Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বায়ু দূষণেও ঢাকার অবস্থান তলানিতে

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চরম মাত্রায় বায়ুদূষণের শিকার মেগাসিটিগুলোর মধ্যে বিশ্বে ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। গত বুধবার প্রকাশিত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ রিপোর্টে দেখা যায়, বায়ুদূষণের শিকার বিশ্বের শীর্ষ নগরীগুলোর অবস্থান মূলত দক্ষিন এশিয়া এবং আফ্রিকায়। বিশ্বের ১০৮টি দেশের ৪ হাজার ৩০০ শহরের তালিকায় বায়ুদূষনে প্রথম ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লী, দ্বিতীয় মিশরের রাজধানী কায়রো, তৃতীয় ঢাকা, চতুর্থ ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী বোম্বাই এবং চীনের রাজধানী বেইজিং রয়েছে পাঁচ নম্বরে। দিল্লী বা কায়রোর মত শহর বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে ঢাকার চেয়েও খারাপ অবস্থানে আছে, এমন দাবী করে আমাদের কেউ কেউ হয়তো কিছুটা আত্মপ্রসাদ লাভ করতে পারেন। তবে শুধুমাত্র বায়ুদূষণের মাত্রা দিয়েই কোন মেগাসিটির নিরাপত্তা বা বাসযোগ্যতার পরিমাপ করা যায়না। ঢাকা যে অর্থে বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য ও অনিরাপদ শহর দিল্লী, কায়রো, বোম্বাই বা বেইজিং সে অর্থে নিকৃষ্ট শহর নয়। যে কোন শহর বা জনপদের মানুষের সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বেঁেচ থাকার প্রধান অবলম্বন বায়ু, পানি, মাটি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, জননিরাপত্তা এবং আধুনিক নাগরিক জীবনের সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তায় ও ফুটপাথে স্বাচ্ছন্দে ও নির্বিঘেœ চলাচলের অবাধ সুযোগ। নিরাপদ সুপেয় পানি, গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা ইত্যাদির উপর একটি নগরীর বাসযোগ্যতার মান ও অবস্থান নির্ভর করে।
প্রায় এক দশক ধরে ঢাকা নগরী বিশ্বের বসবাসযোগ্য নগরীর তালিকায় সর্বনি¤œ সারিতে অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং যাই হোক, এই নগরীর নাগরিকদের জন্য বিড়ম্বনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এখানকার চারপাশের নদীগুলোর ওপর ভয়াবহ মাত্রার দূষণ ও দখলবাজি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ণ, শহরের অভ্যন্তরে শিল্প কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক দূষণ, নাগরিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনা, অপ্রতুল রাস্তায় অসহ্য যানজট সহ নাগরিক জীবনের কোন ক্ষেত্রেই ঢাকা নগরী কাঙ্খিত বিশ্বমান বজায় রাখতে পারছেনা। এখনো বর্ষা আসেনি। গত কয়েকদিনে কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতেই ঢাকার প্রায় সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এবং ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে যেতে দেখেছি। নগরবাসির জন্য এটি কোন নতুন বা আকষ্মিক অভিজ্ঞতা নয়। যানজট, পানিবদ্ধতা, পয়:জট, ফুটপাথ অপদখল ইত্যাদি সমস্যাগুলো গত দুই দশক ধরে ক্রমে জটিল আকার ধারণ করলেও এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এখন আমরা যখন দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নিয়ে যাওয়ার শর্ত পুরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছি, তখন দেশের রাজধানী শহরটি বিশ্বের অন্যতম দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পাচ্ছে। পরিসংখ্যানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা যেন মেলানো যাচ্ছেনা।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ জরিপ অনুসারে বায়ু দূষনের কারণে ২০১৬ সালে বিশ্বে ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত ২ বছরে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে বলেও প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে। ঢাকার নাগরিক জীবনের বিড়ম্বনা এখন এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, প্রতিদিন কর্মস্থলে পৌঁছানো এবং নিরাপদে বাড়ি ফেরার অনিশ্চয়তার উদ্বেগে কাটাতে হচ্ছে। সেখানে বায়ু ও পানি দূষণের মত পরোক্ষ ও দীর্ঘমেয়াদী বিপদ সম্পর্কে ভাবার ফুরসতই যেন অধিকাংশ নগরবাসির নেই। কয়েকদিনের মাঝারি বৃষ্টিপাতে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, আগামী বর্ষায় ভারী বৃষ্টিতে কী হবে তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। অতএব বায়ু দূষনের চাইতে রাস্তায় নির্বিঘেœ চলাচলের নিশ্চয়তাকেই প্রাধান্য দিতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। অ্যাজমা, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ জনস্বাস্থ্যে নানাবিধ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টিতে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর হার উদ্বেগনক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনেও বিশেষজ্ঞরা মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণকে দায়ী করছেন। বায়ুদূষণ রোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষত পরিকল্পিনা শিল্পায়ন, নগরায়ন টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তবে এই মুহুর্তে ঢাকার নাগরিকরা এই বর্ষায় রাস্তায় পানিবদ্ধতা, উন্নয়নের নামে রাস্তা কেটে ফেলে রেখে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলার চরম বাস্তবতা থেকে মুক্তি চায়। নগরীর পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থাকে বৃষ্টির পানি নদীতে বা নি¤œ ভ‚মিতে সরিয়ে দেয়ার উপযোগী রাখা নগর কর্তৃপক্ষের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। নগরীর আবাসিক এলাকা এবং কলকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত উন্নয়ন নিশ্চিত করার দায়িত্বও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে এসব বিষয়ে নজরদারি ঠিক রাখা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বায়ু দূষণ

৯ জানুয়ারি, ২০২২
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০
১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন