পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল চান্দিনা থেকে : কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার দোতলা এলাকার বাসিন্দা মো. নাছির (২৮)। মাত্র সাত বছর আগেও কনস্টেবল পদে থাকা অবস্থায় নিজ বাড়িতে ছুটিতে আসলেও মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে পায়ে হেঁটে বাড়িতে যাইতেন। আর এখন চলাফেরা করেন বিলাসবহুল গাড়ী দিয়ে। এমন কি বাড়িতে করেছেন পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের একটি বাড়ি। রয়েছে গাড়ি ও ইটের ব্যবসাও। সাথে কো-অপারেটিভর নামে একটি এনজিও রয়েছে তার। কো-অপারেটিভের টাকাসহ সব মিলিয়ে পঞ্চাশ থেকে সত্তর কোটি টাকা সম্পদের মালিক ডিবি পুলিশের এই এএসআই নাছির। জানা গেছে, নাছিরের রাতারাতি ভাগ্য পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে মাদক ব্যবসা। এসব তথ্য জানিয়েছেন নাছিরের গ্রামের বাড়ি চান্দিনার দোতলা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি। গতকাল বৃহস্প্রতিবার নাছিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোল ঘেঁষে পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের বাড়িতে বসবাস করেন ইয়াবা পাচারকারী পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এ.এস.আই) নাছির উদ্দিন এর পরিবার। চান্দিনা উপজেলার কেরনখাল ইউনিয়নের দোতলা গ্রামে মহাসড়ক থেকে মাত্র ১৫ গজ দূরত্বে তার পৈত্রিক নিবাস। সীমানা প্রচারী ঘেরা বাড়ির প্রধান ফটকে রয়েছে এসএস এর দৃষ্টিনন্দন তোরণ। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেছে বাড়ির উঠানে রয়েছে ৪টি গাড়ি। ১০ কক্ষ বিশিষ্ট্য দুই ইউনিটের বিশাল বাস ভবনের এক ইউনিটের কাজ শেষে হলেও অপর ইউনিটে এখনও নির্মাণ কাজ চলছে। বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার পিতা নূরু মিয়ার সাথে। এক সময়ে ট্র্যাক্সি চালক নূরু মিয়া বাড়ির কাজের টাকা কোথা থেকে পেয়েছেন জানতে চাত্তয় হলে তিনি বলেন, নাছির এই টাকার যোগানদাতা বলে জানান। অপরদিকে, স্থানীয়দের তথ্যমতে জানাযায়, কুমিল্লা সদরের বিয়ে করেন এএসআই নাছির উদ্দিন। ইতিমধ্যে তিনি কুমিল্লায় একটি বাড়ি কিনেছেন বলে জানান তারা। পুলিশের মাত্র একজন এএসআই পদে চাকুরী করে এতো সহায় সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কনস্টেবল থেকে এএসআই হওয়ার পর থেকে নাছির উদ্দিনের অবস্থা ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ পরিণত হন। ২০০৬ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগদান করে ২০১৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হয়েছেন নাছির। নাছির এএসআই পদে চট্রগ্রাম, কচুয়া, রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন থানায় চাকুরি করেছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকে রাতারাতি আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে নাছিরের। বর্তমানে তিনটি মাইক্রোবাস ও একটি লেগুনার সঙ্গে ঢাকা-নবাবপুর রুটে চলছে অর্নিবাণ নামের একটি বাসও। এছাড়াও তার শশুর বাড়ি সংলগ্ন কুমিল্লায় এলাকায় একটি বাড়িও কিনেছেন। বেশ কিছু জমিও কিনেছেন মাদক ব্যবসায়ী ওই পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশের একজন এএসআইয়ের চাকরি করে এতো অল্প সময়ে সহায় সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে স্থানীয়দের। এ পরিবারের হঠাৎ উত্থান নিয়ে গ্রামবাসীর মুখে নানা আলোচনা-সমালোচনাও শোনা যায়। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম না প্রকাশ করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নাছির দীর্ঘ সময় চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানায় কর্মরত ছিলেন। সেখানে পুলিশের চাকরী করার সুবাধে কচুয়ায় একটি বাড়িত্ত কিনেন নাছির। কচুয়ার বিভিন্ন সময়ে হওয়া রাজনৈতিক মামলায় অজ্ঞাত নামা থানায় দায়েরকৃত মামলার বহু সহজ সরল লোকদের ধরে থানায় এনে আসামী করে তাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার হাতিয়ে নেত্তয়ার অভিযোগ রয়েছে এএসআই নাছিরের বিরুদ্ধে। এছাড়াত্ত নাছিরের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে পুলিশের চাকরী দেত্তয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মাধাইয়া কে.আলী ফিলিং ষ্টেশনের পূর্ব পাশে একতা গ্রাম উন্নয়ন সমিতি নামে একটি কো-অপারেটিভ নামে একটি এনজিও রয়েছে নাছিরের। এই এনজিওটির মাধ্যমে মানুষকে সুদের মাধ্যমে রিন দেত্তয়া হয়। নাছিরের বাবা নুরু মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তিন ছেলে ও তিন কন্যার অভাবি সংসারে তিনি একসময় নিজের অটোরিকশা ও টেম্পু চালিয়ে সংসার চালাতেন। বড় ছেলে নাছির উদ্দিন ২০০৬ সালে পুলিশে যোগদান করে। মেঝ ছেলে রিয়াজ থাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। আর ছোট ছেলে মামুন এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বড় ছেলে নাছিরের পুলিশে দ্রæত প্রমোশন পাওয়ার বিষয়টি জানলেও ছেলের ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জানেন না বলে দাবি করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট কেরনখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদ বলেন, পুলিশের এএসআই পদে চাকরি করে মাত্র দুই বছরের মধ্যে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়ে যাওয়ার বিষয়টি যেন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার মত ঘটনা। এখন বুঝা যাচ্ছে পুলিশের চাকরির আড়ালে জমজমাট মাদক ব্যবসায় চালিয়ে আসছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা নাছির। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, আটক নাসিরকে বুধবার সকালে চান্দিনা থেকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। কার্যালয়ের একটি কক্ষে নাসিরকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছির উদ্দিন মৃধা। জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতে মাদক ব্যবসায়ী এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পরবর্তীতে স্বীকার করেন-মাদক কারবারে জড়িত তিনি। দফায় দফায জিজ্ঞাসাবাদে চান্দিনা ছাড়াও কুমিল্লা শহরেও এএসআই নাসিরের মাদক সিন্ডিকেটের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। জেলা ডিবি পুলিশের ওসি মো. নাছির উদ্দিন মৃধা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নাছিরের বিরুদ্ধ চান্দিনা থানায় মাদক আইনে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা হয়েছে। ত্তই মামালায় নাছিরকে ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।