Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফ্রিকার যে শহরটি ইসলামের ‘চতুর্থ পবিত্র’ শহর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শত মসজিদ আর মাজারের শহর হারারকে ইসলাম ধর্মের চতুর্থ পবিত্র শহর হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকে। আবার শিল্প সংস্কৃতি চর্চা আর পুরোনো ঐতিহ্য লালনের কারণে কেউ কেউ শহরটিকে অভিহিত করেন জীবন্ত জাদুঘর হিসেবেও।
খরা আর দারিদ্র্যের কারণে ইথিওপিয়া যখন প্রায়ই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরের বিষয় হচ্ছে, তখন এই হারার শহরটি অনন্যতা পেয়েছে ভিন্নধর্মী সব কারণে। হারার এমন একটি শহর, যেটিকে নানা নামে ডাকা হয় - কেউ এটাকে ডাকেন সন্তুদের শহর, কেউবা ডাকেন শান্তির শহর, কেউ কেউ এটাকে অভিহিত করেন জীবন্ত জাদুঘর বলে।
শহরটির ঠিক বাইরেই যে বিরাট পাথুরে দেয়ালটি রয়েছে, সেটি তের থেকে ষোল শতকের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে তৈরি। এটিকে কেন অনেকেই ইসলাম ধর্মের চতুর্থ পবিত্র শহর বলে বিবেচনা করেন, সেটা অনুমান করাও হয়তো কঠিন নয়। হারারের রাস্তা আর সরু অলিগলিগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মসজিদ আর মাজার। সংখ্যায় একশো'র কম হবে না।
শতকের পর শতক ধরে শহরটি ইসলামিক পÐিতদের একটি আখড়া আর আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আর শহরের বড় বড় বাজারগুলোতে চোখে পড়ে মহিলারা রঙবেরংয়ের কাপড় আর মসলার পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
সুপ্রাচীনকাল থেকেই হারারের সাথে বাণিজ্য চলে আসছে হর্ন অব আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারত - এমনকি চীনেরও।
স্থানীয় ঐতিহাসিক আবদুস সালাম ইদরিস বলেন, হারারের রয়েছে সাত হাজার বছরের ইতিহাস। এই নগরের গোড়াপত্তন করেন হারলা জনগোষ্ঠী, এরা মূলত এসেছেন সোমালি এলাকা থেকে। এই শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক আকর্ষণ কেন্দ্র হচ্ছে হারার জাদুঘর। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিখ্যাত ফরাসি কবি আর্থার রাম্বু, যিনি একসময় হারারে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবাদে বসবাস করতেন।
জাদুঘরটির ভেতরে একটি গ্যালারি রয়েছে ছবিতে বোঝাই, যেগুলো পর্যটকদেরকে পুরনো দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ছবিগুলোর অধিকাংশই সাদাকালো, কিছু একেবারে উনিশ শতকের গোড়ার দিকের। এখানে ছবি রয়েছে জাদুঘর প্রতিষ্ঠাতার, শহরের বিভিন্ন নেতাদের, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার, বাজারের এমনকি মসজিদ এবং গির্জারও।
সায়ো আদুস জন্মেছেন হারার শহরে, তবে বসবাস করেন বিদেশে। তিনি বলেন, পৃথিবীতে এই শহরের মতো আর কোন জায়গা আছে বলে মনেই হয় না আমার। এখানে এসে আমি সত্যিকারের একটি পারিবারিক বন্ধনের অনুভূতি পাই, যা এই শতকে খুবই বিরল একটি ব্যাপার।
‘এখানকার সবকিছুই অপরিবর্তিত, আগের মতোই রাখা হয়েছে। এখানে সেই পুরনো দেয়াল, সরু পাথুরে রাস্তা, সবই আগের মতোই। যদিও শহর বাড়ছে, কিন্তু পুরনো কিছুই এখানে বদলে ফেলার চেষ্টা নেই - যেটা আমি খুবই পছন্দ করি’। যখন রাত নামে তখন দেখা যায় শহরটির আরেকটি দারুণ ব্যাপার। এই শহরের বাসিন্দারা প্রাচীনকাল থেকেই বংশপরম্পরায় রাতের বেলা বুনো হায়েনাদের খাবার খাওয়ায়।
এক রাতে দেখা যায়, শহরটির একটি খোলা প্রান্তরে কমলা শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি প্রান্তরটির এক কোনায় গিয়ে বসেছেন। তার হাতে গোশতভর্তি একটি ঝুড়ি। তিনি হায়েনাদের ডাকছেন। এক পর্যায়ে দুটো হায়েনা এগিয়ে এলো ৩২ বছরের বিনিয়াম আশেনাফির দিকে। তিনি হায়েনাদের দিকে গোশত ছুড়তে শুরু করলেন। আশেপাশে আরও দশটির মতো হায়েনা তখন সেখানে জড়ো হয়েছে। বেশ ভীতিকর একটা ব্যাপার।
বিনিয়াম আশেনাফিকে জিজ্ঞেস করা হলো, হায়েনাদের খাবার দেয়া তার কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর জবাব: ‘আমি এটা করি, কারণ আমি পশুদের পছন্দ করি। এই প্রাণীরা আবর্জনা খেয়ে আমাদের বিরাট উপকার করে। আর তারা তো স্থানীয়দের উপর কোন হামলা চালায় না’।
হারার শহরের প্রাচীন অংশটি পরিচিত হারার জুগল নামে, যেটির গোড়াপত্তন ঘটেছিল ১০১০ বছর আগে। এটি প্রাচীর বেষ্টিত। স্থানীয়রা দাবি করেন, এই অঞ্চলের মানুষেরা এমনকি মদীনার বাসিন্দাদেরও আট বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
বলা হয়, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স:)-এর সাহবিরা ষষ্ঠ শতাব্দীতে মক্কায় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে এখনকার এই ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া অঞ্চলে হিজরত করে আসেন।
‘হারার এবং হারলা জনগোষ্ঠী ৭ হাজার বছরের পুরনো। তবে মূল শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এক হাজার এক দশক আগে,’ বলছেন জনাব আবদুস সামাদ। ষোড়শ শতকে ৪০ বছরেরও বেশি সময় এটি হারারি রাজ্যের রাজধানী ছিল। তবে ১৮৮৭ সালে তা ইথিওপিয়ার অংশ হয়ে যায়।
হারার শহর তার ঐতিহ্যের বেশিরভাগটাই ধরে রেখেছে - এর সমৃদ্ধশালী মুসলিম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এখনও বহমান। জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বিষয়টিকে একটি ‘বিরল উদাহরণ’ হিসেবে দেখছে। সে কারণে স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, শিল্প সংস্কৃতির বাতিঘর আর ধর্মীয় স¤প্রীতির লীলাভূমি হিসেবে আফ্রিকা মহাদেশের জন্য হারার শহরের দেয়ার আরও অনেক কিছুই আছে। সূত্র : বিবিসি।

 



 

Show all comments
  • khan ৫ মে, ২০১৮, ২:২৭ এএম says : 0
    মক্কাকেই আল্লাহ একমাত্র পবিত্র শহর বলেছেন ,হ্যাঁ ইসলামের গুরুত্বের দিক দিয়ে অনেক শহর আছে । ...................
    Total Reply(0) Reply
  • রমিজ উদ্দিন ৫ মে, ২০১৮, ৩:১৭ এএম says : 0
    এই নিউজটির জন্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • ৫ মে, ২০১৮, ৬:৩৪ এএম says : 0
    Akon kunta boro suto na vebe sob muslim ak ho na hole bidormira ak sate agat korte redi.এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফ্রিকার

৩ আগস্ট, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ