বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সাম্প্রতিককালের সর্বনিম্ন পাশের হার নিয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের এবারের মাধ্যমিকের ফলাফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। এযাবতকালের মধ্যে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এবার সর্বাধীক সংখ্যক ১লাখ ৩হাজার ১২৪ ছাত্রÑছাত্রী মাধ্যমিক পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করলেও পাশের হার সর্বনিম্ন হওয়ায় হতাশ অভিভাবক মহল থেকে সকলেই। এবারের মাধ্যমিকে বরিশাল বোর্ডে পাশের হার শতকরা ৭৭.১১%। যা গতবছর ছিল ৭৭.২৪ভাগ। ২০১৬তে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ছিল ৭৯.৪১%,জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্নের সংখ্যা ছিল ৩হাজার ১১৩। ২০১৫তে পাশের হার ছিল ৮৪.৩৭%, জিপিএ-৫ নিয়ে পাশ করে ৩,১৭১ছাত্রÑছাত্রী। এর আগের বছর-২০১৪তে পাশের হার ছিল ৯০.৬৬%, আর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪,৭৬২। ২০১৩-এর মাধ্যমিক পরিক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ছিল ৮৮.৬৩%, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩,৫১৪। ২০১২তে পাশের হার ছিল ৮৬.৬৭%। আর জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় ২,৭৩০ছাত্র-ছাত্রী। এবারো বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন ছাত্র-ছাত্রীই পাশ কররেনি। যে সংখ্যা গত বছর ছিল ২টি। অপরদিকে এবারের মাধ্যমিক পরিক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে শতভাগ পাশ করেছে ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা। গতবছর এধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৮৭। এবারো ঐতিহ্য বজায় রেখে বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ৪৬ছাত্রর সকলেই জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
অপরদিকে দক্ষিনাঞ্চলের মাধ্যমিকের ফলাফলে এবারো ছেলেদের তুলনায় পড়াশোনা করেই মেয়েরা ভাল করেছে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই। এ শিক্ষাবোর্ডে ছেলেদের গড় পাশের হার ৭৫.২৩ হলেও মেয়েরা পাশ করেছে ৭৯.০২%। আর বিজ্ঞান বিভাগে পাশের হার গড় পাশের হারের চেয়ে ১০%-এরও বেশী, ৮৯.৭০%। যার মধ্যে মেয়েদের পাশের হার ৯১%, আর ছেলেরা ৮৮.৫৯%। তবে এবার জিপিএ-৫ নিয়ে উত্তীর্ণের সংখ্যা গতবছরের তুলনায় ৫০শতাংশ বাড়লেও সে সংখ্যা মাত্র ৩হাজার ৪৬২ বা মোট পরিক্ষার্থীর ৩.৩৬%। গতবছর জিপিএ-৫ নিয়ে পাশের সংখ্যা ছিল মাত্র ২হাজার ২৮৮ বা মোট পরিক্ষার্থীর শতকরা মাত্র ২.৪৪ভাগ।
তবে এবারো জিপিএ-৫ নিয়ে উত্তীর্ণের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকেই সর্বাধীক সংখ্যক ৩,২২৮ ছাত্রÑছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে। মানবিক বিভাগের ৪৭হাজার ৮৫৭ পরিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১০৬জন ও বিজনেস স্টডিজের ২৮ হাজার ৮০৯ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ১২৮জন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
এবারের মাধ্যমিক পরিক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ৭৭.১১% হলেও ছেলেদের পাশের হার ৭৫.২৩% এবং মেয়েদের ৭৯.০২%। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এবারের মাধ্যমিক পরিক্ষায় মানবিক বিভাগে গড় পাশের হার মাত্র ৬৮.৬৯% হলেও ৭২.২০% ছাত্রী ও ৬৩.৬৬% ছাত্র পাশ করেছে। অপরদিকে ব্যবসায় শিক্ষায় গড় পাশের হার ৭৯.১৫% হলেও ছাত্রীদের উত্তীর্ণের হার ৮২.৮৪%। এবিভাগে ছাত্রদের পাশের হার ৭৩.৬০%।
এবারে দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলার এক হাজার ৪২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১লাখ ৩হাজার ১২৪ ছাত্রÑছাত্রী ১৭২টি কেন্দ্রে মাধ্যমিক পরিক্ষায় অংশ নেয়। বরিশাল বোর্ডের ৬টি জেলার মধ্যে পাশের হারে এবার ঝালকাঠী জেলার অবস্থান সর্বনি¤েœ। পাশের হার মাত্র ৬২.২৫% । অথচ গতবছর এ জেলার অবস্থান ছিল ছয় জেলার শীর্ষে। পাশের হার ছিল ৮২.৭৮%। এবার ভোলা জেলার অবস্থান ছয় জেলার শীর্ষে । বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার মধ্যে এবার বরিশাল বিভাগীয় সদরের অবস্থান ৪র্থ। গতবছর ৮০.১৪% পাশ করে দ্বিতীয়স্থানে থাকা বরিশালে এবার পাশের হার প্রায় চারভাগ কমে ৭৬.৯৫% এ স্থির হয়েছে। গত বছর তৃতীয়স্থানে থাকা পিরোজপুরে পাশের হার প্রায় ২ভাগ বেড়ে একই অবস্থান ধরে রেখেছে। জেলাটিতে এবছর ৮০.৭২% পাশ করেছে। গতবছর পাশের হার ছিল ৭৮.৫৯%। অপরদিকে পাশের হার ৭৫.৯৪% থেকে ৭৪.৬২’এ হৃাস পেয়ে পটুয়াখালী জেলার অবস্থান ৪র্থ থেকে পঞ্চমে নেমেছে। গতবছর পঞ্চম অবস্থানে থাকা বরগুনা জেলায় পাশের হার ৭২.২১% থেকে ৮১.৭০% বৃদ্ধি পাওয়ায় অবস্থানও ৫ম থেকে দ্বিতীয়তে উঠে এসেছে। আর গতবছর সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকা ভোলা জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা এবার ৮৩.০২% পাশকরে বিভাগের ছয় জেলার শীর্ষে উঠে এসেছে। গতবছর ঐ জেলাটিতে পাশের হার ছিল মাত্র ৭০.৫৮%।
গতকাল প্রকাশিত বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক পরিক্ষার ফলাফলে জিপিএ ৪<৫ গ্রেড নিয়ে পাশের হার ছিল ১৬.৪৪%। যা গতকছর ছিল ২৪.৫০%। এবার জিপিএ ৩.৫<৪ গ্রেডে পাশের হার ১৬.৪৩। গতবছর ছিল ২১.১৭%। এবার জিপিএ ৩<৩.৫ নিয়ে পাশের হার ২০.৩৬। যা গতবছর ছিল ১৮.৩৫%। জিপিএ ২<৩ গ্রেডে পাশ করেছে ২০.৮০% ছাত্র-ছাত্রী। এই গ্রেডে গত বছর পাশের হার ছিল ১০.৪৯%। আর ১<২গ্রেড প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এবছর ০.৩৫%। যা গত বছরের মাধ্যমিকে ছিল ০.২৯%। শিক্ষা বোর্ডের এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবার বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের এএসসির ফলাফল খারাপ হবার সাথে খারাপ ফলে পাশের হারও যথেষ্ঠ বেড়েছে।
এবারের মাধ্যমিকের ফলাফল সম্প্রতিককালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকার পেছনে কিছু কিছু শিক্ষক নানা অজুহাত তুলে ধরলেও একাধীক দায়িত্বশীল মহল নাম প্রকাশ না করার শর্তে এজন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগীতা সহ শ্রেণী কক্ষে লেখাপড়ার স্বল্পতা সহ অতিমাত্রায় কোচিং নির্ভরতাকেও দায়ী করেছেন। তাদের মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়ার মান যেমন অবনতিশীল, তেমনি কোচিং বানিজ্যের নামে শুধুমাত্র মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভরশীল অনেক ছাত্র-ছাত্রীই পরিক্ষার হলে গিয়ে সঠিক উত্তর লিখতে পারছেনা। পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই ছাত্রÑছাত্রীদের মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট নিয়ে অধিক সময় ব্যায় করায় লেখাপড়া তাদের কাছে এখন আর মূখ্য বিষয় নয়। অনেক স্কুল ছাত্রই বেশী রাত পর্যন্তই রাস্তায় আড্ডায় ব্যস্ত থাকছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে মাধ্যমিক সহ উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়ার মান ক্রমশ অবনতিশীল বলেও অভিযোগ উঠছে।
গতকাল দুপুরে বরিশাল মহসগরী সহ দক্ষিনাঞ্চলের স্কুল থেকে এসএসসি পরিক্ষার ফল প্রকাশর পরে হাসি কান্নার রোল লক্ষ করা গেছে। আনন্দের বণ্যার সাথে অনেক ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের চাঁপা আর্তনাদেও পরিবেশ ছিল ভারাক্রান্ত । বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ মিষ্টির দোকান খালি হয়ে গিয়েছে দুপুরের পর পরই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।