প্রথম মেয়াদে ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় অধ্যাপক শরীফ প্যানেলের সাথে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয় ভিসি ফারজানা ইসলামের। এরপর থেকে ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে অধ্যাপক শরীফপন্থী শিক্ষকরা। পরবর্তীতে গত ১৮ ফেব্রæয়ারি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি হিসেবে পুনঃনিয়োগ দিলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে অধ্যাপক শরীফ পন্থী শিক্ষকরা। তারা এই নিয়োগের বিরোধীতা করে হাইকোর্টেও রিট করে। এমন অবস্থায় ভিসি ফারজানা ইসলামের পাশে দাড়ায় অধ্যাপক শরীফ বিরোধী শিক্ষকরা। তারা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক সমাজ’ নামে নতুন সংগঠন গড়ে তোলে। এই সংগঠনের ব্যানারে তারা ভিসির পুনঃনিয়োগের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। তারই ধারাবাহিকতায় এই সংগঠনটি গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে একক প্যানেল দিয়ে ভিসি বিরোধী শিক্ষকদের প্যানেলের প্রার্থীদেরকে পরাজিত করে সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সম্পাদকসহ মোট ৮টি পদে জয়লাভ করে। এছাড়া ভিসি মেয়াদউত্তীর্ণ ২টি অনুষদ ও ৯টি হলের প্রাধ্যক্ষদেরকে অপসারণ করায় এর প্রতিবাদে গত ১৭ এপ্রিল সর্বাত্মক ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় ভিসি বিরোধী শিক্ষকদের সংগঠনটি। তখন তারা ধর্মঘটের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ ডিপোতে তালা দেয়। এই তালা খুলতে ভিসিপন্থী শিক্ষকরা সেখানে উপস্থিত হলে দুই গ্রæপের শিক্ষকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভিসি বিরোধী শিক্ষকরা দাবি করেন তাদের ৬ শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছে। তারা এর বিচার দাবি করেন। তখন ভিসি এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু এই তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখান করে ফের আন্দোলনের ঘোষণা দেয় ভিসি বিরোধী শিক্ষকরা। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ৩ মে সংবাদ সম্মেলন করে ভিসি পন্থী শিক্ষকরা। তারা ভিসির পক্ষে তাদের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষকরা গণতন্ত্রের নামে নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আন্দোলন করছেন। তারা চাচ্ছেন আজীবন ক্ষমতায় থাকতে। তাই মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রাধ্যক্ষ ও ডিনদেরকে অপসারণ করার পরও তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন।’ এছাড়াও তারা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাক্ট মেনেই অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনঃনিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু তারা এ্যাক্টের অপব্যাখা দিয়ে ভিসির নিয়োগের বিরোধীতা করে আন্দোলন করে যাচ্ছেন।’ এদিকে গতকাল মঙ্গলবারের ভিসি পন্থী শিক্ষকদের সংগঠনের শুভারম্ব অনুষ্ঠান থেকে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে প্রধান উপদেষ্টা করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন। কমিটিতে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল আলমকে আহবায়ক ও সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া অধ্যাপক মো. ফরহাদ হোসেন, অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান চেীধুরী ও অধ্যাপক মুহম্মাদ হানিফ আলীকে যুগ্ম আহŸায়ক করা হয়েছে। অন্যদিকে ভিসি বিরোধী শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১২৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদারকে সভাপতি ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক এবং অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবিরকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। এছাড়াও কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ১৩ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৭ জনসহ কেন্দ্রীয় ও অনুষদ কমিটির বিভিন্ন পদে অন্যান্য শিক্ষকরা দায়িত্ব পেয়েছেন। কমিটি ঘোষণাকালে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক আমির হোসেন। কমিটি ঘোষণা শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের সামনে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে বক্তরা দাবি করেন, গত ১৭ এপ্রিল তাদের ঘোষিত সর্বাত্মক ধর্মঘট পালনের অংশ হিসেবে পরিবহণ ডিপোতে তালা দিতে গেলে ভিসিপন্থী শিক্ষকদের হাতে তাদের ৬ শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান তারা। এছাড়া ভিসি বিরোধী এসব শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন ও অ্যাক্ট বিরোধী কার্যকলাপের সমালোচনা করেন। সেই সাথে তারা প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, সিন্ডিকেট ও সিনেট সভা আহবান, দুটি অনুষদের ডিন অপসারণ ও ৯টি হলের প্রভোস্টদেরকে অপসারণের প্রতিবাদসহ অবিলম্বে ভিসি প্যানেল ও জাকসু নির্বাচনের দাবি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।