পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া : মরা গরুর চামড়া ছাড়ানোর অভিযোগে ২০১৬ সালে জনসমক্ষে বেত্রাঘাতের শিকার ভারতের ৪ জন দলিত আরো প্রায় ৩শ’জনকে নিয়ে রোববার বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। ভারতে জাতি ভিত্তিক নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তারা হিন্দু ধর্ম ছেড়েছেন। হিন্দুধর্ম ত্য্যাগের কথা ঘোষণা করার পর এক সপ্তাহ আগে এই ৪ দলিত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আবারো হুমকি দেয়া হয় বলে জানা যায়। রোববার বেত্রাঘাতের শিকার ব্যক্তিরা ও পরিবারের ৪৫ জন সদস্য গুজরাটের উনা থেকে ৪৫ কিমি দূরবর্তী তাদের নিজ গ্রাম মোটা সমাধিয়ালায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন। বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিতদের মধ্যে রয়েছেন বালু সারভাইযা, তার স্ত্রী কুনভারবা, ছেলে বাশরাম ও তার স্ত্রী মনিষা, দ্বিতীয় ছেলে রমেশ ও তার স্ত্রী সানাল, দুই ভ্রাতুষ্পুত্র বেচার ও অশোক, বালুর মেয়ে বনিতা এবং তাদের আরো কিছু আত্মীয়-স্বজন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাথে ফোনে সাক্ষাতকারে সারভাইয়া বলেন, দু’বছর আগে আমাদের ছেলেদের নির্মমভাবে বেত দিয়ে পেটানো হয়। আজ পর্যন্ত রাজ্য সরকার জমি বা চাকরি দিয়ে কোনো সাহায্য করেনি। এমনকি আমরা কোনো বিচারও পাইনি। অভিযুক্তরা জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এ ঘটনার পর দলিতদের মধ্যে অসন্তোষ চলছিল। আমরা লিতদের উপর নিপীড়নের প্রতীকে পরিণত হলেও আমাদের প্রিিত বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে। আমাদের নিজ সম্প্রদায়ের সদস্যরা আমাদের বলেছে যে এত কিছু সহ্য করেও কেন আমরা এ ধর্মে আছি। আজো আমরা সেই বেত দিয়ে পেটানোর ভিডিও দেখে শিউড়ে উঠি।
তিনি বলেন, দলিত বিদ্রোহ এগিয়ে নিতেই আমরা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করলাম। আরও যে সব দলিত নীরবে নির্যাতন ভোগ করছে, তারাও আজ অথবা কাল বৌদ্ধ হয়ে যাবে।
সারভাইয়া গোরক্ষকদের কাছেও একটি বার্তা পাঠিযেছেন। বলেছেন, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা মরা গরুর চামড়া ছাড়ানোর এ পেশা এমনিতে গ্রহণ করেননি, সমাজের গভীরে প্রোথিত জাতিভেদ প্রথার কারণে তাদের (গোরক্ষকদের) পূর্বপুরুষরা দলিতদের এ পেশায় নিয়োজিত করেন।
সারভাইয়ার পরিবার আয়োজিত ‘ধম্ম দীক্ষা মহোৎসব’ নামের এ অনুষ্ঠানে বাদগামের এমএলএ জিগনেশ মেওয়ানির মত কোনো বিশিষ্ট দলিত নেতা উপস্থিত ছিলেন না। এতে মেওয়ানি ও উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনজন বৌদ্ধ ধর্মগুরু ধর্ম পরিবর্তনের অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
তাদের উপর এখনো প্রচন্ড বৈষম্য ও নিষ্ঠুর নিপীড়ন চলছে অভিযোগ করে সারভাইয়া পরিবার জানুয়ারিতে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেছিল।
সারভাইয়া অনুষ্ঠানে না আসায় মেওয়ানির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, মেওয়ানি দলিত ইস্যু তুলে ধরে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন এবং গুজরাটে দলিত আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠেন। কিন্তু তারপর তিনি আমাদের দেখতে বা আমাদের অবস্থা জানতে আসেননি। আমি তার বিরুদ্ধে নই, কিন্তু তিনি তা করলে খুশি হতাম।
সারভাইয়া চ্যালেঞ্জ করে বলেন, মেওয়ানি যদি ডা. বাবাসাহেব আম্বেদকারের সত্যকার অনুসারী হয়ে থাকেন তাহলে তার বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করা উচিত।
চারজনকে বেত মারার ঘটনায় ৪৩ ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। চারদিন আগে এক অভিযুক্ত ব্যক্তি চারজনের মধ্যে দু’ভাইকে হুমকি দেয়ায় উনা শহরসহ মোটা সমাধিয়ালা গ্রাম ও চারপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। উত্তেজনা ও অবাঞ্ছিত ঘটনা রোধে গির-সোমনাথের এসপি হিতেশ জয়সার ও তিন জেলার ৫ ডিএসপিকে মোতায়েন করা হয়।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে গোরক্ষকরা বাশরাম ও তার ভাইদের বেত দিয়ে পেটায় ও অর্ধ উলঙ্গ করে ঘোরায়। এ ঘটনা সারা ভারতে তোলপাড় সৃষ্টি করে এবং দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ধূমায়িত হতে থাকে। গুজরাটে প্রবল দলিত আন্দোলন শুরু হয়।
২০১১ সালে ১৬ জুলাইয়ের ঘটনা
২০১৬ সালের ১১ জুলাই গুজরাটের গির সোমনাথ জেলার উনা শহরের কাছে মোটা সমাধিয়ালা গ্রামে একটি মরা গরুর চামড়া ছাড়ানোর অভিযোগে একটি গোরক্ষক গ্রæপের সদস্যরা দলিত সম্প্রদায়ের ৪ ব্যক্তিকে জনসমক্ষে বেত দিয়ে পেটায়।
নির্যাতিতরা মরা গরুর চামড়া ছাড়ানোর সময় একটি এসইউভিতে ৬ ব্যক্তি আসে ও তাদেরকে গোহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। নির্যাতিতরা তাদের জানায় তারা মরা গরুর চামড়া ছাড়াচ্ছে। কিন্তু লোকগুলো তাদের কথা না শুনে লোহার পাইপ ও লাঠি দিযে তাদের পেটাতে শুরু করে। তাদের পিটিয়ে ও কাপড় খুলে এসইউভির পিছনে বেঁধে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা তাদের আবার পিটায়। ৩ ব্যক্তি বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাদেরও পেটানো হয়। তারপর তারা ৪ দলিতকে এসইউভিতে তুলে ২৪ কি মি দূরের উনা শহরে নিয়ে যায় ও সেখানে এসইউভির সাথে বেঁধে আবারো সবার সামনে পেটায়। এ নির্মম নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও সাাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।